Thursday, December 27, 2018

সবটাই

পা বাড়ানোর আগে

উচ্চারিত সমস্ত শব্দময় বিগশপারদের জন্য রেখে যাই বুলাও নাচনেওয়ালী ডিজেওলা কিয়ক্স।
উচ্চকিত সমস্ত প্রশ্নময় বুকপকেটদের জন্য রেখে যাই ঝুটো উত্তরের ঢালাও মাইক্রো জেরক্স।

উল্লসিত সমস্ত ওয়াওআকীর্ণ ঠোঁটেদের জন্য রেখে যাই নিজ নিজ টপ ফ্লোরের ফিকে ধূসর পদার্থ।
উচ্ছ্বসিত সমস্ত গ্ল্যামবিকীর্ণ ম্যানেকুইনদের জন্য রেখে যাই গলে ঘুলে ঢলে যাওয়া জাস্ট যথার্থ।

পা বাড়াতে যেতেই

লবণহ্রদ ঠিকানার পোস্টকার্ড পড়ে আছে ঠিক অবোলা ভেজা রথের স্যাঁতস্যাঁতে "ছিনপেপার"।

পা বাড়ানো থামিয়ে

পূর্বাচলের সদ্যচেনা ফ্ল্যাটবাড়িরগুলোর পেছনে সূর্য গড়ালেই' হেমন্তের গোধূলি আড়বাঁশির ফুঁ ঢালে বুকের খাঁচায়।
বই দাদুর ছাদে ঝিলিমিলি'র দিকে চোখ ফিরে দাঁড়ালেই মেডুসা মতি কুয়াশা আতাল পাতাল ডুকরে তোলা চাদর বিছায়।

কয়েক লাখ নিশ্চিত একলা কদম।
আর বাবার গরম মুঠি।

"উদীয়মানের চাইতে অস্তমিত সূর্যের প্রতি কৃতজ্ঞ থাকাটাই অধিকতর কাঙ্ক্ষিত মণি...সে যে তোকে সবটা দিয়ে গেল"।

Monday, September 24, 2018

সাঁকোটার ভাল নাম জীবন।

কখনো কখনো ঝোড়ো কুয়াশার পাগলাটে ঝাপটায় সাঁকোটা বেয়াড়া রকম দুলে ওঠে।
হাত আধেক দূরত্বের চিরচেনা ঋজু অবয়ব বড় বেশি টলমল দেখতে পাই।
মাথার ভেতরে বীভৎস বমি বমি ভয় ঝনঝন বেজে চলে।
গজ দুয়েক চাউনি সরালেই শ্রান্ত অথচ শান্ত একজোড়া স্থিতধী শক্ত চোখ নজরে আসে।
এক আধ টুকরো সাহস কুচি জমতে থাকে থিরথির বুকে।
দৃঢ় মুঠো তে আঁকড়ে রাখি সে দুয়ের প্রৌঢ় আঙুল গুলো।
এগিয়ে যাই তিন এক্কে এক এর অদ্ভুতুড়ে ধারাপাতি চলাচল নড়বড়ে পায়ে জড়িয়ে।
আগলাতে চাওয়া চতুর্থ এক অস্তিত্ব টের পাই ঘাড়ের গায়ে পিঠে। সে উষ্ণ পরশ বোলায় পাশে আছি রকমে।
আরেকটু এগিয়ে যাই। আরেকটু ঘন পায়ে।

সাঁকোটার ভাল নাম জীবন।

মরণ ও অন্যান্য।

মরণ ও অন্যান্য।
এক
মৃত্যু আমাদের চারপাশে পায়চারি করে। আসে যায়, ফের আসে যায় ফের...
সাধারণের জমাট শোকের উঠোন বাগান রবি বাবুর সেই গন্তব্যাভিমুখী রেলপথের পাশের অনবরত অপসৃয়মান মাঠচত্ত্বরের মত উদাসী জোৎস্নায় ভাসে না। আবলুশের পারা অন্ধকার গিলতে আসে তাদের। তাঁর মত সংহত চিত্ত, স্থৈর্য, অন্তর্দৃষ্টি এবং গভীর সত্যোপলব্ধিও সকলের থাকে না। তবে এই ছাপোষা গেরস্তের বুকভাঙা অবুঝ শোক গলানোর উপায় কী?

নদী।

নদী না মেলে তো খাল বিল যেকোনো জলাশয়। গভীর ও ছলছল, নির্বাক ও সবাক।
আসলে জল। অনেকটা, অনেকটা জল। একইসঙ্গে অনেকখানি বিছিয়ে থাকা ও অনেকখানি রিক্ততা। গহীন ঘন চলিষ্ণু বুকের উপরে দিগন্ত স্পর্শী শূন্যতা প্রসারে জলাশয় আমার আপনার মত আকস্মিকতায় থতিয়ে গুম পাঁচপেঁচিকেও তিরিতিরি ভাবনার ঢেউ দেয়। নিজেদেরই অনবধানতায় স্বজনহৃত আমরা আগল খুলে দেই শোকগ্রস্ত বুক কপাটের। হুহু করে উথলে আসে শোকেদের শ্রাবণী ঝোরা।  মনের দোর পেরিয়ে ওই, ওই জলের ঘরে দোরে উঠোনে শ্রান্ত গা এলায় তারা।
ভারী থেকে আরও ভারী হয়ে চলা মনের ভার গড়াল দেওয়া কাঁসার ঘড়ার চলনে গড়িয়ে যায় নিঃসাড়ে।

এক সময় বুঝতে পারি, যে গেছে, সে গেছেই। পায়েলের আংটা ছুটে গেছে তার বরাবরের মত। হারে পাশায় বাজু আর নাকফুলে জড়িয়ে মড়িয়ে বেঁচে থাকার দলভুক্ত এখনও আমরা কয়জনা এপারে দাঁড়িয়ে আছি অদেখা কিন্তু অনুভূত একাধিক পায়ের মলের ঝিনিঝিনির তীব্র টানে। অলঙ্ঘ্য নয় কিন্তু আপাতত দূরতিক্রম্য সেই অলীক বীথি সরে সরেই রয়ে গেল আপাতত।

আর এদিগরে রোজনামচার সাপ লুডো ছকে ঘরগুলোতে রয়ে গেছে যারা, মন বুঝ মানে, ঘরে ফিরতে হবে তাদেরই আগলাতে।

ধ্যাত্তেরিকা!

গুটগুটি বেলায় একবার জন্মদিনের উপহার হিসেবে প্যাস্টেল আর ওয়াটার কালারের সেট এর সঙ্গে পাওয়া পেন্সিল বক্সের মধ্যে পেন্সিল, শার্পনার, খানদুয়েক ব্রাশ ছাড়াও ছিল ব্রুমওয়ালা মুসাম্বি গন্ধী ইরেজার আর মজাদার টিউবে ভরা ঝিমঝিম গন্ধওয়ালা সোনা রঙের আঠা।

আজকাল কি মেলে সেই ভুটানি গিফট বক্স?
খুবই মেলে তবে ভুটানি নয়, চীনেটাই মেলে। 

কাগজ তা সে সাদাই হোক কী রংদার, টিউবের পেট টায় অল্প অল্প চাপ আর কাগজ যেন বিন্দু বিন্দু রূপকথার আস্তানা নিমেষে। ওহ্, একটা কথা বলে রাখি, ওপর থেকে সিধে কড়কড়ে রকমে দিদিমণিদের মত করে দেখলে সেসব ঘণ্টা বুঝবে, মাটিতে কাগজ রেখে উব্বুত হয়ে শুয়ে, চাইতে হবে নাকটা কাগজের কিনারায় আলতো ছুঁইয়ে।

আজকাল কি কেউ শোয় সেভাবে মাটিতে?
শোয় তো নিশ্চয় তবে মাটিতে নয়, ডিভানে।

পেটমোটা ক্ষুদে ক্ষুদে মালভূমি নজরে আসবে। তার তাদের ভেতরে ঝিকিমিকি দিয়ে চেনা আসবাবের অচেনা টুকরোরা গা ঘেঁসাঘেঁসি শুয়ে বসে তাও নজরে আসবে। সে ভারী শিরশিরে অবাক করা জগত। বানানোর চাবিকাঠি তোমার হাতেই। কিন্তু একবারটি তৈয়ের হলেই নজর তোমার বন্দী তাদের রাজ্যে। চাবিকাঠির মালিকানা বদলে যাবে, উমান পাবে না।

আজকাল কি সেরম চাবিকাঠির চল আছে?
লকের চল আছে তবে চাবি তাতে কমই লাগে।

অনেক ভ্যানতাড়া হল। এবারে ঝেড়ে কাশো বাপু। বলতে কী চাও, শুনি?

আজ দেখলাম বুঝলে, বৃষ্টি শেষে, সেই আঠার মত আলো।
পুব আকাশের একদিক শ্লেট কিন্তু আরেকদিকে নীলের ঢেউ জাগছে, সার্চ লাইটের মত ফিনকি ফিনকি আলোর তার হিলহিলিয়ে পড়ছে।
এদের কাজকর্মের মাঝেই কোন ফাঁকতালে গলিঘুঁজি গলে বেরিয়ে এসেছে সেই রূপকথার আঠালো আলো।

আমগাছের ওই দাহশেষে জল ফোস্কা ওয়ালা পোড়া কাঠের মত ভেজা দক্ষিণমুখী মরা ডালটাকে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে উঠতে চাইছে আরও উপরের পিঁপড়ে খাবলানো রক্তাল্পতায় ভোগা ডিগডিগে ন্যাতা পাতাগুলোর সিঁথিতে। কুরূপা প্রকৃতির গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করছে সুরূপা প্রকৃতি। কী অপার্থিব মায়া!

বহুদিন যাবৎ খুব জ্বরে পড়ে থাকা খোকাখুকুর গায়ে মাথায় মায়ের হাত বুলিয়ে সোভিয়েত দেশের গল্প গুলো খুব খুব আস্তে আস্তে বলতে বলতে বার্লি খাওয়ানোর ছবিটা দেখলাম, জান?

ভালবাসাবাসি আলো। আদর আদর আলো।
দেখলাম।

ধ্যাত্তেরিকা! সাত কাহনে এই খ্যাটন!
ডাক্তার দেখাও বুঝলে, চোখের ডাক্তার আর সঙ্গে মাথারও। তোমার না পরীক্ষা সামনে???

Sunday, July 15, 2018

বেওকুফ অওরত!

Teri surkh surkh aankhien,yeh batah rhi hain Ghalib,
Phir subho kar di tune, usay yaad karte karte.
    -Mirza Ghalib

একটা ঘন বুনোট পাতার বুক আর ঠোঁট, অল্পে অল্পে জমাতে থাকে রিজিকের চাতকজল।
টইটম্বুর হলেই নিজেকে আলতো নুইয়ে ভরাতে যায় কোল ঘেঁষা ঈষৎ মেঘুয়া পাতাটাকে।
হয়তোবা দুঃখপুকুরই দেয় নিজের অজান্তেই, কিন্তু তার সর্বস্বান্ত দেওয়ার ঈহা মিছে নয়।
আকাঙ্ক্ষীর আর্তি তাই আশরীর ধারণ করে দয়িতের গূঢ়-বাঞ্ছা প্রতিকল্প, সিক্ত হয়।
দোঁহার এই ইচ্ছেসুখ আর প্রাপ্তিসুখ নির্নিমেষ গড়ে তৃপ্তিসুখের একঢাল চর।
দুইয়ের হৃদ মাঝারে। গোধূলি-বেলায় ধারাস্নাত মিহি বোধ-ধূলির উঠোনে।
...
একটি লেফাফা পড়ে থাকে কেবল।
হয়তো আর্চিজ, কিম্বা হলমার্ক।
...
"বহুদিন পরে ভ্রমর এসেছে পদ্মবনে।"
...
রাতটা এখন একটা, বা হবে হয়তো দুইদেড়।
ধড়মড়িয়েই উঠে বসল তাঁর মন।
কে যেন কবে এই কথাটা তাঁকেই দিয়েছিল।
দেখাবে ফুলেল সেই স্বর্ণচম্পা বন।

একফালি এলানে জরিন সুতোলে পথ।
পরাগ ঢেউয়ে গন্ধবহ'র রাজ।
কারোরই কিন্তু ছিল না, একটুও মত।
মরুৎ তবু পথের প্রেমিক আজ।
...
খেলা ভাঙন, স্বপ্নে সুর্খ সিঁথির আখরি রুখসত।
স্মরণে এল, কবিতা লিখছে। বেওকুফ অওরত।
...
"সখী অন্য ঘাটে চল না।"

Dard aayega dabbay paon liye surkh chiragh
    -Faiz Ahmed Faiz

Saturday, July 14, 2018

আরজু

চাঁদ
এতক্ষণ বসে ছিল কড়িয়াল বেনারসী আঁচলের ঠিক পাশটিতে।
কালো পাথরের মেঘছাপ সিঁড়িতে।
এই কেবলমাত্র এলানো স্বর্ণাল রক্তিমতা ছুঁয়ে জলে নেমে গেল।
শফরী সহর নিমেষেই সুধাংশু সরিৎ।

চন্দ্রাবতী
নিঃসাড় ডুবছে পায়জোর, কোমর বিছে, বাজুবন্ধ।
কণ্ঠী আর টায়রা টিকলি।
আস্তে আস্তে জল জোৎস্নায় মিশছে রক্ত হাড় মাংস।
মেদ আর পেশীর পুত্তলি।
তিলে তিলে গলে গলে যাচ্ছে রাগ ক্ষোভ অভিমান।
হিংসে আর এজন্মের ব্যর্থ প্রণয়।
ইন্দু গাঙে দুলছে অল্প অল্প গোঙানি বুকে আঁকড়ে।
রাকেশ কুয়াশার শীর্ণ ঝরোখা।
...

বহত আরজু থি গলি কি তেরি...

খোকা পড়ছে!

দলা দলা কষ্ট।
গলার গোড়ায় কুণ্ডলী একাধিক।
কাশির দমকে উঠে আসছে তাদের ভাঙচুর গন্ধ।
থকথকে ঘেন্না।
জিভে জড়িয়ে যাচ্ছে স্মৃতি শ্লেষ্মা।
ঠোঁটের কষ গলে কোরকে মিশছে লোনা অপমান।

বমি হলে বেঁচে যায়। বমিটা হয় না।

বাম দিকে চারটে আর ডান দিকটায় গাঢ়তর একটা।
থ্যাবড়া মোটা আঙুলের দগদগে দাগি কবুতরি গ্রীবা।
চুনো চচ্চড়ি নামিয়ে গিলে চচ্চড়ি বসায়।
পেষণযন্ত্রের তো ভাই পেষণদন্ত থাকাটাই স্বাভাবিক।
অনুপানের তোয়াজ কমা হলে চাবকানোই রেওয়াজ।

মরে যেতে সাধ হয়। মরতে পারে না।

"পাখি সব করে রব রাতি পোহাইল/ কাননে কুসুমকলি সকলই ফুটিল। "
খোকা পড়ছে।

Sunday, June 24, 2018

হারিয়ে ফেলছি

কলম হারাই,
ছাতা হারাই,
আংটি পেনডেন্ট হারাই।

আইসক্রিমের কাঠি,
জলের বোতল,
কম্পাস,
ঘড়ি,
সমস্তই কখনো না কখনো একটা দুটো তিনটে বারও হারিয়ে ফেলি।
এদের হারিয়ে ফেলায় চিমটি চিমটি হারিয়ে দেই বিক্ষুব্ধ অসহায়ত্বে টিকে থাকা ক্ষয়িষ্ণু মূল্যবোধকে।

যান্ত্রিকীকরণ এগোয় সোল্লাসে।

প্রতিস্পর্ধী বৈপরীত্যজোড়া জীবনকে নানান প্যাঁচ পয়জারে হারিয়ে দেওয়ার সাথে সাথেই হারিয়ে ফেলি নরম সহজ যাপন।

একটা মেয়ে, কোমর ডিঙিয়ে তেলেজলে বেণী মণিপুরী রিং আর সাদামাটা সালোয়ার কামিজ রিপুকরা ওড়না, ইংরেজি পড়তে যেত।
জীবনানন্দ অনুবাদ করত টর্চের আলো জ্বেলে।
গভীর রাতে। কবি এলে।

এই মেয়েটাকে প্রতিদিন একটু একটু করে কোশ গলে হারিয়ে ফেলছি।

নিয়তিবাদ বা দুখবিলাস???

ভয় পাচ্ছি।

কনে দেখা আলো

দুপুর গড়ানে এক চিলতে রুগ্ন আলো দাঁড়িয়ে পূর্বমুখী। আলসে এলান রাস্তাটার ঠিক মাঝ বরাবর।

বামধারের ধুমসো দোতলার একটেরে বারান্দাটা নাক গলিয়েছে রাস্তার চৌহদ্দিতে। ওখানেই জাবনা পাত্র আকারের এক বড় টবেতে রাখা জুঁইয়ের মাঝারি গোছের এক ঝোপের সঙ্গে প্রাণপণে চেষ্টা চালায় ওধারের স্বর্ণচম্পক দুটোকটা প্রাণের কথা বলতে।

জুঁই বেচারি রিনরিনে কিশোরী কিন্তু ডানধারের স্বর্ণচম্পক তো ছটফটে কিশোর। সে কি সাহসে কারোর চেয়ে কম যায়! ডালপালা ঝাপটিয়ে ঠেলেঠুলে প্রায় ঢুকেই পড়ে বারান্দার আঙিনায়। পর্বমধ্যে টুকুস টাকুস বারকয়েকের ছোঁয়াছুঁয়িও ঘটে।

হিল্লোল ওঠে খলবলিয়ে।

মাঝে পড়ে রাস্তারই যত বিড়ম্বনা। এ দুয়ের যাবতীয় গোপন গল্পেরা তার বুকেই ঠাঁই নেয় কিনা! ঝরা পাতা আর ফুলের শরীরে ইকিড়মিকিড় লেখাজোখা সেই দলিল দস্তাবেজ রক্ষণাবেক্ষণ কম বড় কাজ বুঝি?

সবটাই পারে এমন দাবী তার নেই কিন্তু চেষ্টার খামতি যে নেই পথের সেটা বোঝে এই চিলতে আলো।
নিজে থেকেই এগিয়ে আসে টুকুন সাহায্য করতে, সঙ্গে সেই সে মাঠ চরা ক্ষুদে ক্ষুদে ঘুর্ণিবাতের থেকে সেধে মেগে নিয়ে আসে এক চুবড়ি চিকন বাতাস। ভারী বাধ্য স্বভাবী।

তো সেই ঝিরিঝিরি বাতাস আলতো পরশে দোঁহার আলাপচারিতাদের গুছিয়ে রাখতে শুরু করে পথের দুই ঢালের খাদে, হিলহিলে পগারের সীমানা বরাবর। ফিনফিনে আলো এদিক সেদিক পাতার ফাঁকে ফোকরে চলাচল করে, দিশা দেখায় কচি বাতাসীকে।

কখনো কখনো গুছানোটা হয়ে ওঠে, স্বস্তিতে ফিরে যায় পথের গায়ে মাথায় টুকদু আদর বুলিয়ে।
কিন্তু অধিকাংশ দিনই যেটা ঘটে তা হল স্রেফ এতোলবেতোল হয়ে যাওয়া, ছিটকে ছিটিয়ে যাওয়া সমস্ত বলাকওয়াদের।

কে জানে কোথায় ঘাপটি মেরে বসে থাকে বেদম ঝঞ্ঝার টুকরোরা, এরা কাজ শুরু করতেই ঝাপট মারে এলোপাথাড়ি। পলকে বেসামাল অতীত বর্তমান। ছিঁড়েখুড়ে একসা খোয়াবের খতিয়ান। কুটিল পাঁশুটে মেঘের খণ্ড আগলে দাঁড়ায় রুগ্ন আলোর চলা। কমজোরি এরা ভয়ার্ত যন্ত্রণায় ঠকঠকিয়ে দেখে খলখল তাণ্ডব। কাঁদতেও আতঙ্ক তাড়া করে। থরথরিয়ে নিজেরাই খিঁমচে ধরে নিজেদের যন্ত্রণানীল হৃদয়।

কোথা থেকে যেন খবর পায় সন্তাপ মোছা বৃষ্টি। ছুটে চলে আসে সব ইজারাদার গিঁটেদের বাঁধন ছুটিয়ে। জড়িয়ে ধরে বন্ধুতার আবেগে। এদের কান্নারা মিশে যায় ওর মরমী আর্দ্র বুকে।

হুতাশ খানিক প্রশমিত হলে ধীরে ধীরে ধুমসোর পাঁচিলটায় ঠেস দিয়ে বসে মরামরা আলো ও নিঝ্ঝুম বাতাস। শ্রান্ত বুকভাঙা রাস্তার ঠোঁটে গলায় টুপটাপ গলে পড়ে স্বর্ণচম্পকের ক্লান্ত ঝরাজল। জুঁই নিথর ঝুঁকে বসে থাকে ন্যাতানো পাপড়িদের ছেঁড়া টুকরোগুলো জড়িয়ে।

ওদের ক্লান্ত ঝিমঝিম গলায় বলে ওঠা পংক্তিরা স্পর্শ করে আমার অথচ আমারই না চেনা এক সত্ত্বার লুকোনো মায়াময় তন্ত্রী। শুনতে পাই--

...

আসলে কী জানিস, ডালের গায়ে পাতার আড়ালে কুঁড়ি হয়ে থেকে যাওয়াই ঠিক বোধহয়। কিম্বা তাও নয়, শিকড়, শিকড়েই একরকম ফুল হয়ে থেকে যাওয়া যেত যদি বা শিকড়ই হত ফুল তা খুবসম্ভব অনেকখানি নিশ্চিন্ততার।

ধর কেন, জুঁই আর স্বর্ণচম্পক যদি একই মাটিতে প্রোথিত শিকড়ে জন্মাত, তলায় তলায় আঁকড়ে বাঁচতে পারত সবার অলক্ষ্যে বেড়ে ওঠা পরস্পরের আকুতিকে, বেশ হত।

উপরতলার গুচ্ছের অসম প্রেমের পাহারাদারেরা থোড়াই হদিশ পেত এদের নিটোল অমলিন প্রণয় যাপনের।

ফুল পাতা হতে গিয়ে, সুন্দরতার দর্শনমাধুর্য সার্বিক করতে গিয়েই যত বিপত্তি।

হিংসাত্মক এক হিংসুটেপনার থাবা গেড়ে বসে আছে এরা অহর্নিশ। তাদের মোটাবুদ্ধি খরখরে মগজে এটা তো ঢোকেনা যে, অ আ ক খ মানেই যেমন কাব্য নয়, বিশেষ শারীরিক প্রত্যঙ্গও মাত্রেই তেমন স্থূল যৌনতা নয়।

দুটি পরস্পরের মর্মস্পর্শী অস্তিত্ব পাশাপাশি কিম্বা মুখোমুখি একে অপরকে আঁকড়ে জড়িয়ে থাকার মুহূর্তের পাঁচশো পচানব্বইটা অর্থ হওয়া সম্ভব। সেটা কেবলমাত্র একমাত্রিক জান্তব সম্ভোগ নয়।
ক্ষমতাধর অর্বাচীনের দল নির্লজ্জের দাম্ভিকতায় শ্বাসরোধ করে নিঃশেষ করে সুকোমল যত ঈশ্বরী প্রবৃত্তির।

রবিবাবুর রক্তকরবীর সেই সর্দার হয়েছে যেন এক একখান সব ভাবনাচিন্তায়!

ঠিক হ্যায়। আজ হেরেছি। কালও হয়ত হারব। হয়তোবা পরশুও। কিন্তু লড়াই তো নেহী ছোড়েঙ্গে। আলবিদা কক্ষনো বলব না।

পরশুর পরের দিনটা আমাদের হবে। আমাদের।
হবেই।

...

বেলাশেষ এগোয় সন্ধ্যাকালে। আলো ধীর পায়ে চলে যায় দিকচক্রবাল হতে নিজেকে মোছার কর্তব্যে। চিকন বাতাস মৃদুল চলনে সরে যায় দূরে, অনেক দূরে।

জুঁই আস্তে আস্তে মুখ তোলে, গুটিসুটি কুঁড়িরা ফুটিফুটি করছে সর্বাঙ্গে। অসহায় অথচ অপার্থিব কলজেছেঁড়া হাসি জাগে তার চোখে ঠোঁটে নাকের পাটায়। স্বর্ণচম্পকের নির্নিমিখ চেয়ে থাকা শ্রান্ত তৃপ্তি মাখে।

জয়দর্পী সেপাই সান্ত্রীদের আত্মতৃপ্তিতে  সাময়িক ঢিলেমি আসে নজরদারিতে আর এদের কাছে সুযোগ আসে আরেকবার, দূরবাসী সত্ত্বেও আকণ্ঠ ভালবাসবার।

নিজেকে মুছতে মুছতেই ওদের উদ্দেশে এক কোশ অকৃত্রিম ভাললাগা বাতাসীর পাখনায় ছুঁড়ে দেয় সহমর্মী আলো।

কনে দেখা আলো বলি যাকে।

Monday, June 4, 2018

খুঁড়বেন?

প্রত্যাখ্যাত
নিজেকে কুড়িয়ে নিয়ে উঠে দাঁড়ানো একটু  ক্লিষ্ট ছাইছাই রঙা ক্লান্তিকর।
অনাহুত
নিজেকে জুটিয়ে এনে ধরে বসানো একটু ঘেন্না সবজেটে রঙা বিরক্তিকর।

অথচ এই একঘেয়ে তিতকুটে কাজটা নিরন্তর করে চলে ঘেঁয়ো কুকুরটা।
উপায়ান্তর নেই বলে নাকি উপায়ান্তর খোঁজেইনি সে কোনোদিন!
...
আচ্ছা, আপনি খুঁজেছেন কখনো?
আমি খুঁজেছি?
...
অন্তত কেঁউকেঁউ প্রতিবাদটুকুও যদি খুঁজে পাওয়া যেত!
...
খুঁড়বেন একবার, আরেকবার?
আপনাকে। আমাকেও।

Friday, May 25, 2018

ধুলোচাষ

তোমার প্রেরিত
মেঘ ছুঁয়েছে জন্মনদী,
আমার সম্পদমূল্য
চৈতন্যে রাখা জন্মদাগ।

বিলাসিনী বারিষ
বিলোল দিঠি জনপদবধূ,
কার্ষাপণ অপ্রতুল
আকণ্ঠ তিয়াসি ধুলোচাষ।

Monday, May 21, 2018

জার্নি

ঘামের জীবনেও জানেন, একের অধিক জার্নি থাকে।
রুট বদলালে এইসব জার্নিদের খানিক রকমফের ঘটে।

এই যেমন ধরুন না কেন,

কুলি মজুরের গাল গলা ঘাড় পিঠ নিংড়ে যা বেরোয় তা প্যাচপ্যাচে ঘাম।
এহ্, নাক চাপ!
উদ্ভিন্ন যৌবনার গাল গলা ঘাড় পিঠ ভিজিয়ে যা গড়ায় তা কমনীয় স্বেদ।
উফ্! ঠোঁট চাপ!

অসহায় কামনা গলে গলে পড়ছে। ঘাম ছুঁয়ে। অপ্রতিহত অলঙ্ঘ্য জান্তবতা।

হাসপাতালের রুগি বওয়া ট্রলিতে বসে ঘর্মক্লান্ত শীর্ণ সৌম্য ষাটের কোনও এক ঘর।
আহা! বড় ধকল!
বড় নির্ভেজাল আদরে চুলটা আঁচড়ে দিচ্ছে ঘর্মাক্ত ঋজু চনমনা বছর বিশেক।
বাহ! বড় নিটোল!

সম্বলিত আদর গলে গলে পড়ছে। ঘাম চুঁয়ে। স্বর্গছেড়া আকাঙ্ক্ষিত মনুষ্যত্ব।

বোঝা গেল এবারে নিশ্চয়?

ঘামের জীবনেও তাহলে, একাধিক হেঁটে যাওয়া থাকে।
পথ বদলালেও এ হেঁটে যাওয়ায়, কিছু বনফুল তো ফোটে। 

Saturday, May 19, 2018

কেন?

মাতালের ঘুমের মত অগোছালো অসংবেদী রাত।
ছুঁড়ে ফেলা প্লাস্টিকের এলোমেলো পায়রা উড়ান।
পিচখসা গলিপথে ইতিউতি হাঁটে নির্লিপ্ত বেড়াল।

রাস্তার আলোকসম্পাত রুগ্ন খুব।
বাড়িগুলোর প্রচ্ছায়া কদর্য  মায়াবী।

মাথার ভেতরে একটা বল গড়াচ্ছে।
গলার ভেতরে আরেকটা বল গড়াল।
বুকের ভেতরে একের পর এক বলের গড়ান।

জানলার পর্দা বড্ড ফিনফিনে।
যন্ত্রণার ঘর গোটাটাই ঝিল্লিময়।

তবু কেন দেখতে পায় না? 

Thursday, May 17, 2018

আপাততঃ

বর্ষণশ্রান্ত গোধূলি।
তারের টানটান শরীর ছুঁয়ে আছে মেঘগলা জল।
ছোট গল্পেরা জন্ম পেল ক্ষণিক মুকুরে।

ধারাস্নাত ছেঁচতলি।
তারের টানটান শরীর চুঁয়ে পড়ে মেঘগলা জল।
ছোট গল্পেরা মৃত্যু নিল আঙিনা জঠরে।

পিয়াস ও তিয়াসের অসমাপ্ত গল্প...
আপাততঃ এইটুকুই।

মা হওয়া...

কখনো কখনো অসংবদ্ধ গর্ভিণী গাভীর মত একলাটি হয়ে শোয় অন্যপূর্বা লাঞ্ছিতা সময়।
কাল-গর্ভে ধীর লয়ে এপাশ ওপাশ ফেরে অনাম্নী ভবিষ্যৎ।
সময় শ্রান্ত চোখে রোমন্থন করে নিকট কিম্বা দূরবর্তী ক্লিষ্টকায় অতীত।

পড়ে আসা নিদাঘী দুপুর নিদাগী করার চেষ্টা করে ফেলে আসা হৃদকমলের পাপড়ি।
ঝটকা বারিষ ছুঁড়ে ফেলে মেকী নির্লিপ্তির খোলস।
ঝঞ্ঝাক্ষুব্ধ শিল অসহিষ্ণু গড়ান দেয় মনে রাখার এ মাথা থেকে ও মাথা।

নিয়তি-নিদান সাথে অসম লড়াইয়ে অস্তিত্বের ভাগে সুষম বণ্টন হয় একমাত্র ঘেন্না আর ভয়।

তবুও

সমরে স্থৈর্যবতী
প্রত্যাখাত নারীত্ব।
সহনে দার্ঢ্যবতী
অনাগত মাতৃত্ব।

মা হওয়া কখনোই মুখের কথা নয়।

রবি ঠাকুর শোন,

রবি ঠাকুর শোন,

গেলাম সেই যে গো, আমি তোমার গড়ে যেদিন।
সাথী বলতে ছিল কেবল মেঘলা আকাশ পিদিম।

ঢুকতে যেতেই না, যতেক গুঁফো ফটক সান্ত্রিদল
কাঁইমাই রবে বাধালো সে, কী বিরাট এক কোন্দল।

হা রে রে রে রে রে, দস্তুরমত তেড়েই এল তারা।
বললে ভাগ, নিকলো অভি, এখন দেখার সময় সারা।

আচ্ছা ঠাকুর, ওটি তোমার বাড়ি তো, না কি গারদ।
কারো কারোর যে মান না মান, চড়েই আছে পারদ।

অবিশ্যি দোষও বুঝি তাদের কি না তেমনতরও নয়।
কানুন যখন, তা সে নিয়মমাফিক খাটাবে তো নিশ্চয়।

কী আর করা, গুটিগুটি গাঙের দিকেই গেলাম।
নিজের মনরে কুটুর কুটুর বুকের দুখটা ক'লাম।

হাসতো দেখি বোকার হদ্দ খেপি গোমড়ামুখি।"
আকাশ পিদিম ফিসফিসিয়ে বললে চুপিচুপি।

"তিনি যখন তোমার ঠাঁয়ে ভিতর বুকের কোণে।
তুমি হাটুরে আজ ঘুরছ কিনা তাঁরই অন্বেষণে।"

"ওরে মুখ্যু, দালান ভেতর কেবল ঘরই আছে কটা
তোমার ভেতর তো স্বয়ং রবি, ঠাকুর আছেন গোটা।"

বুঝে নিলাম আমার রবি আমার সাথেই বাঁচেন।
জোড়াসাঁকো বোলপুরেতে ওঁদের রবি থাকেন।
...
জানো তো ঠাকুর, কাল গিয়েছে, আমি দিদিমণি,
হাসলে কেন, এই কথাটায়, হাসিটা কিসের শুনি?

ভাবছ হে পরমব্রহ্ম, এ দিগরে কতো পাগলই জোটে।
দিদিমণির মুক্তবেণী কক্ষনো কি পিঠের পরে লোটে!

সে যাক গে, আজ কে কেবল আসল কথা শোনো।
তোমার উপর লক্ষ থিসিস পার যদি, নাও গোনো।

তোমাকে রোজ পড়ায় কত তাবড় তাবড় স্যর।
ভুঁয়েতে লুটাই, সাষ্টাঙ্গে করি তাদের পায়ে গড়।

ক্লাসে যখন বইয়ের মাঝে তোমার পাতাটা খুলি।
পড়ুয়াদের আমি তোমায়, কেবল ছুঁয়ে দেখতে বলি।

আজকে আমার ইশকুলেতে রবি ও সৃজন স্মরণ।
বিজ্ঞ অজ্ঞ গুণী নির্গুণ, সবার সাদর নিমন্ত্রণ।

তুমিও এসো, কেমন?

অভিসারের রং

অভিসারের রং জানো কি?
হ্যাঁ।
বলতো কী ?
নীল।

কোনও কোনও আগামীর পথ পাহাড়ী নদীর মত।
তার আঁকেবাঁকে অজস্র শামুক ঝিনুক বাড়ি থাকে, এ নিশ্চয় জানো?
হ্যাঁ।
দ্বার খোলা নেই কেবল ঘুলঘুলি হাট করে রাখা।
পথিকের প্রয়াস সর্পিল চলনে বিপ্রতীপ সহজ গতি আঁকড়ে, এও নিশ্চয় জানো?
হ্যাঁ।
পথের শেষের খবরাখবর কিছু কি রাখো?
না।
আমি বলি শোনো -
শেষে একটা পানিশঙ্খ ঘর থাকে।
কোনও একদিন শ্রান্ত সাঁঝের বেলা সেখানে চলে যেয়ো খুঁড়িয়েই সই, কেমন?
পিয়াস মিটিয়ে এসো।
...
স্রোতস্বিনী ঝামর ঝামর চলে, খলখলিয়ে বলে।
তার গমকে খাদ চড়া উপত্যকায় সে বিষম কানাকানি, এ নিশ্চয় জানো?
হ্যাঁ।
যোবনবতী পথচলতি ঝোরার ডাকে মিতালি পাতায়।
একবগ্গার মত ছুট দেয় সঙ্গ-মনের সাথে একাঙ্গী তীর্থে, এও নিশ্চয় জানো?
হ্যাঁ।
মোহনাকে সঙ্গম বলে না, এর ব্যাখ্যা কি রাখো?
না।
আমি বলি শোন -
সমদ্দুরের এতোল বেতোল চিরকালের। 
পৃথুলা গজগামিনীর নিয়তিনির্দিষ্ট নিশর্ত আত্মনিবেদনে কি ঝাপটানি আশ্লেষ থাকে?
নদীর বয়স হয়ে যায় যে।

যন্ত্রণার রং জানো কি?
না।
বলি, কী?
...
আমি বলি,
নীল।

তুমি কাঁদছ?

Tuesday, May 8, 2018

ওরা ওখানেই আছে...

আমাদের ছাদ দেওয়া ঘর নয়।

ঘরের চালের ঢাল লম্বা বারান্দার মাথার উপর দিয়ে ঝুঁকে পড়েছে উঠোনের এলাকায়, জাফরি কাজের বারান্দা লাগছে যেন আধ কপাল ঘোমটা দেওয়া কর্মরতা পাড়াগেঁয়ে গেরস্ত বউ।

ঘোমটার কিন্তু অনেক রকমফের হয়।

শউর ঘর হতে বাপের ঘরে যাওয়ার কালের ঘোমটা আর উল্টো পিঠে আসার ঘোমটা কিন্তু মোটেও এক নয়।
আবার ধান সেদ্ধ করার সময়কার ঘোমটার সাথে কাঁথা সেলাইয়ের সময়কার ঘোমটাতে ফারাক বেশ খানিক।

তাই বললাম কর্মরতা। সে ঘোমটা কিছু অন্যরকম কিনা।

ধ্যুস কী বলতে বসে কী বলতে লেগেছি!
যাক গে যাক, তা সেই ঘোমটায় গড়া হাসিমাখা মুখখানিতে ঠোঁটের ফাঁকে দাঁতের সারি উঁকি দিচ্ছে যেন এমন কটা নিকোনো ঝকঝকে সিঁড়ি।

সিঁড়ির আবার বিশেষত্ব আছে।

দু পয়সারই হোক কী দশ পয়সার, জমিদার বাড়ি হলেই পুষ্করিণী থাকবেই আর বলাবাহুল্য ঘাটও থাকবে। এইবার সেই ঘাটের কাঠামো মনের চোখে দেখে নিন।

সার সার সিঁড়ির দুই পাশে তাদের আগাগোড়া আগলানো ধাপে ধাপে বেঁটে পাঁচিল মতো আকৃতিদের ঠাহর করতে পারছেন? আমাদের ঘরে দুটোকটা সিঁড়ি থাকলেও, ওইরকম খুদে পাঁচিল আছে, তবে কিনা তা একপাশে।

জায়গাটা আমার ভারী প্রিয়।

পড়াশোনা করা এবং করানো যথাক্রমে আমার ও বাবার বিশেষ প্রিয় কোনও বিষয় নয়, যেটুকু করতে হবে মায়ের হস্তধৃত হিলহিলে পাঁচনের ডরে সেটুকু খুবসকালের পাঁচন গেলার মতো সেরে নিয়েই সিঁড়ি তে আসীন জনক দুহিতা।

গল্প, গল্প আর গল্প।

বাবা পইঠায় আর আমি পাঁচিলে পা ছড়িয়ে। কোলে মুড়ির বাটি।
যেদিন যেমন গল্প, সামনের আবছায়া মাখা উঠোন সেদিন তেমন সাথ দেবে।
অভিযান কালাহারি বা সাহারাতে , সে হয়ে গেল বালুময় মরুভূমি।
যুদ্ধ ওয়াটার্লু বা কলিঙ্গে, উঠোন ঘেরা গাছেরা সব সৈন্য দল।
এরকমই একদিন কল্পনায় সামনের আবছায়া মাখা চন্দন রঙা মাটি তখন মা গঙ্গা কারণ বাবা গল্প বলছে আকাশ গঙ্গার।

গুণ করা বলে একটা কথা আছে। বশীকরণ। আকাশ গঙ্গা আমায় বশীকরণ করেছে।

খেলতে গিয়ে চটজলদি "হুশ" হয়ে মাঠের মাঝে খাড়া আমি দাঁড়িয়ে থাকি মাথাটা প্রায় পিঠে নুইয়ে, খেলা সম্পর্কে বাস্তবিকই বে-হুঁশ। খেলুড়েরা রাগ করে ক্ষোভ প্রকাশ করে তারপর একলা ছেড়ে দেয় আমায়।

আমি সেই আলোময় ছায়াপথ খুঁজে ফিরি। চওড়া রাস্তা। ঘুমের মতো নির্ভার, ভরসার মতো মোলায়েম। আশ্বাসের মতো নিটোল। আমার খুব দরকার ওই পথে পৌঁছানোর পথটার হদিশ।

কেন?

আমার একটা নিশ্চিন্তিপুর আছে। অর্ধেক অর্ধেক রাখা। আমার বাবার বুক। মায়ের কোল। মুখ ডুবোলে স্কন্ধকাটা থেকে ভোঁদড় কারোর ভয় চোখে লেগে থাকে না।

কিন্তু, বাবার নেই।
আমি শুনেছি মাঝঘুমে তন্দ্রা হালকা হয়ে এলে বাবা মা কে বলছে কাকজোছনায়  বিজয় সরকারের, আব্বাসউদ্দীনের গান গেয়ে ঠাম্মার চিঁড়ে কোটার গল্প। ঘোর বর্ষায় চিত্রার পাড়ের বুকজল ঠেলে ঠাকুদ্দার ছোট ছেলেকে শুকনো ইশকুলে পৌঁছে দেওয়ার গল্প। মধুর আমার মায়ের হাসি গান খানা কোনও দিনই বাবা পুরোটা গায় না। থেমে যায়। আধখানা গান টলটল করে উদাসী চাওয়ায়।

মায়েরও নেই।
কালবোশেখির ঝঞ্ঝার শেষ দুপুরে, উলোটিপালোটি খায় গাছগাছালি, উপড়ে পড়ে শব্দ পাই। আমি শুয়ে থাকি কাঁথা জড়িয়ে মায়ের ওমে, মা বলে চলে কীভাবে দাদুর অকাল মৃত্যুদিনে এইভাবেই উপড়ে গেছিল কিছু গাছ, কিছু সম্পর্ক, কিছু সুস্থ সুন্দর ভবিষ্যৎ। ঝড় হয়েছিল, কিন্তু তা অদেখা। কেবল দাপটটা দেখেছে বহু বছর ধরে। অকারণেই বেশি করে আঁকড়ে ধরে আমায়। ঘুম পাড়ায়।

কতো মানুষের কতো খালি খালি জায়গা থাকে বুকের ভিতরে। হু হু করে হাওয়া বয়। মড়ার খুলির ভিতরে হাওয়া গললে আওয়াজ ওঠে শিঁ শিঁ। ওই খালি খালি জায়গাগুলোতেও অমন শব্দেরা ওড়ে। মানুষ ভয় পায়। তাই কাঁদে।

সতীন ঝেঁটিয়ে দেওয়া সন্ধ্যা পিসি কাঁদে। পেটে পুঁজ ভরা দীনু কাকু কাঁদে। তালাক পাওয়া পেট বাঁধানো আলেয়া কাঁদে। ধুতিতে বাহ্য করেও মালুম না পাওয়া ক্ষেপা গদাই কাঁদে।

আমি ঠাহর পাই।

এদের সবার জন্য ওই পথটা খুঁজে পেতেই হবে। যার যা হারিয়েছে, যার যা নেই, সব না কি ওই পথের বাঁকে বাঁকে জমা করা আছে। কালো কালো চোখ চলেনা ঘর সব। তাতেই বন্দি। ওই কাল কুঠুরিতে জব্দ হওয়ার আগে পথের নিশানা দিতে এখানে ওখানে জ্বালিয়ে গেছে আলোর মশাল। ওরা বসে আছে পিত্যেসে। কেউ আসবে। ওদের চিনবে। ফিরিয়ে নেবে।

কেউ যায় না।

কিন্তু সেখানে যে যেতেই হবে।
...
অ্যাস্ট্রোনমির কোর্স করাকালীন টেলিস্কোপে চোখ রেখে ফোকাস করতে করতে ছেলেবেলার আকুতি খুব মনে ভাসতো।
বোকার মতো ইচ্ছে করতো একবারটি দেখার।
যেখানে,
কেউ যায়নি।
কেউ যায়না কক্ষনো।

ওরা ওখানেই আছে।
আজও।

উপহার

বোধন হতে বিসর্জন এই হল অলঙ্ঘ্য শাশ্বতী।
মৃতবৎ পার করা মাঝের সময়টুকু কী এমন মহতী তাৎপর্য ঘাড়ে করে পথ চলে?
আদতে সপাট জবাব হল,
জীবন নির্বিকল্প এই হল অসূয়াবিদ্ধ অসহায়তা।
নানাবিধ অছিলায় তাকে নাব্য বানানোর বিবিধ ফিকিরকেই ভাববাদী ঠুলি বলে।

জন্মানোটা এক মস্ত বড় উপহাস।

নির্বিষাদী সোহমের আস্বাদ কোরক গোচর হবে
এমন ভাগ্যিমন্যি আশিস অধিকাংশেই পায় না।
কিন্তু যেমনই হোক না কেন,
নিজের বেঁচে থাকার সঙ্গে করে অন্তত এক বা
দুজনকে বাঁচিয়ে রাখার দায়টা কি বর্তায় না?

জন্মানোটা এক ছোট্ট মত উপহার।

জল আছে?

সব বাঁশি তে টান থাকে না।
কোনও কোনোটায় ভান থাকে।
সব চাওয়াতে প্রেম থাকে না।
কোনও কোনোটায় গেম থাকে।

তুই বলিস নিশিপদ্ম, ডেকেই দ্যাখ না, ডাক্ মনে।
তাই
নীলোৎপল ট্রাই করে, কিন্তু রুহ্ তার, খাক্ বনে।

সব চলা উদ্দেশে নয়।
কিছু চলা উদ্দেশ্যে হয়।
সব কথা প্রমিজ নয়।
কিছু কথা ভাঙারই হয়।

অ্যাকর্ডিং টু ইয়্যু মেঘরঞ্জনী, রুখা জিগর তৃপ্তি পায়।
কিন্তু
আমার স্বপ্নে স্বনন জাগায়, ক্লান্ত চোখের ক্লিষ্ট কায়।

অষ্টপ্রহর অবিশ্বাস।
মেঘেরা না খুব কষ্টে আছে...
সম্পর্কের নাভিশ্বাস।
বারিষের খুব তেষ্টা পেয়েছে...

কারো কাছে "জল" আছে?

Monday, April 30, 2018

কেবল মানুষজন পায়না

কালবোশেখী বাতাসে শীর্ণ একমাত্রিক শরীরের তীব্র এতোল বেতোল ঘূর্ণন।
হলোই বা অকাজীয়া অথবা অকর্মণ্যেই স্রেফ ভরাট,
ঘষটে ছেঁচড়ে যাওয়া আধছেঁড়া খামের কাতশোয়া বারিষ যাপন।

আলোকালোতে দাবাছকী বারান্দায় ছাওয়া একের পর এক ঘরেরা বিরাট।
হলোই বা ভুল অথবা নেই ঠিকানার গিল্টি আভরণ,
তাদের সর্বাংশ জুড়ে খেয়ালগেঁড়ে রাশীকৃত বক্তব্যেরা মিঠিয়া স্বরাট।

ঋণসঞ্চয়ী হোক বা না হোক,
স্পর্শপ্রত্যাশী থাক বা না থাক,

দিনমানে ঘড়িঘর রাতবিরেতে বাতিঘর হয় আশ্বাসী পাহারায়।
মৃত অথবা প্রত্যাখ্যাত চিঠিপত্রও একটা অন্তত আশ্রয় পায়।

কেবল মানুষজন পায় না।

কিস্যু হবে না

চেনা ছিল আর জানা হলোর মধ্যবর্তী যাপন বেশ রোমাঞ্চকর, নয়?

তাঁরা জেগে আছেন তাই আমরা শান্তি স্বস্তিতে কোলবালিশ নিয়ে বা ভেবে নিয়ে ঘরগেরস্তে ঘুমোতে পারি, এটাই চেনা ছিল।
তারা স্রেফ ঝাঁঝরা করেন দশের গুণিতকে বেশ কয়েকটি নির্দোষ ভূমিপুত্রের প্রাণ বিশ্রীভাবে মহোল্লাসে, এইটা জানা হলো।

মৃত্যুর কল্পনা প্রত্যেকের যা থাকে তা একরকম শ্বেত শুভ্র পবিত্র শোকাবহ রজনীগন্ধাময় ব্যাপার স্যাপার, এটাই চেনা ছিল।
মৃত্যুর বাস্তবায়ন কখনো জরাসান্ধিক হতে পারে এমনকি তা অপরাধের অস্তিত্ব তিলার্ধমাত্র না থাকলেও, এইটা জানা হলো।

ধ্যুর।
লিখে ফিকে কিস্যু হবে না।
চেনা এবং জানা...হলো।

Monday, April 23, 2018

প্রেম কাকে বলা চলে?

অনেকসময় এক দু ফোঁটা আসমানি জল ছুঁয়ে যায় ধরিত্রীর খাবলাটে ফুটিফাটা বুক। ঠুমকায় ডাঁটিয়াল ছিলিক ছিলিক চালাকিতে পল কয়েকেই তার আসা এবং যাওয়ার দায়বদ্ধতা সারা হয়।
তাকে কি কারুণ্য বলা চলে?

আশরীর তেষ্টাতে অবসন্ন ধরিত্রী হাউহাউ করে গিলতে গিয়ে খানিকটা শুকনো হাওয়া গলায় ঢোকায়। একই সাথে বোকামি মেশা বিষম খায় আর ভিখিরি চাউনি মেলে ঠোঁট চাটে।
তাকে কি আদেখলা বলা চলে?

একটি জুঁইয়ের আধাবয়সি গাছ নিজেকে নিঙড়ে ঠিক চার থোকা ফুল ফুটিয়েছে এইমাত্র। ওর নসিবের জল টুকু শুষে নিতে গিয়ে থমকে যায় ও পাত-কোশের জল গড়িয়ে দেয় ধরিত্রীর কষ বেয়ে।  তাকে কি প্রেম বলা চলে?

আমরা জানি, মাটি ভালোবাসে কেবল আকাশকে।

জুঁইয়ের ঝোপ কেবল ...

অসংখ্যক গুণগ্রাহী প্রেমার্থীর একজন মাত্র।

ঘোর শ্রাবণীতে ঝাপটাবে অম্বর বসুধার দামাল প্রেম।
ভরা বাদরে তারই মাঝে কখন ঘাড় মোড় ভেঙে পড়ে থাকবে জুঁইয়ের শরীর, ধরা জানতেও পারবে না।

জানতে চাইবেও তো না।

ধ্যুস
প্রেমাস্পদ তো নয়!

আচ্ছা, কাকে প্রেম বলা চলে?

#নিলাজীরজীয়নকথা৪

#নিলাজীরজীয়নকথা৪
...আজকাল আর লাজী বললে চিনতে চায়না আশপাশটা। লাজবন্তী আশি শতাংশেই "থুঃ! নিলাজবতী, ওই নষ্ট মেয়েটা!"

"ভাতারখাগী নৃশংস এক কূট প্রেত সর্বনাশী।
ওর স্তন্যে লালিত হলে সন্তান হয় জগৎনাশী।"

সই তার সেই চরবৈষ্ণবী, ঠাণদি আর গোমস্তা দাদা, আধেক লড়াই এরা লড়ছে ওরাই, তার ভাগেতে বাকি আধা।

"হাজতবাস তো এক কাজীর বিচার, বিচারালয় তো আরোও আছে। আমার লাজী গিয়ে দাঁড়াবেই আরোও বড়ো কাজীর কাছে।"

যুদ্ধ যাপন রুদ্ধ যাপন, সে যে প্রতি মুহুর্তেই তিরস্কৃত। খোকার জীবন থেকেও লাজী, মায়ী আজকে বহিস্কৃত।

দিন এগোয় মাস বছরে, লড়াই পিঠে মেয়ে এগোয়। এইভাবেই এক ভোরেতে শ্রেষ্ঠ কাজীর বিচার ছিনোয়।

"নিষ্কলুষ নিষ্পাপ এই লাজবন্তী, কোনও মতেই খুনী নয়। ওর প্রাণের দোসর নিকেশকারী, তারা সেই তাঁরই বন্ধুস্বজন হয়।"

সেদিন ঊষা পূর্বাচলে উদ্ভাসিত দিক চক্রবাল। লাজী নাহ্, লাজবন্তী দাঁড়ালো এসে খুনখারাপি জড়িয়ে লাল।

নিলাজবতী এই নামেতেই ডাকুক আমায় সকলেতে।     
আর আমি বাঁচবো না এই লাজ শেকলের বাঁধনেতে।

ঘর গিয়েছে, বর গিয়েছে, সন্তানওতো গিয়েছে আর। গোটা জগত আর্তজনের সুহৃদ বন্ধু আজকে তার।

সেই এক বাঁশরী সঙ্গী নিয়ে নতুন পথে হাঁটছে যে। যেথায় যতো বিচার আর্ত তাদের জন্য লড়ছে সে।

বাঁশিদেওয়া গাঁয়ের মেয়ে লাজবন্তী নিলাজবতী, সুর শোনায় রণক্লান্তে, "থামলে কেন? চলো জিতি!"

#নিলাজীরজীয়নকথা৩

#নিলাজীরজীয়নকথা৩
...দিন কাটছে একেকটা যেন নোড়া দিয়ে শিল পেষাণ, লাজী হটাৎ পত্র পেল ফিরছে স্বামী এই মাসাবসান।

শউর ঠাউর মেয়ের বাড়ি, শাউড়ি তো সুখেই বুক মাড়ায়,
গলা টিপে হুকুম দিলো, যেন একটি বেফাঁস কথা না কয়!

ঘর গেরস্তের যেমনটি হয়, মেয়ে একদিন পোয়াতি হলো। লাজীর কোল আলো করে ফুটফুটে এক খোকা এলো।

দোহাঁ দুহুঁ কূজন কুহু, কেটে গেল বেশ কয়েকটি দিন। লাজীর বরাতে ভীষণ তুফান, ষড়যন্ত্রী বিবেক হীন।

একদিন সেই কুটিল থাবা খাবলে নিল স্বস্তি শ্বাস, লাজীর বর খুন হলো আর লাজীর হলো হাজতবাস।

ভাবছেন তো মেয়ের কি দোষ, কেন তার এই শাস্তিপাশ?
শাউড়ি যে তার নালিশ ঠোকে, বউয়ের হাতেই প্রাণটা নাশ! 

বাঁশিদেওয়া গাঁয়ের বেটি, আছাড়িপিছাড়ি প্রতিটি পল। স্বামীর হাতের সেই বাঁশরী, একটিমাত্র তার সম্বল।

কি মনে হয়, মরবে লাজী, আঁধার কুঠুরি গিলে খাবে? এমনও কি হতে পারে জেদী মেয়ে লড়াই দেবে?

মরবে নাকি লড়বে লাজী, ঘোচাবে মিথ্যে কলঙ্কভার।
আগামীকাল বলবো আমি, কতোটা নির্মম যুদ্ধ তার।

#নিলাজীরজীয়নকথা২

#নিলাজীরজীয়নকথা২
...নিলাজবতী তো আমরা ডাকি, বাপে ডাকতো লাজীয়া মা। আঁতুরঘরে মা হারিয়ে , বাপসর্বস্ব লাজানিয়া।

ঠাণদি আর বাপে মিলে পালছে তাদের বুকের ধন। গহীন রাতে বাপের বীণায় ছোট্ট খুকির মনকেমন।

লাজী এখন কেবল কুঁড়ি,  গাঁয়ের বৌ ঝি চোখে হারায়। খেলে বেড়ায় আগান বাগান,  ঝিলের পাড়ে খিলখিলায়।

এমন দিনে এক বিকেলে কনে দেখা আলোর ভীড়ে, লাজীর সাথে চোখাচোখি এক পান্থজনের নদীর তীরে।

ওঠ ছুঁড়ি তোর বিয়ে আজই, শুভদায় এলো লাজীর বর। গাছকৌটো আর গাঁটছড়া তে, চললো মেয়ে  শ্বশুরঘর।

শউর ভালোই লাজীর ভালে, শাউড়ি কেবল একটু পর। সবচে' মিঠে সবচে' কাছের সে হলো গে লাজীর বর।

বর তো থাকে বিদেশ বিভুঁই, মেয়ে তুই শাউড়ি ঠেলা কারে ক'বি?
লাজীর সাথে সই পাতালো সে দিগরের এক চরবৈষ্ণবী।

সুয্যি জাগে ফের পাটায় বসে, কপালে মেয়ের মেঘ ঘনায়। বাপের শরীর খারাপ বড়ো, কিন্তু শাউড়ি দোরে শিকলি দেয়।

বাপের বুকে জমাট কষ্ট, লোকমুখে নাম শ্বাসের ব্যারাম। মেয়ের মুখটা না দেখিয়েই ঠাউর লিখলেন চির আরাম।

তোমাদের চোখ জল চুঁইছে, হৃদ মাঝারে ছলাৎছল। এই গল্পের পরের অংশ বলবো আবার কাল সকাল।

#নিলাজীরজীয়নকথা১

#নিলাজীরজীয়নকথা১
বাঁশিদেওয়া গঞ্জে বাস করতাম, তা সে এক বিশ বাইশ মতো বয়সে। আজ অতিবৃদ্ধে তারে নিয়েই, দুটি কথা বলার আর্জি দেয়সে।

কী শুধোচ্ছেন পাছে পাছে? সে গাঁ খানা কোথায় আছে?

আরে মশয়, যে নদী বয়ে গিয়েছে ফাঁসীদেওয়া গাঁয়ের বউ ঝি দের সিনান আরশি হয়ে, ধরেন কেন, তারই সতীন কুলকুলিয়ে বয়, এই বাঁশিদেওয়ার উঠোন পড়শী হয়ে।

তালে বুঝলেন কিনা কোথায় সাকীন এই গঞ্জ খানার? এবারে আসি কারণ খুঁজতে কেন এমন নামের বাহার।

এগাঁয়ে যে কেউ বিয়ে করে বউ আনুক, বা যাক মেয়েরা বরের সাথ, উপহারে একটি করে বাঁশি দেওয়া, হবেই হবে তাদের হাত।

নিলাজবতী এই গঞ্জের, একদা এক মস্তবড় ধনীর পুতি। তবে কিনা হালআমলে বাড়ন্ত ভাঁড়ে, একটি কেবল পিদিম জ্যোতি।

ঠাণদি আর বেকার গোমস্তা, দিনরাত্তির আগলে রাখে। এমন সৃষ্টিছাড়া মেয়ের ভালে, কী যে আছে ভাবতে থাকে।

অমনধারা কেন বললাম, নিশ্চয়ই হচ্ছেন কৌতূহলী?
আজ তো মেলাই রাত হয়েলো, সে নাহয় কালকে বলি?

Thursday, April 19, 2018

কবির সন্ধানে

চাঁদ পেলে সুখী হবে তুমি ?
চাঁদ দিয়ে গড়ে দেবো ঝকঝকে পিতলের থাল ,
কয় ফোঁটা তেল এ মাখা ধবধবে মুড়ি ,
কাঁচা মরিচের ঝাল ,
খেতে পেলে খুশি হবে তুমি ?
চাঁদ পেলে তৃপ্ত হবে তুমি ?
চাঁদ ভেঙ্গে গড়ে দেবো মেদুর চাঁদনী শরীর ,
রূপোলী ইলিশের মতো মোহিনী আশ্লেষ ,
তোমার স্বপ্নিল নারীর ,
আদর পেলে শান্ত হবে তুমি ?
ছেনে ঘেঁটে নেড়ে চেড়ে জড়িয়ে জারিয়ে দেখলে তো ?
অপার্থিব কে পার্থিব করার তীব্র আশ মিটল তো ?
বেশ , সকল প্রাপ্তি নিয়ে একখানি স্থুল ঘুম ঘুমাও এবার ।
তারপর ?
আমি বয়ে যাব চন্দ্রাহত কোন এক কবির সন্ধানে ,
বুকের ভিতর এক কুচি শুদ্ধ স্নিগ্ধ চাঁদ নিয়ে ।

শর্বরী হলাম

আরও একটা প্রভাতের দিকে এগোচ্ছে রাত ,
কতো খারাপ কতো ভালো সম্ভাবনারা ধীরে ধীরে আসছে ,
শুধু তুমি আসছ না ।
ধীর পায়েও না ।
তাই আমার সকাল এসেও আসলে কিন্তু আসছেনা ।
আসবেনা ?
সকাল হাতে তুমি বা তোমায় সাথে সকাল ?
আমি শর্বরী হলাম ।

শেখা যায়

হারিয়ে ফেললাম এর ভিতর খুঁড়ে পেয়ে গেলাম টা ঘটেও যায় ।
চলে গেছে সেই শূন্য ঘরে রয়ে গেছে টা বলাও যায় ।
নষ্ট জীবন ব্যর্থ কাব্য
কুমীর দরদী সহজ লভ্য
এই সবেদের টুসকি মেরে দিব্য আছি বলাই যায় ।
একটু আধটু আড়ি ভাব এও ভালো টা কিন্তু থাকাই যায় ।
কোন সে পথ ? কেমন উপায় ?
কেবল যদি চোখের তারায় সব টা দিলাম বলা যায় ।
শুধু যদি এই এত্ত টুকুন ভালবাসতে শেখা যায় ।

মায়ের মুখখানা

আমার সাধের আয়না টা ভেঙ্গে চুরমার ।
বহুবার ।
খামতি নেই তবু বাঁচার ইচ্ছের তীব্রতার ।
প্রতিবার ।
অব্যক্ত যন্ত্রণার বড়ো নির্মম অভিঘাত রাত্রিদিন ।
ভোরের শিউলি রঙ তবু একইরকম শুভ্র রঙিন ।
আসলে কি জানো ,
জিয়ন কাঠির হদিস আছে তো জানা ।
চোখ মেললেই সূর্যের সাথে মায়ের ওই মুখখানা ।

সময়

তোমার বিভ্রান্তিতে ফ্রেমে বন্দী লহমা - সময় ,
আসলে
মহাকাল চুঁয়ে পড়েন আঙুলের ফাঁক দিয়ে।
তোমার মূঢ়তায় স্তাবকরা অনিন্দ্য ঠুলি জোগায় ,
বস্তুত
মহাকালী হেঁটে যান আমাদের লাশ নিয়ে ।

পায়রার গলার মতো

অঞ্জলি উপচে ঝরে গেল মেঘলা সকাল ,
মুঠো চুঁয়ে পড়ে গেল স্লেট রঙ দুপুর ,
দ্রুত এবং সুস্পষ্ট চেহারায় এগিয়ে আসছে পাংশুটে বিকেল ,
এরপর নামবে শীতার্ত নিঃস্ব কাক - রাত ,
কতকাল পায়রার গলার মত ভোর দেখিনি আমি ।

রাধা

অনেক খানি এলোমেলো তে মাখামাখি ধুকপুক ,
অতল চুঁয়ে চোখের ঠোঁটে যন্ত্রণার সে সুখ ,
ছিটকে গিয়েও ছিঁড়ে ফেলেও আষ্টেপৄষ্ঠে বাঁধা ,
প্রতি বসন্তে রাঙার সাধে সৈরিনী হয় রাধা ।

গদ্যকাব্য

মেঘ মেদুর বিষণ্ণতা ,
উঠোন দুয়ার নীলচে ব্যাথা ।
কেউ জানেনা কেবল ঠকি ,
অশ্রু আড়াল হাস্যমুখী ।
ভরাও সবায় হুকুম জারি ,
ক্ষোভ কুঠুরি খুলতে দাঁড়ি ।
মেনেই নিলাম আমার ভাগ্য ,
বঞ্চনারই গদ্য কাব্য ।

গেল কয়?

একা একা বসে থাকা ,
চাঁদ একা
আমিও !
বাহ ! কবির মতো লেখা ,
পরিশীলিত ন্যাকা
কবিও !
বাস্তব আড়াল করে নিজের থেকে
খিদে লুকিয়ে রেখে পরের চোখে
কাব্যরচনা !
অতি সুছাঁদ !
ধনীর দুলালীর কদিনের খেলনা নিজেকে মেনেও ,
ল্যাম্পপোস্ট আর চাঁদে প্রম হয়না জেনেও ,
অনুপ্রেরনা
আজও চাঁদ !
ধুর
ভালবাসা বহুত খাস্তা জিনিস ।
চেপে ধরলেই ঝুরঝুর ফিনিশ ।
তাও কি অপচয় !
রেশন থলে টা গেল কয় !!!

চিঠি

অ্যাই ছেলে টা শোন ,
অমন হাঁ করে চাইবে না !
বলার থাকলে বলেই ফ্যালো
"তোমায় ছাড়া বাঁচবো না।"
অনিমিখ ওই তাকিয়ে থাকা ,
ভিতর ছোঁয়া দৃষ্টি ।
সমস্ত কাজ পণ্ড আমার ,
একি অনাসৃষ্টি !
বিনুনি তে ভুল হয়ে যায়
প্রতি পদে হোঁচট ,
লুকিয়ে একলা বাইরে এলেই
মায়ের চোখে আটক !
নৈঃশব্দেও শব্দময়
আলোর খেয়া দিঠি ,
তোমার নামেই উড়াল দিল
প্রথম প্রেমের চিঠি ।

আসি তবে?

মন টা খারাপ ? এদিক ফেরো ,
হাত টা ধরো , উজাড় কর ।
পায়ে পায়ে দুখ পেরিয়ে
যাব দুজন হিয়ার গাঁয়ে ।
সেই যেখানে বসত করে
সহজ সুখ তার সইয়ের তরে ।
তোমায় সেথায় পৌঁছে দিয়ে
এই মেয়ে টার কাজ ফুরোবে ।
বিকেল রঙে চোখ ভরিয়ে
বলবে , "সখা আসি তবে?"
দেখছ কি গো আমার চোখে ?
জল নয়গো , কি পড়েছে ।
তাকিয়ে দেখো তার দু চোখে
সিঁদুর রঙা ভোর জেগেছে।
এই যে সখা , আসি তবে ?

আসেনা কেন?

হৃদয় কি অন্তক্ষরা গ্রন্থি হয়ে গেল ?
অবিশ্রান্ত রক্তক্ষরণ ,
ককিয়ে ওঠা পাঁজর পেষণ ,
তবু একফোঁটা জল চোখে আসেনা কেন ?

ফেরে না

কত পাল্টে যাওয়া চারিদিকে ।
উড়ালপুলে ঠেকে যাওয়া শহরের মাথা ,
বহুতলে ছুঁয়ে ফেলা আকাশের ছাতা ।
দশ টা সিনেমা হল একসাথে একছাদে ,
দেশি বিলাতি পানভোজন নরম ঠোঁটে লোক সাধে ।
কিন্তু ,
যতই এপাল্টে ও উল্টে সে সাল্টে দিক ,
কিস্যু বদলায় না ।
মা লাল - সবুজ - গেরুয়া - হলুদ কিচ্ছু চেনেনা ,
তবু ,
তার ঘরে বাবা যদি বা ফেরে ,
আজও ছেলে ফেরে না !

হয়ে উঠলো না

একাকীত্বের সম্পৃক্ততা রোজনামচার সাথে ।
পলাশ শিমুল বিকোচ্ছে ওই চড়া মেক আপ এর হাতে ।
অগুন্তিবার কাচায় শাড়ি ডাক নামেতেই গোলাপি ,
গোলাপ গাঁদা আঁচল শরীরে ওই শহুরে সোহাগী ।
রবি ঠাকুরের দোল উৎসবে ললিত এবং ললনা
বসন্ত ,
তোমার আমার ভালবাসাবাসি জাস্ট হয়ে আর উঠলো না !

অস্তিত্ব সংকট

চোখের জলের নৈবেদ্য দিলাম ,
হৃদয় উজাড় করে ব্যথার কুসুম
পায়ের উপর রেখে দিলাম ,
তবু তুমি চাইলে না !
বেশ ।
আমি চললাম ।
এবার তুমি জানবে , উপাসিকা বিনা অর্থহীন হয়ে যায় উপাস্য !
আজ থেকে জীবন দেবতা
শুরু হোক তোমার তপস্যা ।
নিজের দেউল হতে প্রত্যাখাতা জীবন কে
অঞ্জলি আদরে বুকে করে নিয়ে আসার ।
নইলে ?
সে তো তুমি জান প্রভু ,
অস্তিত্ব সংকট !

শ্রাবণ সন্ধ্যা

দিন শেষে বৃষ্টি ভেজা কাকের বড়ো নিরুত্তাপ একলাটি পথ চাওয়া ,
জোলো ডানায় অমোঘ এক অবসন্নতার ভারী আরও ভারী হয়ে যাওয়া ,
পাংশুটে আঁধারে দোসর হীন বৈকালিক কাক চোখের নিরর্থক বোবা এক চাওয়া ,
এরি পোশাকি নাম
শ্রাবণ সন্ধ্যা ।

সকাল হয়না

আমার হাতের রেখায় নাকি তোমার নাম নেই ।
আমার হাতের শিরায় রক্তের তবে কার নাম জপে চলা ?
কার চোখে দুবে যায় শ্বাস নিঙড়ানো ছুটে চলা ?
সকালে শুনেছি মিথ্যে বলতে নেই ।
চুপ করে থেকে যাই ?
ভালবাসা বাসা নিক আরও আরও গহীনে ।
মেঘে ঢাকা তারা দের সকাল হয়না !

বসবাস

সমস্ত টা দিন
আলসেতে এক কাক ।
সমস্ত টা রাত
বুকেতে তার ডাক ।
সমস্ত অঙ্গীকার
বেলোয়ারী ক্যানভাস ।
সমস্ত চুরমার
স্রেফ নাটুকে বসবাস !

আদরবাসা

টুক দু আদরবাসা ,
বিট্যা ছেল্যার লায়েক লিশা ।
ডাগর হইছে বিট্যি ছেল্যা ,
ননা লাই গ আর ময়া ইঞ্জল্যা ।
গন্ধেশ্বরী গহীন হব্যাক ,
বুলি অবুলি ডুবাই দিব্যাক ।

ইচ্ছে করে

যখন চারপাশ টা ঘষা তামাটে কাঁচ ,
যখন ঝিমিয়ে যায় সম্পর্ক গুলোর আঁচ ,
যখন মুখ টি মোছার আভিজাত্যের ভীরু অসার ছল ,
আড়াল করে চলকে ওঠা রিক্ত চোখের জল ,
তখন
তোমায় বড্ড মনে পড়ে ।
কিভাবে বাঁচছ দেখতে ইচ্ছে করে ।

মনে মনে

আমায় তুমি মুক্তি দিলে উদার অসীম এক আকশে
কিন্তু
ঘুমের মাঝে আজও কেন চিলেকোঠা টাই পাশে আসে ?
জান ,
আমায় তুমি দাঁড় করালে মস্ত সে এক ছাদের আলসে
তবু
চোখের তারায় আজও কেন জাফরি জানলা চলকে আসে ?
শোন ,
আমায় তুমি ভরিয়ে দিলে বহুমূল্য আভরণে
হায়রে
আজও আমি খুঁজে চলেছি রূপোর মল টাই মনে মনে। 

সেইটুকু ছাড়া

একা একা তো বেশ চলা যায়
চলতে চলতে পথ ও পেরোয় ,
পেরতে পেরতে তোলন নামন
নামিয়ে উঠিয়ে বাঁচা কে বরণ ,
কত অনুভব কত চেয়ে দেখা
কত আস্বাদন কত বেশ লাগা ,
ঝুলি ভরে নিয়ে আবার এগোই
এগোতে এগোতে থমকে দাঁড়াই ,
সবকিছু আছে সেই টুকু ছাড়া
কনুই টা ছুঁয়ে বলতে পারা ,
"দ্যাখো , কি সুন্দর  !"

মাধবীলতা

বিকেল ফুরিয়ে যখন গোধূলি জাগল ,
চরাচর ভাসিয়ে নিল কনে দেখা আলো ,
চোখ ফেরালাম তোমার থেকে দিগন্ত লীন সুন্দরতা ।
দৃষ্টি প্রদীপ ভরিয়ে দিল যে ,
সাঁঝ দিয়া অঞ্জলি তে ,
আমার শান্ত মাধবীলতা ।

নারী যে!

আগুন কে ছুঁয়ে আমি না ,
আমাকে স্পর্শ করে আগুন প্রমান করবে সে পবিত্র ।
গঙ্গোদক হাতে আমি না ,
আমাকে ধারন করে গঙ্গোদক প্রমান করবে সে নিষ্কলুষ ।
মহাদেবের তাণ্ডবের সাথে
মহাদেবীর লাস্য না মিললে
তাল তৈরি হয়না ।
পুরুষের উদ্দামতার সাথে
প্রকৃতির গভীরতা না মিললে
কাল গতিময় হয়না ।
তবু
যুগ যুগান্তের সব চেয়ে বেশি নিষ্পেষণ আমারই উপর ।
নারী যে !
নরকের দ্বার !!

সর্বনাশী

জন্মের শোধ ভালবাসাবাসি
মিটিয়ে নিয়েছে আজ সর্বনাশী ।
একা পড়ে আছে ধু ধু প্রান্তরে
আকাশের যত লাজ ছিঁড়ে খুঁড়ে ।
চেয়ে আছে দুই চোখ ঠিকরিয়ে
জীবনের যত ক্ষোভ রাশি রাশি 

কেউ বলেনা

একঘেয়ে কথা গুলো আর ভালো লাগেনা
ভীষণ জোলো পানসে মনে হয় স্তুতি গুলো
স্তাবকতা হয়ে যায় বাগাড়ম্বর প্রশংসা
কেউ বলেনা তোমার দুদিনের খিদের পেটে গরম ভাতের গন্ধের মত আকর্ষণ
কেউ বলেনা তোমায় অসহ্য দাবদাহে এক পুকুর জলের মত ভালবাসি ।

কুটির দুয়ার

ভালো লাগেনা এতো ওঠা পড়া
ভালো লাগেনা এতো খাদ চড়া
ভালো লাগেনা এতো টানা পোড়েন
ভালো লাগেনা এতো জটিল যাপন
আমাকে দাও একটা নিস্তরঙ্গ অঙ্গীকার
ঠেস দিয়ে দাঁড়ানোর শান্ত কুটীর দুয়ার ।

দাগ কাটেনা

অনেক কিছুই আজকাল আর মনে পড়েনা
দাগ কাটেনা ।
কতদিন হয়ে গেল তোমায় আর চিঠি লিখিনা ।
তুমি থাকবেনা !
সইতেই পারবনা স্থির বিশ্বাস চলকেও তো গেলো বহুদিন
দিব্য তো সয়ে বা সইয়ে নিচ্ছি কত উথাল পাথাল রাত্রিদিন ।
সব কথোপকথন ই আজ খেজুরে আলাপন ।

বলবো আবার

নতুন গল্প কোথায় পাব ?
শূন্যতা দিয়ে শুক কি গড়াবো ?
গল্প টা থাক এখন বাকি ,
একলা বিকেল পথ চলতে থাকি ।
ব্যথার পাহাড় হলে সুখ পারাবার
নতুন গল্প আমি বলব আবার ।

অনুপম কবিতা

এক পশলা গোধূলি আলোয়
হটাৎ বৃষ্টি ভিতর ভিজোয় ।
জল রঙা ক্যানভাসে মন
জলজ নিটোলে দৃষ্টি ডুবোয় ।
লেখনী ডুবিয়ে গহন গহীনে
অবয়ব রচে বৃষ্টির কবি ।
জানলার কাঁচ চোঁয়ানো আদরে
এই মেয়ে , ভিজতে যাবি ?
বৃষ্টি নিজেই একখানি অনুপম কবিতা ।

পরাজয়ের পর

বুকের ভিতর আজও একইভাবে জেগে আছে ব্যথালীন চরাচর ,
বন্ধ কুঠুরি দের ভিতর আজও একইভাবে স্মৃতির চলাচল ,
বহু ক্লেশ সত্ত্বেও শিরার ভিতর আজও একইভাবে রয়ে গেছো তুমি ,
বরং একটু কাঁদার সাধ টাই অপূর্ণ নিজের ভিতর আজও একইভাবে
পরাজয়ের পর ।

খ্যাপা

লোক টাকে তুমি  চেনো কবি ?
জান কি ও কোথায় থাকে ?
লোক টা জানতো তোমার আমার
বুকের ভিতর বাসা বাঁধে ।
দিন বদলের স্বপ্ন নিয়ে
সেই কতকাল হেঁটে চলেছে ।
খ্যাপা পাগল এদের ভিড়েই
পরশ পাথর তালাশ করছে ।

বাঁচাতে হবে

প্রতিটা রাত্রি শিরদাঁড়া বেয়ে ঢলে পড়া নতুন নতুন সর্বনাশ ,
প্রতিটা দিন ঝকঝকে দাঁতে ফিচেল হিসেবি সহবাস ,
শুধু ভোর টা ঘুড়ি ছোঁয়া শিউলি কে দিয়ে রেখেছি ।
বাঁচতে তো হবে ।
বাঁচাতেও ।

এতোটুকুও না

হতাশ আমি আজকাল আর মোটেই হইনা ।
হত পূর্বক শব্দ টি যে নাছোড় আশাকেও টেনে চলেছে আজন্ম ।
হঠকারি ওই আশা টি মোটের উপর আর করিনা ।
হুতাশন বরং বেশ ঘনিষ্ঠ আত্মগন্ধি শব্দ ।
হাহাকার ফুঁৎকারে উড়িয়ে নিজেদের মুখোশ পোড়াতে আমি আর ডরিনা ।
এতোটুকুও না !

শো যাতে হ্যায়

চলো খুদ হি শো যাতে হ্যায় ।
বে-রুখ জিসম কো গুমনামি কি গোদ মে শুলাহ হি দেতে হ্যায় ।
জিয়া জাগা কে রখনে সে ভি ভালা কওন সা সিলহা মিলেগা ?
দরদ-এ-দিল কো আসরা-এ-সুকুন দেনা ত দূর
আপনো কে পাস তো কবর পে মিট্টি ডালনে কে ভি ফুরসৎ নেহি হ্যায় ।

অবিকৃত লাশ

দুর্বোধ্য কবিতা রাশি লিখতে লিখতে
অবোধ্য হয়ে যায় জীবন ।
নির্বোধ কুশপুতুল দের হাসাতে হাসাতে
বিকৃত হয়ে যায় যাপন ।
তবু বেঁচে থাকার কি হাস্যকর প্রাণান্ত প্রয়াস !
কেউ না ডাকলেও মিছিমিছি সাড়া দেওয়া ,
ফিরে তাকানো্র গোপন অভিলাষ ।
বুকের মধ্যে জিইয়ে রাখা মমি অতীত ,
বয়ে বেড়ানো গোলাপি ঘরের অবিকৃত লাশ !

জীবন আস্বাদনে

আজকাল আমি আর একদম লিখিনা ।
কলম ভুলতেই বসেছে
সাদা কাগজের সেই পুরনো ঠিকানা ।
অনেক বেশী ভাললাগায় কাগজ গুলোর খেলনা বানাই ,
ফুটপাথের বালগোপালের হাতে ধরিয়ে খুশিতে ভাসাই ।
কলম দিয়ে আঁকিবুঁকি ভিখিরি ছেলে রাজা সাজাই ,
অপাপবিদ্ধ চোখে তারি নতুন ভোরের স্বপ্ন জাগাই ।
আমার কবিতা খেলে বেড়ায় ওই যীশু দের দিন যাপনে ,
আমার কবিতা বেঁচে থাকে তীব্র জীবন আস্বাদনে ।

হয়েই যাই

চল , জটিল হয়েই যাই ।
মাপা হাসি হাসতে শিখি ,
চাপা কান্না ঢাকতে শিখি ,
ভালোবাসি এ কথাটা বলতেই ভুলে যাই ।
চল , ফসিল হয়েই যাই ।
মুখ মুখোশের তরজা টা বেদম বন্ধ কর ,
কলের পুতুল হয়ে বাঁচা শিখে নেবার পর ,
অবোধ অবুঝ বায়না গুলো করতে ভুলেই যাই ।
চল , মন টা ছিঁড়ে এবার শুধুই 'শরীল' হয়েই যাই ।

হারিয়েই যায়

কি এমন ঘটে যাবে কাল থেকে যদি আর নাই দেখা হয় ?
কতটুকু টোল খাবে চকচকে মিনে করা ধাতব হৃদয় ?
কতখানি 'ফাঁকা লাগা' বুকে নিয়ে চলবেন কতটা সময় ?
তিলমাত্রও নয় !
আপনার কিবা আসে যায় ?
নদীর টানে সাগর তো না ,
সাগরের টানেই নদী ভেসে যায় ।
এইটুকু ভেবে নিলে সব ল্যাঠা চুকেবুকে যায় ,
হারিয়ে যে যাওয়ার সেতো হারিয়েই যায় !

স্বচ্ছতার ডাকবাক্স

খেলাঘর ফেলে চলে যাওয়ার মধ্যে কোনও অন্যায় ছিলোনা তোমার ,
গ্রন্থি তো বন্ধনহীনই ছিল !
কথার ডোরে তোমায় শিকল জড়ানোর অভিলাষও ছিলোনা আমার ।
আকাশ মাটির অনাবিল সখ্যতা টুকুই তো ছিলও !
কিন্তু
তুমি পালিয়ে গেলে কেন ?
আমায় এড়িয়ে গেলে কেন ?
এতো তোমায় মানায় না সখা ,
c/o আকাশ লিখলেই চিঠি পৌছায় না ।
স্বচ্ছতার ডাকবাক্স থাকতে হয় ।

কেন?

আজ হটাৎ বুঝতে পারলাম
কষ্ট পাচ্ছি ।
অনেক অনেক দিনের সেই হারিয়ে যাওয়া কষ্ট টা
তিরতির করে জাগছে ।
আজ হটাৎ খেয়াল করলাম
তার কাঁপছে ।
অনেক অনেক দিনের সেই স্তব্ধ হওয়া সেতার
এক চেনা সুর তুলছে ।
আমি ভালবাসার জন্য যন্ত্রণা নীল আবার ।
সমস্ত অস্তিত্ব দিয়ে ব্যথা শুষে নিচ্ছে হৃদয় ।
দরবারী কানাড়া নরম শরীর গড়ছে নিজের ।
অপলক চেয়ে থাকা রাত্রি ভাসিয়ে দিচ্ছে সময় ।
কেন এমন হল ?

ওম

শীতের কনকনে সকাল
শীতল কঠিন  জল ঘেঁটে চলে দুটি হাত সাংসারিক ব্যস্ততায়
পাক্কা সোয়া তিন মিনিট ফাঁকতালে ঝুপ করে পড়ে গেলো কপালে
অবসন্ন আঙুল গুলো অনেক আদরে আঁকড়ে ধরে গরম কফি কাপ
তিরতিরে কুসুম কুসুম উষ্ণতার শোরগোল পড়ে যায় স্নায়ু তন্ত্রী গুলিতে
আমি তোমায় ঠিক এই ওম টার মতন ভালবাসি ।

আকাশ

রবিন ব্লু গোলা আকাশ
ইতিউতি গা ভাসানো মেঘ তুলো
জমাট বাঁধা মেঘলা সবুজ পাতার দঙ্গলে এক গাছ উদাসী সাদা টগর
পড়শির আলসেতে অলস কাক
এই আছে এই নেই কাঁচ রোদ্দুর
দুপুরের পাত সাজানো ব্যঞ্জন প্রস্তুতির চনমনে গন্ধ
সব কিছুই খাটের পাশ জানালার শিক গুলোর ওপারে ।
নিজের ভিতর ধীরে ধীরে 'অমল' হয়ে চললো যে !

বেশ লাগছে

একটা চমৎকার মন কাড়া বিকেলের সূত্রপাত আমার চারপাশে ।
নারকেল পাতায় ঝিরঝিরে আলো
শিরিষ পাতায় ঝকঝকে রোশনাই
এরই মাঝে প্রাক গোধূলির নীলচে রূপোলী আকাশ
নতুন সবুজ মাঠটায় ঢলে পড়ছে ।
চারটে শালিখ
তিনটে কুবকুব
দুটো কাঠবেড়ালী
ইশকুলের দোতলার বারান্দায় আমি ।
বেশ লাগছে ।

অপু দুর্গা

রেল গাড়ী টা আর আসবেনা ।
চেয়ে থাকা চোখ গুলোর চারপাশে
বলিরেখা আসবে কেবল ।
আশা উদ্বেল মন গুলোর চারপাশে
রিক্তসন্ধ্যা নামবে কেবল ।
আর আসবে শ্রান্ত অবসন্ন বুড়ো রাত টা
ব্যর্থতা আর বিভ্রান্তি পিঠে বয়ে ।
খা খা করা হাতে ফিরে যাবে আজকের
অপু দুর্গা ।

একা হয়ে গেল

সব রঙ হটাৎই ফ্যাকাশে
সব আলো হটাৎই নিভে গেলো
সব খুশি হটাৎই পানসে
সব নীরা রা একা হয়ে গেলো ।

নাই বা হলাম

আমি ক্যাকটাস হতে তো পারি
রজনীগন্ধা নাই বা হলাম ।
এক অঞ্জলি তৃষ্ণার জল হতে তো পারি
সাগর নাই বা হলাম ।
শান্ত গোধূলি হতে তো পারি
উচ্ছলিত দিন নাই বা হলাম ।
কারো সহমর্মী হতে তো পারি
সৌজন্যের সান্ত্বনাদাত্রী নাই বা হলাম ।
একজনের মানসী হতে তো পারি
বিশ্বমোহিনী নাই বা হলাম ।
আমি নিজের মত হতে তো পারি
তার চেয়ে ভালো নাই বা হলাম ।

ফলাতে হবে

একটা দেশের জন্ম হয় ভাষার তাগিদে
একটা দেশের জন্ম দেয় হাজার শহীদে ।
একটা দেশের মায়ে মেয়ে
বসত উঠোন সাজিয়ে ধুয়ে ,
আজো ছেলেদের আসার আশে
ঠায় দুয়ারের পাশে বসে ।
কেউ ফিরেছে কেউ ফেরেনি
কাজ যে আজো শেষ হয়নি ।
সোনালি ফসল ফলাতে হবে সোনার মাটিতে ।

ওদের ভালো হোক

তুমি চলে গেছ বলে হাহাকার করে কেঁদে যাবো অহর্নিশ ?
কক্ষনো না ।
তুমি চলে গেছ বলে নিজেকে বিদীর্ণ করে অভিশাপ দেব তারাদের ?
কক্ষনো না ।
তুমি চলে গেছ বলে ত্রিনয়ন ছাড়াই জ্বালবো মদনভস্মের আগুন ?
কক্ষনো না ।
কারন ?
তার জন্য যে মন টাকে বেঁচে থাকতে হয় 'কচ' !
শিলীভূতা হয়ে গেছি আমি
শিলীভূত হল আমার প্রেম ।
ওদের ভাল হক ।

তোমার!

ঝাউ পাতার নতুন নতুন পুরুষ বন্ধু হতে পারে ,
আমার দু চারটি হলেই মায়ের মুখ টি ভার !
নন্দিনীর জন্য গোটা রক্তকরবী থাকতে পারে ,
আমার ভোরের শিউলি কুড়োতেও অনুমতি লাগে সবার !
নীরা পাতার পর পাতা প্রেমপত্র পেতে পারে ,
আমি সাকুল্যে একটি পেলেই পিঠে অবিশ্রান্ত মার !
কেন ?
আমি সাধারন মেয়ে বলে ?
'রাগ করোনা ।
আমি তো আছি ।
গানের মাষ্টার মশায়
তোমার !'

ইশ!

এই যে মেয়ে ,
তোমাকে ভালবাসলে এইটুকু দুঃখ তো পেতেই হয় ,
তোমাকে পেতে চাইলে এইটুকু অবহেলা সইতেই হয় ,
তাইনা ?
তোমার জন্য বাস স্ট্যান্ডে বৃষ্টি স্নান
লাল সাইকেল লড়ঝড়ে ফ্যাকাশে ।
তোমার জন্য চান ঘরে গোপন গান
সব রঙ নিয়ে একটাই মুখ আকাশে ।
পারছিনা !
মায়ের আঁচল ধরে স্কুল
প্রাইভেট ও তোমার মায়ের আঁচলে !
মায়ের খুন্তি বাবার বেল্ট
অবিশ্রান্ত ঝাড় আমার কপালে !
শোনোনা ,
কাল বিনুনি বিকেলে দাঁড়াবো তোমার সামনে ।
জেনে নেবো
আমি তো এতো সইলাম ,
তুমি কি দিলে আমার জন্যে ?
'হাফ প্যান্টের ভোকাট্টা থেকে প্রেমিক পুরুষে উত্তরন ,
এই মেয়েই তো দিলো তোমায় !
বোঝোনি ?
ইশ !!'

দেবেনা?

বিষণ্ণতার কাছে একচিলতে সুখ চেয়েছি ।
হাহাকারের কাছে এত্তটুকুন আদর ।
অপ্রাপ্তির কাছে ছোট্ট পরিপূর্ণতা চেয়েছি ।
একাকীত্বের কাছে ক্ষণিক গোধূলি ।
পেয়েও গেছি ।
ব্যস !
আর লুকোচুরি খেলবো  না আমি ।
মাখিয়ে দাও হাল্কা গাঢ় ফ্যাকাসে গভীর সবকটা রঙ ।
আর পালিয়ে বেড়াবো না আমি ।
সেজে ফিরবনা মিছে 'বেশ আছি , ভাল আছির' অদ্ভুতুড়ে সঙ ।
নিঃস্ব রিক্ত অপমানিত পরাজিত , এতকাল ভীরু বুকে
আড়চোখে দেখা এইসব রঙ ,
আজ চেখে দেখবো আমি ।
ক্লান্ত বিষণ্ণ পরিশ্রান্ত অবসন্ন , এতদিনে অতি যতনে
এড়িয়ে যাওয়া এইসব রঙ ,
আজ জড়িয়ে নেবো আমি ।
শূন্য থেকেই শুরু হোক আমার পূর্ণতার নিশ্চিত যাত্রা ।
মেকি জীবনের ফাঁকা ফাঁকা অক্ষরগুলো পেয়ে যাক বেঁচে থাকার জীবন্ত মাত্রা।
রাঙিয়ে দাও
সাজিয়ে দাও
ফুটিয়ে তোলো
শ্বেত শুভ্র সাবধানী ক্যানভাসে জীবনের সবকটা
তীব্র বলিষ্ঠ সুখ দুঃখের অভিঘাতী রঙ ।
নইলে তোমায় বসন্ত বলে ডাকবোই না ।
নির্ভাবনায় অনিশ্চিতের ভেলায় ভাসবই না ।
উজাড় করে নিজেকে দিয়ে তোমায় ভরিয়ে তুলবোই না ।
এবার বলো ,
দেবেনা রাঙিয়ে ?

কান্হা আমার

বৃষ্টি নামছে লেখার খাতায়
বৃষ্টি নামছে বুকের ভিতর ,
ঘন শ্রাবণ চোখের পাতায়
কলম হটাৎ অবাধ্য তোর !

থইথই জল নৌকা ভাসাই
কলকল স্রোত চললও নিয়ে ,
স্মৃতির বৈঠা উঠাই নামাই
ডিঙি টা চললও ভাটানি বেয়ে !

অপলক সেই তাকিয়ে থাকা
শরীর ভরা অচেনা কাঁপন ,
গোটা পৃথিবী ভুলিয়ে রাখা
দুটি হৃদয়ের প্রণয় যাপন !

অনেকটা দিন পার হয়েছে
অনেকখানি বয়স হোলও ,
বরাত মাফিক লেখার মাঝে
আচমকা এ কোন ঝঞ্ঝা এলো !

নষ্ট মেয়ে হইনি আমি
সকাল বিকেল পদ্য লিখি ,
প্রতি কবিতার শিরায় শিরায়
আমাদের প্রেম লুকিয়ে রাখি !

তুই ফিরে যা কান্হা আমার
সওয়াল জবাব সব তামাদি ,
চোখ টা ধুয়ে আমি আবার
বরাত মাফিকে মন ঢেলে দি ! 

থাকে কি কেউ

অনেকটা গভীর জল
অনেকটা নিবিড় নীল
নাকি একটু ঘোলাটে ?
একটা ডিঙি দুটি মানুষ
রুপোল আর তামাটে ।

একটা দাঁড়
একটা হাল
একটাই তো নৌকো ,
জীবন ঘর বাঁধার আশ
জাফরির আলো চৌকো ।

গাইছে মেয়ে
বাইছে ছেলে
গাঙ পেরোবে ঢেউয়ের তালে ,
আঁধার গাঙে কুলের দিশা
হোক না অনেক শক্ত ।

হটাৎ ঝড়
অচেনা ঢেউ
নিকষ আঁধার
ওগো , আছো কি কেউ ?

ভোরের আলো
অপার গাঙ ,
একটা ডিঙি
দাঁড় হাল
হারিয়ে গেলো ।

ওগো ,আদৌ থাকে কি কেউ ?

চাবুক

কি দেখছো ?

কি ভাবে ফালাফালা করে চিরেছি
তোমার প্রিয় মানুষটির পিঠ !
তোমার সন্তানের নরম শরীর !

কি ভাবছো ?

কি আগ্রাসী ক্ষুধা আমার গোটা শরীরে !
টাটকা গরম রক্তের কি জান্তব তৃষ্ণা
লকলকে জ্বিভায় !

কি বলছো ?

সাধে কি এর নাম
"চাবুক" !

কি ভীষণ পরিমান আতঙ্ক আমার নামে !
কি নিদারুণ ঘৃণা তোমার দু চোখে !

কিন্তু ,

সভ্যতা বা অসভ্যতার
আদি থেকে অন্ত ,
মার দেওয়া'রা থেকে মার খাওয়া'রা
কেউ জানতে চাওনি ,

আমার কেমন লাগে !

নিপীড়িতের শরীরে বিদ্যুতের তীব্রতায়
আছড়ে পড়তে ,
সারা শরীর দিয়ে রক্তের নোনতা স্বাদ
চাটতে ,

কতোটা বিবমিষা জাগে !

কোনো দিন ভেবে দেখেছো ?

উৎপীড়কের হাতের পেষণ যন্ত্র হয়েও
আমি ঠিক কতোটা অসহায় ,
শাসকের একটা ক্রীড়নক মাত্র !

তোমাদের দেওয়ালে পিঠ ঠেকে গেলে
বিদ্রোহ আছে
বিপ্লব আছে
আছে পালাবদলের ডাক ।

কিন্তু আমার ?

এ শরীরের তো দেওয়ালেই ঠেকে থাকা জীবন যাপন !
ঘৃণিত হওয়ায়
নিজেকে ঘৃণা করায় ,
আবর্তিত
বিষাক্ত অস্তিত্ব !

এবার বুঝলে তো ?

চাবকানো টা চাবুক কে কতোটা চেরে !

ভালো থেকো

আমার মতো কারো কারো জন্য একটা মোমও জ্বলেনা ,
তোমার জন্য হাজার ওয়াটের বড়ো বেশী উজ্জ্বল ঝকমকি !
আমার মতো কেরানীর ছেলে মেয়ে নওল - রাই কিচ্ছু হয়না ,
তোমার জন্য রঙিন পাপড়ি - ঠোঁট - সুগন্ধি - সুরা - সাকী !
তবু তোমার মন ভালো নেই ?
কি মুশকিল !
আমাদের দ্যাখো ,
একরাশ না পাওয়া কে তুড়ি মেরে উড়িয়ে কি মজাসে চলছি ,
প্রতি পশলা বৃষ্টি তে ভিতর ডুবিয়ে কান্না মিশিয়ে হাসছি ,
গোলাপি না হোক ফিকে রঙা মনই নিজের হৃদয় কে সঁপেছি ।
শুধু বাঁচা কেই ভালোবেসে বাঁচছি ।
তুমিও বাঁচো ।
সব দেওয়া নেওয়া খুশি বেদনায়
নরম আদরে স্বমহিমায়
যেখানেই থাকো , যেভাবেই থাকো
ভালো থেকো ভালোবাসা ।

যদি বাঁচতে চাও

এতো রক্ত কেন ?
কেন এতো ঘৃণা চারিপাশ ?

নারকীয় অন্ধকারের দিকে সশব্দে চলেছি আমরা !

এতো দম্ভ কেন ?
কেন এতো পাশবিক উল্লাস ?

পঙ্কিল কুটিল আবর্তে মহানন্দে পাক খাচ্ছি আমরা !

শ্রদ্ধা , সম্ভ্রম , সৌজন্য , শালীনতা
কোথায় গেলে তোমরা ?

দশচক্রে ভগবান ভুত জানোনা তা ?
কোন ছার আমরা !
যদি বাঁচতে চাও ,
"উলঙ্গ ছেলে" টাকে খোঁজও !

ভিখিরী হয়ে গেছে

ধাপ ধাপ ধাপ !
দরজায় আঘাত ।
ধাম ধাম ধাম !
আঘাত অবিরাম ।
ধড়াস ধ্রাম ধড়াম !
ভেঙেই ফেললো ? হে রাম !
ঠুং ঠাং ঝন ঝন !
চুড়িগুলো ভাঙলও ।
সর সর সর সর !
সম্ভ্রম ছিঁড়লও ।
নাহ ছাড় উহ মাগো !
অসহায় বোবা আর কালা ওর ভাগ্য ।

নিশ্চুপ শুনশান
মনুষত্ত্বের সর্বশেষ পতন !

ধ্বন্যাত্ত্বক শব্দকোষ ভিখিরি হয়ে গেছে !!!

ও ডাক্তার বাবু

ও ডাক্তার বাবু
শুনতিসেন ,
আপনার কাসেই আলাম ।
মুই আতুরি
ইটি আমার মেয়ে ,
নুরী ।
ইশকুলি জ্যাকন  পড়তো নাম দেসেলাম নুরজাহান !
জগতির আলো !
তা সে তো ছয় কেলাশ পড়তেই অর বাপে জোর করি বে' দে দিলো ।
চান্দপানা মুক নে আমার পাঞ্জর ভেঙি ঘর করতি গ্যালো ।
অর বাপের বয়সি নোক কে সোয়ামী মেনে !
ইশকুল , খেলুড়ে , মায় ছোটবেলা টাও শেষ জেনে ।
বাকি টুকু কি আর কোতি হবে ডাক্তার বাবু ?
এই এত্তটুকুন শরিলের ওপর কতো সয় !
আসলো পলায়ে !
আমার জামাই অরে তালাক দেসে ,
খালি প্যাটে লয় গো বাবু ,
পেট টা ভরি বাচ্চাও দে দেসে !
অরে নিয়ে আলাম আমি ।
এই বাচ্চাটা জ্যামনেই হোক
জম্মানো চাই !
পোসবের বেদনা টা না সইতি শিকলি
নুরী আমার তুফান পোসবের ধাক্কা সয়ে দাঁড়াবে কি করি !
মা না হোতি পারলি
মেয়ের হাহাকার বুকি বাজবে কি করি !
অরে নিয়ে আমি লড়বো জে গো বাবু ,
ঘুরি দাঁড়ানোর লড়াই !
তাই মা অকে হোতি হবেই ।
কতো মেয়েরা নাকি নেকাপড়া করতি পায়
নিজির পায়ে দাঁড়াতি পায় ।
ডাক্তার বাবু , তারা কারা কতি পারেন ?
এই পোড়া চোকে তো একটিও দেকতে পাইনে গো !
সোমা , শেফালি , সাবানা সবার জেবনেই নুরীর দুক্কো !
সিসটির মান্ ষির রোগ তো সাইরে দিতি পারেন এক ফুঁয়ে ,
তা তেনাদের ভিতরির এই পচা পাঁক গুলোন সরায়ে ফেলতি পারেন নে ?
নুরী পারবে গো ডাক্তার বাবু ,
কোলের এই পিসু টান রে সে বুকি জড়ায়ে নিয়েই এগোবে ।
আপনাদের নেকাপড়া জানা ভদ্দর সমাজে
নুরী জগতির আলো হইয়েই মাতা তুলি দাঁড়াবে ।
নেশ্চয় দাঁড়াবে !
সুদু অকে বাচ্চা টাকে জম্মো দেওয়া শিকিয়ে দিতি হবে ।

শোনোনা

"শোন না গো ,
আজ একটু তাড়াতাড়ি ফিরবে ?
আমায় আজ একটিবার বারান্দায় নিয়ে যাবে ?
বেতের সেই সাদা চেয়ার টায় একটু বসিয়ে দেবে ?
পারুলের মা কে বলো না গো চুল টা বেঁধে দেবে ,
রাঙা দি কে বললে আকাশ নীল শাড়িটাও পরিয়ে দেবে ।
শুনছো ,
আমি আজ একটু বিকেল দেখবো ।
জানলার শিকের আড়ালে খাঁজ কাটা বিকেল নয় ,
বাগান ভরা ফুল - বাসায় ফেরা পাখিদের মরশুমি বিকেল ,
দক্ষিণ মুখী বারান্দায় ।
দুজনে বসবো ।
তুমি একটিবার চাইবে সেদিনের মতো ,
যাহ্‌ !
কতো কতো বছর পার !
দেখো ,
আজও ততোটাই লাজ মাখবে
সন্ধ্যাদীপ চোখ আমার !
চুপ করে আছো কেনও ?
বলোনা ,
নিয়ে যাবে ?

"মণি ,
আজ বিকেলে তোমার লাস্ট কেমো হবে ।
আমি বেরোই বুঝলে ,
সকাল সকাল ফিরতে হবে ।
তোমায় নিয়ে যেতে হবে ।"

মনে পড়ছে

আজ কেন বলো তোমাকেই এতো বেশি করে মনে পড়ছে ?
হৈমন্তিক বিষণ্ণতা কেন দুহাত বাড়িয়ে ডাকছে ?
বাসন্তিক শিহরণ সেতো কবে ফেলে রেখে চলে এসেছি !
বৈশাখী দাহন দিয়েই নিজেকে জড়িয়ে রেখেছি !
শমন - রূপী শীতার্ত রাতের আসাও স্থির নিশ্চিত হয়ে রয়েছে ,
তবু কেন শরীরের কানায় কানায় আষাঢ়ের বান ডাকছে ?
কেন আজ এই শারদ বিকেলে তোমাকেই , শুধু তোমাকেই মনে পড়ছে ?

বাঁচবো

কতদিন আমি আকাশ দেখিনি দু চোখে উজাড় করে ,
কতদিন আমি সাগর ছুঁইনি দু হাতে জড়িয়ে ধরে ।
দেখার মতো দেখলে আকাশ বুকে তে বাসা বাঁধে !
ছোঁয়ার মত ছুঁলে সাগর শরীরে আলাপ সাধে !
এসবই তো জানা আমার সেই যে কিশোরী বেলায় ,
আকাশ পাহাড় নদী সাগর ভেসেছি খুশির ভেলায় !
ঘুণপোকা আজ বেঁধেছে  বাসা বুকে তে শক্ত করে ,
মৃত্যুর দূত আলাপ সাধে শরীর স্তব্ধ করে !
তবু একবার বোন টাকে তোর নিয়ে যাবি দাদা বেড়াতে ?
মৃত্যুর নীল চোখে চোখ রেখে জিয়ন ফানুস ওড়াতে !
মেঘে ঢাকা তারা হবোনা রে দাদা গোধূলির রঙে সাজবো ,
প্রতিটি মেয়ের বুকের ভিতর লাজারুন সাধ হয়ে বাঁচবো !
দাদা রে , আমি বাঁচবোই বাঁচবো !!

পড়ো কিন্তু!

জান কবি ,
আজ শ্যামলিমার গল্প বলবো আমি ,
শ্যামা মেয়ের জীবন যাপন কথা ।
লিখবে কবি ?
পাথরকুচির হীরে রচনাকার তুমি ,
গল্প শুনে একটি কেবল কবিতা ?
হাসছ কেন ?
শ্যামলা মেয়ের গল্প থাকেনা , না ?
সরস পদ্য  না থাক , নীরস গদ্যও না ?
কি থাকে তবে ?
অহর্নিশ ভালো হোক ভাবনায় মোড়া ,
ভীরু কুণ্ঠিত হৃদয় ।
যা দিয়ে সংসার অচলায়তনের ভার বওয়ানো যায় ,
আড়শি পড়শির নিরন্তর গঞ্জনা
মা বাবার দিবানিশি দুর্ভাবনার পাত্রী  বানানো যায় ,
কিন্তু ,
তা দিয়ে নরম রূপসী কবিতা রচনা ?
সুন্দরের ঐকান্তিক উপাসনা ?
নাহ , সম্ভব নয় !
সোনার পাথরবাটির বাস্তবতা নেই না !
বেশ ,
লিখোনা তুমি ,তোমরা কেউ ।
আমি লিখবো ,
আমার কাজলির শ্যামল যাপন কথা ,
অহর্নিশ অপমানিতা মেয়েটির
অকথিত যুদ্ধ জয়ের গাথা ।
অপঠিত দিনলিপির কয়েকটি
আলো আঁধারি পাতা ।
পড়ো কিন্তু ।

ভালোবাসা

এতো পথ পার হয়ে অক্লেশে ,
তোমাকে পেরোনো যাচ্ছেনা কিছুতেই !
এতো মানুষ দেখা হোলো নির্বিশেষে ,
তোমার চোখে চোখ রাখা যাচ্ছেনা কিছুতেই !
প্রথম শাড়ি জড়িয়ে দাঁড়ানো আয়নায় ,
তার চেয়েও শিরশির কাঁপন থাকে তাহলে !
এতকাল তানপুরা শরীর ছুঁয়ে আজ জানলাম ,
বুকের ভিতর উজান ওঠে হিয়ার একতারা টা বাজলে !
এই বুঝি সেই ,
ভালোবাসা !!
ইশ !
যাতা একেবারে !

পাপস্খালন

হৈমন্তিক কুয়াশায় শরীর জড়িয়ে ভোর ,
সুভদ্র বাবুর মোড়কে আলপথে আমি ,
একলাটি হাঁটছিলাম ।
ঘাড়গোঁজা কলম পেশা জীবন থেকে
আলগোছে দু চারটি দিন সরিয়ে
কোনও এক গণ্ডগ্রাম ।
সরষের সবুজ শরীরে হলুদ ওষ্ঠ ,
শিশিরে টলটল ।
তার গালিচায় একটি দেহাতি শরীর স্পষ্ট
লাবণ্যে ঢলঢল ।
দেখলাম !
কোনও নিমন্ত্রন ছিলনা মেয়েটির চোখে ,
তবু নিজেকে আমন্ত্রিত ভাববার হিলহিলে
সাধ হোলো !
আগ্রাসী চোখে উঁকি দিয়ে গেলো খাজুরাহো ।
মনের ক্যানভাসে ঝলসে উঠলো হেমেন বাবু ।
শরীর এগিয়ে গেলো !
নিজেকে দাহক ভাবতে ভাল লাগছিলো ,
ভোরের ভেজামাটি পোড়াতে চাইছিল
আশ্লেষ ইপ্সা !
আমার ভেতরের শীত ঘুম থেকে
দাঁত নখ শানিয়ে আড়মোড় ভাঙল
আসঙ্গ লিপ্সা !
আমিত্ব মুছে শরীর অবাধ্য ঘোড়া হোলো ।
হটাৎ
মুখের উপর যেনও চাবুক আছড়ালো !
"হেই দাদা গ ,ইত্ত ভোরে তু বাইরে ?
জাড় লাগবে তুর ,
ফিরে যানা কেনে ঘরে" ।
থরথর করে কাঁপলাম
ঝরঝর দুচোখ ভিজল
আমার দিকে অপাপবিদ্ধ চেয়ে
মেয়েটি মায়ের মতো হাসলো !
কুঁকড়ে যাওয়া আত্মা
বিবেকে অনুমতি চাইল ,
মেয়েটিকে একবার
দাদা হয়ে বুকে নি ,
লুকনো সব গ্লানি
গঙ্গায় ধুয়ে নি ।
আবার মানুষ হয়ে
প্রিয় মানুষী টি আঁকড়ানোর
যোগ্যতা টুকু চেয়েনি ।
কিন্তু ও মেয়ে তো চলে গেলো ।
পাপস্খালন হয়নি পুরোপুরি !

যাতা!

কলম ,
তুমি বুঝি আজ কবিতা লিখবে ?
বেশ তো লেখো ,
এ আর কতো কঠিন হবে ?
ও হ্যাঁ শোন ,
নীল যন্ত্রণায় জারিত তো তোমার নরম গোলাপি অস্তিত্ব ?
প্রতি আখরে ওগরাতে পারও গভীর গহন বেদন ?
ক্ষমতা রাখো নিজেকে বিকিয়ে হতে নিঃস্ব রিক্ত ?
মহাকাল যে পরখ করেই কিনবে তোমার একান্ত লেখন ।
একটি কবিতার জন্মে সইতে হয় সহস্র প্রসব চিৎকার !
একটি কবিতা জন্মাতে নিংড়াতে হয় হাজার পুরুষকার !
কবি কিন্তু পুরুষ হয়না , কবি হয়না নারী ।
কবি অর্ধনারীশ্বর , প্রকৃতি পুরুষে জড়াজড়ি !
কবি কিন্তু বড্ডও একেলা ,
টিলার ঘর তার নেই প্রতিবেশী ।
সুখ দুঃখের তীব্র আবেশে
একাই থাকা আজন্ম আবেশি ।
সংসার যখন জড়িয়ে থাকে
আচার বিচার ব্যসন ,
কবি তখন ভূমার মাঝে
বিরাট দিগ্ বসন !
তুমি যখন সুখ কে গড়ো
অভিজাত ছুৎ মার্গ ,
কবি তখন পাগলা পাগলী
ফুটপাথই তার স্বর্গ !
এবার বলো , লিখবে কলম
দু একখানি কবিতা ?
কি আর এমন ব্যাপার এতে ?
কবি তো কবিতাই ,
যাচ্ছেতাই যাতা !

বলোনা!

আজ হটাৎ সব কালির দোয়াত গুলো শুকিয়ে গেলে কেমন হয় ?
কিম্বা আমার পৃথিবী থেকে সব কাগজ গুলো হারিয়ে গেলে ,কেমন হয় ?
নিজের অস্তিত্ব হৃদয়-মস্তিস্ক থেকে সরিয়ে নিলে কেমন হয় ?
সবার সব প্রত্যাশা আমার উপর থেকে উঠে গেলে , কেমন হয় ?
ভিতর কয়েদ পাগলী টাকে এক্কেবারে ছেড়ে দেবো ,
দুই পা টেনে অকারনে ঘাসের উপর শুইয়ে দেবো ,
বৃষ্টিতে গা ধুইয়ে দেবো ,
জোছন ভেঙে মল পরাবো ,
একমুঠো জুঁই বকুল এনে , উলঝুল চুল বেঁধে দেবো ।
মাপা কথার ঠাস বুনোট টা একটানেতে ছিঁড়ে ফ্যাল ,
পাগলী রে তুই দামাল পায়ে মনোভূমি টা চষে ফ্যাল !
নতুন করে বীজ বুনে আজ মনের গর্ভ ভরিয়ে দেবো ,
তৃপ্ত মাটির শস্য নিয়ে জিয়ন মরণ পাল ওড়াবো !
সেই দিন সেই সন্ধিক্ষণে কবিতার নবজন্ম হবে ,
আভিজাত্যের ঠুলি ভেঙে সব মানুষের প্রাণ জুড়াবে !
আমার কবিতা মানুষ হবে !
একী !
আরেকটা ব্যর্থ কবিতার শরীর ই তৈরি হয়ে গেলো যে !
সর্বজ্ঞের মমি কাঠামে প্রাজ্ঞ অহং ই রয়ে গেলো যে !
কিছুই তাহলে আজও হলনা ।
আর কবে হবে ?
কবি ,
বলোনা !

শক্তি টুকু

চারপাশে মৃত সম্পর্কেরা প্রেতের মতো দাঁড়িয়ে !
লালসা কীর্ণ চোখগুলো সব উদগ্র জিহবা বাড়িয়ে !
এটুকু বুঝতে এতোগুলো দিন পার !
দাঁত নখ গুলো লুকোনো ছিল যে মিথ্যে স্নেহের উষ্ণতায় !
জান্তব ক্ষুধা গুড়ি মেরে ছিল কুলিশ কপট তঞ্চকতায় !
বিশ্বাস , এটা কি তোমার হার ?
ভেবোনা তুমি , পথ চলা তবু বন্ধ হবেনা জীবনের ।
মানুষের তরে মানুষের খোঁজ দীপশিখা জ্বেলে মরমের ।
এই যে সময় আত্মদীপ হবার !
এ আঁধারের পঙ্কিল পথ , তারি জ্যোতিঃ তেজে চলে যাবো আমি পেরিয়ে ,
আজো আমি মানি , এ পথের শেষে এক ধ্রুবতারা আমার জন্য দাঁড়িয়ে !
পথ টুকু পেরোনোর শক্তি টুকু দিও মহাকাল ।

দেবে কি?

আমি একটু একা থাকতে চাই ।
সভ্যতা কীর্ণ মানুষের জঙ্গলে খোলা নিরালা চাই ,
আমি একটু একা থাকতে চাই ।
পালামৌ গিরিডির উদার পাহাড়ে একা একা হাঁটতে চাই ,
মাঠ ভরা ধান ক্ষেতের আঁচলে শরীর ডোবাতে চাই ,
দিগন্তবিস্তৃত সাগরের জলে একা সাঁতার দিতে চাই ,
আমি একটু একা থাকতে চাই ।
দূরাগত সাঁওতালি ঢোলের তালে তালে মন টা দোলাতে চাই ,
জীবনানন্দের কবিতার আড়ালে হৃদয়ের না পাওয়া গুলোকে একবার দেখতে চাই ,
সাফল্যের সিঁড়ি টপকানো রোবটের দলে দলছাড়া মানুষ হয়ে বাঁচতে চাই ।
আমি একটু একা থাকতে চাই ।
সমাজ ,
তুমি এই "মেয়ে" টিকে অনুমতি দেবে কি ?

শেষ হয়?

পেন্নাম হই গুণীজনেরা ,
অলীক দেশের থেকে মোরা ,
আসলুম এক গল্প বলতে ।
ব্যাঙ্গমার সেই ঝাঁপি খুলতে ।
কোন সে দেশের কোন সে গাঁয়ে ,
থাকতো সে কোন ছোট্ট ছায়ে ,
সহজ সরল মায়ে-ছাঁয়ে ।
"ভাত খা খোকন" ,
"আগে তুমি গল্প বলো" ।
"কোনটা মানিক ?"
"রাজা রানি আর দত্যি দানো ।
গল্প বলো মা গো তুমি গল্প বলো" ।
মা গেঁথে যায় কথার মালা ,
সামনে আমানি ভাতের থালা ,
খোকনের চোখে উজিয়ে ওঠে
রূপকথার কোন নরম আলো ।
ঘোড়া ছুটিয়ে
(নাকি পক্ষীরাজ !)
মাঠ পেরিয়ে
(নাকি তেপান্তর !)
খোকন যে যায়
(উঁহু , রাজপুত্তুর !)
এই পর্যন্ত ঠিকই ছিল জানেন ,
গোল টা বাঁধল ঠিক এর পরেই ।
রাজা রানি রূপকথা তেই থাকেন ।
এটা খোকন মানে না কিছুতেই ।
কঠিন মাটি
বৃদ্ধ মা টি ,
মালিকের হাতে
চড় চাপাটি !
এসব নিয়েও খোকন জাগে ,
সূর্যোদয় আর অস্তরাগে ।
অদ্ভুত এক বিশ্বাস তার ।
পথ শুধিয়ে ব্যঙ্গমার ,
পৌঁছবে সেই আলোর দেশে ,
সব পেয়েছির তৃপ্তি শেষে ।
পথ টা কঠিন জানে সে তা ।
খুঁজে নিয়ে মনের মিতা ,
চলবে খোকন উজান বেয়ে ,
রাজকন্যে আসবে নিয়ে ।
দিন বদলের স্বপ্নে বিভোর ,
দৃঢ় প্রত্যয় বুকের ভিতর ।
চলছে খোকন চলবে মানিক ,
অস্থির কাল পেরোবেই ঠিক ।
রাক্ষুসে কোন প্রবল ঝড় ,
বুক কাঁপে এই ব্যাঙ্গমার !
কি হবে বলুন তো ?
এ গল্প কি শেষ হবে ?
আদৌ কি শেষ হয় ?
কখনো ??

একা লাগে

একা লাগে বুঝি ?
লাগে , মাঝে মাঝে ।
শীতের বিকেল গুলি,
বিষণ্ণতায় সাজে ।
চায়ের দোকান ,
গলির মোড় ,
ধোঁয়াশা দিয়ে ঢাকা ।
পথের ওধারে
ছোট্ট যীশু ,
মা ছাড়া
আজ একা !
আঁতলামো নয় !
শিরশিরে ভয় !
চারিয়ে যাচ্ছে শরীরে ,
কোনোদিন যদি
আমার ছেলেও
দাঁড়ায় পথের ওধারে !
সান্টা তো আসে শুধুই এধারে
কেক ক্যান্ডেল রাত্রি !
সব আলোজ্বলা খুশি তো এধারে ,
ওদিক , আজও
আলোর পথযাত্রী !
ওদের সাথে ,
সেই গল্প টা সাথে নিয়ে
আজও আমি পথ হাঁটি ।
"একটি রুশী মেয়ে আর তিনটি দেশলাই কাঠি ।"

উত্তরকালের জন্য

আমি একটা ঘর খুঁজছি ।
সারা সমাজ টা উল্টেপাল্টে দেখছি ,
একটা ঘর খুঁজছি ।
মনের প্রসন্ন ব্যাপ্তির মতো জানালা
হৃদয়ের কোমলতার মতো শার্সি দিয়ে ঘেরা
একটা ঘর খুঁজছি ।
কৈশোরের প্রথম শিহরণের মতো হাওয়ায় দোলা
তারুণ্যের দোলাচলের মতো দরজাওয়ালা
একটা ঘর খুঁজছি ।
ঘর টা ভরা থাকবে আমার আমিত্ব দিয়ে ,
অকেজো আমার লেখা কবিতা গুচ্ছ দিয়ে ,
আমার প্রাত্যহিকতার কঠোর কোমল স্পর্শ দিয়ে ,
এমন একটা ঘর খুঁজছি ।
 যেখানে আমার ক্লান্ত শ্রান্ত ঘামে ভেজা শরীর টা
আমারই স্পর্শে উজ্জীবিত হবে ,
যেখানে ভোর গুলো বিলায়েতের আহির ভৈরবের সাথে
সুরে তন্ময় হয়ে বাজবে ,
মধু রবির সাথে সুকান্ত শামসুরের যেখানে
সহাবস্থান হবে ,
বিকেলের ম্লান আলোয় বেহালার স্নিগ্ধ সুন্দরতা
গহরজানের ঠুংরির সাথে মিশে নতুন শরীর পাবে ,
এমন একটা ঘর খুঁজছি ।
যেখানে আমি হাসবো খেলবো নাচবো গাইবো
বন্ধুদের নিয়ে হুল্লোড়ে রাত দিন এক করবো ,
আবার কখনো একেবারে একা হয়ে বসে থাকবো ,
আমার প্রথম প্রেমিক কালপুরুষের দিকে চেয়ে চেয়ে
পাতা ঝরানোর দিন গুলোর জন্য অপেক্ষা করবো ,
এমন একটা ঘর খুঁজছি ।
খুঁজেই চলেছি ,
খুঁজতেই থাকবো ,
আমি বা আমার উত্তরকালের জন্য ।

বুড়হা বাবা

কোপাই এর ধার ঘেঁসে হাঁটছিল মেয়েটি ,আনমনা ।
এক আকাশ মেঘ করেছে ।
হটাৎ চোখে পড়লো একটু দূরে তিনটে ছাগল নিয়ে চলেছে সে ,
আমাদের রবিবাবুর কৃষ্ণকলি , হরিণ নয়না ।
মেয়েটি ঃ এই যে , শুনছো ?
কৃষ্ণকলি ঃ হামাকে ডাকছিস তু দিদি ?
মেয়েটি ঃ হ্যাঁ , তোমাকেই , কোথায় চলেছ ?
কৃষ্ণকলি ঃ কুঁথাকে আর যাবো ? ঘর কে যাচ্ছি ।
মেয়েটি ঃ আমার সাথে একটু কথা বলবে ? সেই কতকাল ধরে তোমায় খুঁজছি !
কৃষ্ণকলি ঃ এখন তুর সাথে কথা বুলতে পারবোক লাই । দেখেছিস কিমন হয়েছে আসমান টো ! হেই মুংরি হেই সাংরা চল চল হেট হেট ।
মেয়েটি ঃ প্লিজ , একটু দাড়াও কৃষ্ণকলি !
কৃষ্ণকলি ঃ (বিদ্যুৎ গতিতে ঘুরে গিয়ে ) কি বুলে ডাকলি তু ? কিস্টোকোলি ? উ তো হামার লাম লয় ! হামার লাম সমরী , হামার মরদ বুধুয়া ।
মেয়েটি ঃ হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি সমরী । কিন্তু কি জানো , তোমাদের এখানে একজন থাকতেন , জোব্বা পরা দাড়ীওয়ালা বিরাট পুরুষ । তিনি তোমাকে কৃষ্ণকলি নামে ডাকতেন ।
কৃষ্ণকলি ঃ তু কার কথা বুলছিস ? বুড়হা বাবা ?
মেয়েটি ঃ বুড়হা বাবা !!
কৃষ্ণকলি ঃ হ্যা। বুড়হা বাবা । হেই যেখানে ইত্তো বড়ো বড়ো বাড়ি , ইত্তো বড়ো বড়ো লোক , হুই তো বুড়হা বাবার  থান । হামি চিনি উকে ।
মেয়েটি ঃ ঠিক বলেছ ।ওনাকে চেনে সবাই । সব্বাই ।
কৃষ্ণকলি ঃ (হেসে) লারে দিদি , তুরা উকে চিনিস লাই । তুরা উর লামে ইখানে এসে পয়সা দিয়ে হামাদের লাচ দেখিস , হামাদের আদুল গায়ের ফোটোক তুলিস , তুরা উকে চিনিস লাই ! উ হামাদিগের বাপ বটে , বন্ধু বটে , আর তুরা ! কেবল খেতে আসিস । মহুয়া খেতে , তাড়ি খেতে , হামার মতন মেয়্যা দের শরীর খেতে ।আর সেই সাথে একদিন তো উর মিডেল টো ভি খেয়ে লিয়েছিস ! হেই গ বুড়হা বাবা !
মেয়েটি ঃ তুমি জানো সে সব ?
কৃষ্ণকলি ঃ কিনো জানবোক লাই ? হামার ঘরে তুয়ারা সিঁদ দিবি আর হামি জানবোক লাই !
মেয়েটি ঃ ঠিক বলেছ ।যাক, তুমি জান কৃষ্ণকলি ওহ না সমরী , তোমাকে নিয়ে তোমাদের নিয়ে তোমার বুড়হা বাবা কতো অপূর্ব কবিতা লিখেছেন ।
কৃষ্ণকলি ঃ সিটো হামি শুনছি বটেক । তুয়ার মত বিট্যি ছেল্যা বেট্যা ছেল্যা রা এসে বুলে হামাদের । কিন্তু দিদি , একটা কথার জবাব দিবি তু ? বুড়হা বাবা হামাদের ইত্তো ভালবাসলো , ইত্তো মান দিলো , আর তুরা উকে ভালবেসে হামাদের লষ্টো করিস কি করে ? ভাত লাই , কাপড় লাই , লাজ সরম টো ভি কেড়ে লিয়ে লিস কেনে ?
মেয়েটি ঃ কৃষ্ণকলি ! এভাবে বোলোনা তুমি ! অভিশপ্ত হয়ে যাবে গোটা উচ্চবর্গ সমাজ !
কৃষ্ণকলি ঃ  ডর লাগলো দিদি ? ইত্তো পাপ জমছে রে! সাজা ভি পেয়ে যাবি । বুড়হা বাবার সাজা ! ডর কে কি করবি ? তু ঘর কে যা । হামি ভি যাই । জায়গা টো ভাল লয় সাঁঝের সময় । মেয়্যা ছেলা আছি না দুজনে ।
মেয়েটি ঃ আপনা মাঁসে হরিণা বৈরী !
কৃষ্ণকলি ঃ কি বুলছিস তু বটে ?
মেয়েটি ঃ নাহ , কিছুনা । তুমি যাও সমরী , তোমার বুধুয়ার কাছে ফিরে । তোমাকে কৃষ্ণকলি নামে ডাকবার অধিকার হারিয়েছি আমরা । এখন শুধু বুড়হা বাবার দেওয়া সাজার প্রতীক্ষা !

ভালোই করেছো

তোকে একটা ফোন করি , কাল ?
আ-বিচ্ছেদ জমা দিস্তে দিস্তে অভিমান
বলছে ,
" আমায় উপুড় চুপুড় ঢাল "।
আজ সায়াহ্ন বারিষ মাখালো , জানিস ?
অসহ্য আদরে পুড়িয়ে লোমকূপ
বললো ,
" এমোনই আমার সোহাগ-জলে বাঁচিস "।
ইদানিং তোর কোথায় যেনও থাকা ?
সেখানেও কি এমোনই কাউকে জড়িয়ে
বলবি ,
" আজ আঁকা মানে তোর বুকে মুখ রাখা " ।
গহীন ভাসছে
আ-শরীর এক নোনতা জলজ বিন্দু ,
দরদী গাইছে
" ঠিকানা না রেখে ভালোই করেছো বন্ধু " ।

শেষ আশা

দিন গুলো বেশ ছিল !
সুয্যিমামার আলোয় ভরা
টাপুর টুপুর বৃষ্টি পড়া
টুকুস টাকুস শিউলি ঝরা
দিনগুলো , বড়ো কোমল ছিল ।
প্রজাপতির ডানায় ভর দেয়া
অকারণ হাসি কবিতায় মোড়া
দিনগুলো , স্বপ্নের মতো ছিল ।
প্রথম ঘড়ি পাওয়া
প্রথম শাড়ি পরার দিনগুলো ,
কিম্বা তারো আগে
পেনসিল কামড়ে গবেষণা
সবুজ পাতা গুলো হটাৎই গোলাপি কাঠি আইসক্রিম হয়ে গেলে কেমন মজা !
সেই দিনগুলো ।
রাজপুত্তুরের সোনার কাঠি থেকে আনন্দমেলা হয়ে ফেলুদা টেনিদা
দিনগুলো , বড়ো নরম ছিল ।
বড়ো ইচ্ছে করে আবার সেই শৈশব
তার অজস্র কলতানে হোক সরব ।
প্রথম বড়ো হওয়ার সেই কৈশোর
তার বিচিত্র অনুভবে হোক মুখর ।
কিন্তু ,
তাকে তো আর পাবোনা কোনোদিনই !
যা গেছে তা গেছেই !
তবু যদি বুকের চিলেকোঠায়
তাকে একবার জাগানো যায় ,
বেঁচে যাবো আমরা !
আজকের এই স্বার্থদীর্ণ পঙ্কিল রাজনীতিকীর্ণ দিনে
সেই স্বপ্নময় অথচ সুস্পষ্ট দিনগুলোই ভরসা ।
না-মানুষের এই গড্ডালিকা স্তব্ধ করতে
তোমার আমার সবার কাছে সেই যে শেষ আশা !

সাধ টুকু

কতদিন কতদিন ।
দাঁড়িয়ে আছি এই ধু ধু প্রান্তরে ।
পাহাড় পাথার বনানী ।
কত সে দিবস যামিনী ।
শোভন শোভা বাহ্যিক ।
হা হা রিক্ততা ভিতরে ।
নিবিষ্টতা কই ?
কই অনুপম কর্ম তৃপ্তি ?
শুধু অস্থিরতা গ্রাস করে আছে অন্তরলোক ।
তারি প্রতিবিম্ব দ্যুলোক ভূলোক ।
আপন হৃদ শিলায় খচিত লিপির
পাঠোদ্ধারই যে আজও হলোনা !
মহেঞ্জোদারোর বুকের ভাষা
অনুরণিত হবে কি করে ?

নদীটির খুব কাছে আজও তো দাঁড়ানোই যায় ।
যদি যেতে পারও ফেলে রেখে
সবটুকু অতীতের দায় ।
নদীটির সাথে আজও তো হতে পারে ভাব বিনিময় ।
যদি অঞ্জলি ভরে নিয়ে আসো অপাপবিদ্ধ সময় ।
নদীটির বুকে আজও তো মিশে যাওয়া যায় ।
চরাচর নতুন আশ্বাস পলি তে সাজানোর
সাধ টুকু যদি রয়ে যায় । 

আর এন টেগোর

দাঁড়ান !
কোথায় চললেন ?
জানি এভাবেই চলে যান আপনি ,
এক লোক থেকে অন্য লোকে ,
এক দেখা থেকে বিভিন্ন দেখায় ।
এক ধৈর্য পেরিয়ে আরেক স্থৈর্যে !
কিন্তু ,
আজ তো যেতে দেবনা আপনাকে ।
একটুক্ষণ রইলেনই নাহয় আমার কাছে ।
বিশ্ব কবি , কবি গুরু , গুরু দেব ...
নাহ !
এদের কাউকে চাইনে আমার ।
শুধু রবি বাবু হয়ে দাঁড়ান একটি বার ...
এতো শ্রান্তি কেন আপনার চোখে ?
এভাবে ঝুঁকে দাঁড়ালেন যে !
ওহ !
বিশালত্বের বিরাট জোব্বায় ঢাকা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তো নন আপনি ।
আজ তো কেবলই রবি , রবি বাবু হয়েছেন আপনি !
বৌঠানের অসহায় দেওর ,
ছুটির অভিযুক্ত বর ,
চিন্তিত বাবা বেলি মীরার ।
ডি এন টেগোর নামক এক কঠিন পুরুষের পরিবার তন্ত্রের
এক শান্ত অনুগত সামন্ত ! ...
কতো কিছু সইলেন আপনি ।
আরও কতো সইবেন কি জানি !
চূড়ান্ত অবমাননা থেকে উথলে ওঠা আদিখ্যেতার সন্মাননা ! ...
সরি ,
প্লিজ ডোন্ট টেক ইট আদারওয়াইজ মিঃ টেগোর ।
যাক ,
আজ তো আপনার জন্মদিন ।
আমি কি দি আপনাকে ?
গান গাইলে শুনবেন ?
ভুল সুরো হবো !
কবিতা বলতে দেবেন ?
শব্দ ভুলে যাবো !
তবু গাই , কেমন ?
তবু বলি ? ...
ওই যে ,
ওরা সব এসে পড়লো আবার !
আপনাকে খোলস বন্দী করে
ভগবানের বসন চড়িয়ে
নিয়ে যাবে এবার !
রাজা আপনি ।
কতো বহুমূল্য বরমাল্যে উঠবেন ভরে ,
অকিঞ্চিৎ রক্তকরবী তে আপনার কাজ নেই ।
যান চলে । ...
শুধু একটা জবাব যান দিয়ে ।
নিজের মতো করে আপনাকে কেনও পেতে পারবো না আমি ?
কেনও আপনাকে আড়াল করে রাখে ওইসব
বিজ্ঞ প্রাজ্ঞ অভিজ্ঞ সংস্কৃতি সেনানী ?
কেন পারলেন না নিজেকে প্রতিটি হেটো মেঠো অস্তিত্বে ছড়াতে ?
কেনও কুক্ষিগত হয়ে রইলেন এক আপাত পরিশীলিত উচ্চ বর্গের হাতে ? ...
শুনুন শুনুন ,
মাপা সুর বাঁধা বুলির জগত থেকে এক ঝটকায় আপনার হাত দুটি ধরে মারি এক টান ?
নিয়ে যাই হটাৎ খুশি অকারণ হাসি অনাবিল আনন্দের দেশে ?
সহজ কথা সরল সুর সহজিয়া প্রাপ্তিতে ভরে উঠে লিখবেন ,
আজও যা লেখা হয়নি ।
আজও যে সুর গাঁথেন নি ।
নিজেকে খোঁজার পালা এই দেড়শ বছরেও কি শেষ হল রবি বাবু ?
আদৌ কি হয় ?
যাবেন ? ...
চুপ করেই রইলেন ?
এনিওয়ে , হ্যাপি বার্থডে টু ইউ মিঃ আর এন টেগোর ।
এভাবেই ভাল থাকুন আরও দেড়শ বছর !!!

ভাবনায়

কুসুম কুসুম বৃষ্টি ...
উস্তুম খুস্তুম হাওয়া ...
নীল নীল আঁধার ...
একফালি বারান্দা ...
একা একা আমি ...
একা কি (?) ...
একটা ভাবনায় জড়িয়ে আছে চিন্তা সূত্র ।

"মন টা সমুদ্রের মতো হলে বেশ হয় । জোয়ারের সময় জানা অজানা সব নদী নালায় নিজের যা কিছু ঐশ্বর্য বিলিয়ে দেওয়া আর ভাঁটার টানে তাদের সবার দুঃখ নিজের বুকে তুলে নেওয়া ।" ...

রাধা নই

আলতা পাতা বকুল গাঁথা নিশীথ কাজল সই ,
কাঁচপোকা টিপ রঙিন চুড়ি সাজিয়ে দে না , ওই ।
আসমানি পাড় দুধলা জমিন জড়িয়ে নিয়ে কই ,
বঁধু তুমি ডাকবে ভেবেই কুল প্লাবিয়ে বই ।
অঝোর বারিষ ঈশানী ঝড় ভাল সাজিয়ে রই ,
অভিসার গুণ করল আমায়
কিন্তু ,
রাধা তো আমি নই !!

ভাঙলো পারদ

বড়ো ইচ্ছে তোমাকে দেখি ,
মেঘ থইথই অক্ষিগোলক ।
জল বিছানো মাস্কারা রা ,
তৃষ্ণা কেবল আমারই হোক ।

বড়ো ইচ্ছে তোমাকে শুনি ,
ট্র্যাফিক জ্যাম এ কর্ণকুহর ।
বেজেই চলে আহত নাদ ,
চুপকথারা বিষাদ বিভোর ।

বড়ো ইচ্ছে তোমাকে ছুঁই ,
দু হাত ভরা রসুই রসদ ।
তুমি চলে যাও জেব্রা মাড়িয়ে ,
গলিতে আজ ভাঙল পারদ !

তুমি

তুমি আমার ভোরের আবছায়াতে
বইয়ে দাও শান্ত শীতল হাওয়া ,
তোমায় যেমন পাই একেলা আমি ,
আর কারোরই হয়না তেমন পাওয়া ।

তুমি আমার ব্যস্ত দিনের মাঝে
গুছিয়ে রাখো তৃপ্ত অবসর ,
তোমায় আমি যতোটা নিবিড় ভাবি ,
এতখানি তো কেউ ভাবেনা আর ।

তুমি আমার শ্রান্ত সাঁঝের বেলায়
ফুটিয়ে তোলও স্বপ্ন প্রসব দিন ,
তোমার কাছে আমি যতোটা ঋণী
কারোর খেরোয় জমেনি এতোটা ঋণ ।

তুমি আমার নিকষ কালো রাতে
জুটিয়ে আন অলীক আলোর ঢেউ ,
তোমার কথা জানি কেবল আমি ,
আমার মতো আর জানেনা কেউ ।

ধর্ষিতা লাশ

দশানন-চিতার মতো জ্বলা প্রতি পল ।
ছাইয়ের রঙে তো লেখা থাকেনা যন্ত্রণা ।
পাশবিক শব্দটা নেহাতই জোলো আজকাল ।
প্রতি নিমেষ স্রেফ যোনি আগলানোর তাড়না ।

বিশ্বাস ভয় পায় নিজেকেই সবচেয়ে বেশি ।
আদরের মানে বড়ো বড়ো নখওলা হাত ।
সুললিত গ্রীবা ঝুমকো ঝিকানো হাসি ।
মুহূর্তে বদলে হয় নারী থেকে ধর্ষিত-লাশ ।

চরৈবেতি

যে শব্দ গুলো তে আমি আদপে বিশ্বাস রাখিনা ,
অক্ষরের সেইসব জঞ্জাল আমি কক্ষনোই লিখিনা ।

চলে যেতে চাইলেই তুমি চশমার কাঁচে রাজপথ ,
উইন্ড স্ক্রিন আটকাবেনা সেই বৃষ্টি রাতের শপথ ।

যে সুফলায় রোপিত আস্থা আমি বাঁচিয়ে তুলতে পারিনি ,
ওই ভূমিটির চির বন্ধ্যা চরিত আড়াল করতে শিখিনি ।

চুপিসারে যদি আসে প্রতিরাত হাড়হিম একাকীত্ব ,
উষ্ণতা দেবে নিশ্চিত জানি ঋজু এই অস্তিত্ব ।

যে আগামীর গহ্বরে কাল প্রসব কি হবে জানিনা ,
অদেখা সে পথে চরৈবেতি মন্ত্র টা আমি ভুলিনা ।

দ্বন্দ্ব সমাস

আমি -
"তোমায় আর কোথায় খুঁজি বল না ?
তোরঙ্গ বটুয়া দেরাজ আলনা ,
তেতলা ছাদ কলঘর আঙিনা ,
তোষক ফ্রেম জাফরি দোলনা ,
তন্নতন্ন খোঁজাও দিশা পেলনা !
কোথায় চলকে হারালে , আনমনা ?"

সে -
"তোমার আবার শুরু আমায় খোঁজা ?
সেই যে বাঁধলে চাবির গাছা ,
সেই যে কুচোলে ধুতির কোঁচা ,
সেই যে ছিঁড়লে চিঠির গোছা ,
সেইদিনই যে শুরু গো আমাকে মোছা !
আজ ফেরাবে আমায় , আবাল্য বোঝা ?"

সখা -
"রাতের বেলা একলা ছাদে কি ওঠে ?
রান্না বান্না চুকিয়ে এসো তো খাটে ,
রাজ্যের কাজে স্বামী যে কেবলি ছোটে ,
রমণী তবেই সুখ টা তোমার জোটে ,
রাগের ঠ্যাকার তোমার একারই বটে !
রসের দুকলি ফোটে না তোমার ঠোঁটে ?"

দিন কেটে যায় এভাবে প্রতিটি বাসায়
দ্বন্দ্ব সমাস আমি সে ও সখায় ।

ঠিকানা হীন

একটা চিঠি আসার কথা ছিল ।
আসেনি , এখনো ।
কতো কিছু এলো গেলো
কতদিন কেটে গেলো ,
কিন্তু ও এলো না ।
...

"ও" মানে সেই , সেই চিঠি টা ।
যেটা এসে পড়লেই -
কুয়াশার পর্দায় টান পড়বে
বসন্তবৌরি গান জুড়বে
ধানের গর্ভে দুধ ভরবে
অষ্টমী তে হারানো চোখ ফিরবে ।
এমন আরও কতো কি ঘটে যাবে , আবার
হয়তো বা এমত কিছুই ঘটবে না ,
কেবল কেউ কেউ সম্পূর্ণা হয়ে উঠবে ।
কিম্বা হয়তো আমি বড়ো তৃপ্তি তে মারা যাবো ।
...

চিঠি টা কবে আসবে ?
এসে পড়লেই তো পারে ,
ও এলেই -
ভরা বিলে ডুব দি
জুঁই ফুলে খোঁপা দি
জোড়া থালে ভাত দি
হয়তো বা হয়ে উঠি
আপামর আনন্দী ।
...

আদৌ আসবে তো ?
চিঠি টা ?
আমরা ঠিকানা হীন
নই তো ?

খেজুরে আলাপন

অনেক কিছুই আজকাল আর মনে পড়েনা
দাগ কাটেনা ।
কতদিন হয়ে গেল তোমায় আর চিঠি লিখিনা ।
তুমি থাকবেনা !
সইতেই পারবনা স্থির বিশ্বাস চলকেও তো গেলো বহুদিন
দিব্য তো সয়ে বা সইয়ে নিচ্ছি কত উথাল পাথাল রাত্রিদিন ।
তোমার নন্দিন প্রৌঢ়া হয়ে গেছে রঞ্জন !
সব কথোপকথন ই আজ খেজুরে আলাপন ।

পথ বাকি যে!

মুখোমুখি দাঁড়িয়ে আছি ।
পায়ের নিচে তিরতির কাঁপছে আত্মবিশ্বাস ।
কড়ে আঙুলটা জড়িয়ে আছি ।
পিঠের পিছে টলমল দুলছে অতীতচারীলাশ ।
...

ঝড় উঠছে এক তীক্ষ্ণ তীব্রতায় ।
শকুন গিলছে চরাচর কে ডানায় ।
গাছ গুলো উদ্বাহু পিপাসায় ।
অশনি সপাটে চাবুক কে আছড়ায় ।
...

চোখের ভিতর চেয়ে আছে ।
ভ্রূ ভঙ্গি ঠিকরে বেরোচ্ছে জান্তব ঘৃণা ।
লজ্জা বস্ত্র মাড়িয়ে আছে ।
গাঢ় পূত গরল ওগরাচ্ছে দীপ্য রসনা ।
...

জল দাও
জল দাও
জল দাও বাসবদত্তা ।

নিজের সামনে দাঁড়িয়ে মিথ্যাচার চলেনা সন্ন্যাসী ।

বহু পথ পেরোতে হয়
জল আনতে হলে ।
আরও পথ পেরোতে হয়
জল দিতে হলে ।

আমারও ,
এখনো অনেক পথ বাকি যে !!!

ঘুমাও

লুকোনো থলিটায়
গুটিকয় বকুল বীজ - কিতকিত এর গুটি - পায়রার আধ খাওয়া গম
থেকে যায় ।
সেখানে হাত রাখলেই
নিটোল এক অঙ্গীকার রাখা হয়ে যায় ।
কখনো আপাত অনিচ্ছায়
কখনো বা ইচ্ছে-অসাবধানতায় ।

শূন্যস্থান ভরাট হয়
চক্রবাল রঙ পায়
আমি একা বসে থাকি
বিকেলের বারান্দায় ।

ঘুমাও বাউন্ডুলে , ঘুমাও এবার ।

শেষ দেখা

কাঁচের ওপারে ছুটছে সিক্ত গতি,
সওয়ারী সিল্যুয়েট আঁধার আলোর বিভেদে,
লাল-নীল জলের ভিতর দেখার ঈপ্সা,
পরাভূত হয়ে গড়িয়ে যাচ্ছে সখেদে।

জলছবি লাখ গড়ছে একেক লহমা,
আঙুলের খেলা লিখছে গোপন নাম,
কাঁচের গায়ে জমছে বিধুর স্মৃতি,
সহস্র পল আজ একসাথে পেরোলাম।

সখ্যতা সেতো সামাজিক বেশবাস,
হৃদয় তো জানে টান এর প্রকৃত রূপ,
ভেজা দিন জুড়ে কতো হাসি পরিহাস,
দুজনেই জলবিন্দুর মতো নিশ্চুপ।

একটা প্রশ্নে আছাড়ি - পিছাড়ি মেঘ,
বৃষ্টি বলছে বাজ উত্তর জানে হয়তো,
পথ ফুরচ্ছে তীব্রতম বেগ,
এই দেখাই শেষ দেখা নয়তো?

ললাট লিখন

এক একটা সন্ধ্যে গড়ানো রাত,
বাড়ায় কাঙ্ক্ষিত পল ভরা হাত।
এক একটা ঝিকিমিকি আলোময় দিন,
ভরায় সত্যি মিশেল সাধ রঙিন।
তুমি পারো ও বটে!
ললাট-লিখন।

পারলে কই?

আমাকে স্পর্শ করেছো লাখো লাখো দণ্ড।

দেহের গলিতে তন্ত্রীতে
প্রতি খাঁজ সন্ধিতে
বহুবার চলমান হলে তুমি,
তোমার দার্ঢ্য।

বিজিত উপত্যকায় প্রোথিত হয়েছে বিজয়ীর নিশান,
পেষণ- স্পর্শিত হয়েছে মুঠি বদ্ধ পরাভূত মাটি,

কি ভীষণ শ্লাঘা তোমার!
কি তীব্র তেজবান অহং তৃপ্তি!
করায়ত্ত করার কি অমোঘ দুর্বার শান্তি!

কিন্তু,

এক অনুপল ও আমাকে তুমি ছুঁতে পারলে কই?

বুঝছো?

মেঘলা গাছে আর্দ্র নিঝুম বাস,
বৈঠা চোঁয়ানো মিহি মহুল শ্বাস,
আমার জনমভোর স্রেফ ভালোবাসার ত্রাস।

গর্ভিণী ছাগ এক বিকেল আলোয় সই,
মলমলি কালোয় গা চুবিয়ে রই,
আমি পাঁজর তলে নেই-ভালোবাসা কে বই।

রাত জমছে আলতো আড়াল হাতে,
ঘুম মাখছি অলীক রক্তপাতে,
আমায় নিয়ে অ-ভালোবাসা টা মাতে।

তোমায় বড্ড দেখতে ইচ্ছে করছে গো...
বুঝছ?

মেরী

মেরী,
ভালো আছো তো?
২০-২১ বছর পার হল, তাইনা?
ঋজু দেহে রাজহংসীর মতো হেঁটে যাও আজো?
বয়স তো হল বেশ, আর বোধহয় পারনা...
জানো, আজো একটা বিষয়ে আমার প্রবল সন্দেহ,
রিনা ব্রাউন তোমায় দেখেই অমন দৃপ্ত অহং শেখেনি তো?...
মনে আছে,
পিটার এর সাথে ক্যারাম খেলার অছিলায়,
আসলে হৃদপিণ্ড গলায় নিয়ে দেখতে তো যেতাম তোমায়!
ভাই এর বন্ধু তাই তুমিও পাশে আসতে
কথা বলতে
চুল গুলো এলোমেলো
করে দিতে কখনো।
কেঁপে কেঁপে উঠতাম
চুইয়ে আসতো ভালোলাগা
লোমকূপে জেগে ওঠা অজানা আবেশ
হাফ প্যান্ট দিয়েই ঢাকতাম!...
লালদীঘির ওধারে কোথায় যেনও স্টেনো ছিলে।
প্রফেশান যাই হোক,
প্যাশান গান কেই বেছেছিলে...
তার জন্যই নাগো?
এক হোটেল গাইয়ের ভরসায়
ঘর ছেড়ে
কাজ ছেড়ে
চলে গেলে
বিদেশ বিভূঁই।
নামী সিঙ্গার হবার আশায়!
পড়ে রইল তোমার চেনা শহর
পড়ে রইল তোমার সুকুমারী অস্তিত্ব
পড়ে রইলাম আমি আমরা!
বেশ কয়েক মাস শুধু খোঁজ কোথায় কোথায়
কোনও খবর নেই তোমার,
তারপর জানলাম এদিক সেদিক কানাঘুষোয়
বিপর্যস্ত ছন্নছাড়া জীবন তোমার!
গান গাও তুমি
তবে সেটা তৃতীয় শ্রেণীর বার এ!
ঘর ও আছে একটা
তবে বাসিন্দা মা ছেলে!
কোলকাতা আসবেনা কোনোদিনও,
ফ্যামিলি একসেপ্ট করবেনা তো!
কুমারী মা যে!!!
বাঁকা চোখ
বিঁধানো দৃষ্টি
বেপরোয়া মুখ
বিকৃত বাক্যবাণ!
কারণ তোমার সন্তান
টম ডিক হ্যারি
জিসাস নয়!
এনিওয়ে, যেখানেই থেকে থাকো,
বেথেল কিম্বা ব্রথেল
মেরী ক্রিসমাস টু ইউ!!!
ভালো থেকো।
-আমি।

বৃষ্টি হবে

জানতো কাল বৃষ্টি হবে।

খড়ি ঘষা মুখের উপর
চলটা ওঠা চোখের গহ্বর
থেঁতলে যাওয়া বুকের কোটোর
অসহ আদরে ভিজিয়ে দেবে।

গোলাপি লাল হলুদ সবুজ
গুলাল আর ফাগের বান এ
অন্যদিনের আলতো পরশ
কূলপ্লাবী সুতীব্র হবে।

জানতো কাল বৃষ্টি হবে।

যূথ কাব্য

একাকীত্বের অর্থ টা কি জানো?
একাকী কি হয়েছ কখনো?

একলা হতে ইচ্ছে ডাকে, একাকী কিন্তু ভয়।
এক্কেবারে ঝুম দুপুরে একাকী হওয়া সয়!

একেকখানি বিকেল-মীড় একলা হতে সাধে,
একটি দুটি চড়ুই ঠোঁটে একতারা সুর বাঁধে।

একলা আর একাকীর এই দ্বন্দ্ব টানাপোড়েন
একে দিয়েই যাপন কবি যূথ-কাব্য গড়েন।

বাবুল...

একটা-দুটো আকাশ
ছেঁচ-তলায় খিড়কীর পাশে শুয়ে,
জোগাড়-কুটো আয়াস
পাখালির ওই ঠোঁটের ডানা দিয়ে।

স্নান সেরেছে বিকেল
কুমকুম আর স্বর্ণ-চরি গায়ে,
মাঠ-মুখো সব দামাল
উঠানে ঠায় গাভী - চোখো মেয়ে।

নথ ছুঁয়েছে চিবুক
লাল চেলি আর গাছ কৌটো নিয়ে।
হাঁপর পাড়ছে বুক
"বাবুল মোরা নইহর ছুটোহি যায়ে...।"

যায়না!

কতদিন হয়ে গেলো ঠিকানাটা বদলিয়ে মেঘ,
আলসে তে বসে দেখে অযুত নিযুত রুখু ছাদ,
ডানা ঝাপটায় পরাজিত অক্ষম আক্রোশে,
কেন দশ নখে খিমচেও বৃষ্টি নামানো যায়না?

রং

মৃত্যুর রঙ কি?
সাদা কালো অথবা দারুণ জমাট নীল?
শ্যাওলা পাঁশুটে নাকি ঘেঁটে যাওয়া বেগুনী?
টকটকে নির্লজ্জ লাল নয়তো?
জীবনের চরম ও চূড়ান্ত ট্র্যাফিক সিগন্যাল...
আর এগিও না!
এবার ঘরে ফেরার বেলা। মরচে পড়া বিকেল।

দাহ স্নান

ক্ষয়াটে সাদা কোনওলা আর্চি'স হলমার্ক,
কুঁকড়ে কালচে গাঢ় মড়া গোলাপের মমি,
ভুলে মেরে ফেলা "কথা"ওলা চিঠির দিস্তা,
দুই থেকে চারখানা ঠোঁটে বমি ঝর্ণা কলম,
আলমারির শেষতাক নাকি নিমতলা শ্মশান!
...
একটা টুকটুকে লাল বুক মতো সাবান,
এখনো জীবিত!
যাক, দাহ স্নান এ কাজে লেগে যাবে ও।

চিনিনা

আমি যাকে ভালবাসি সে খোয়ালে পলাশের কুল,
আমি যাকে ঘৃণা করি সে গোছালে শিমুলের ভুল।

আমি যাকে কাছে ডাকি সে বোঝেনা প্রেম মানে লাজ,
আমি যাকে দূরে রাখি সে চায়না প্রণয়ীর তাজ।

আমি যার চোখে বাঁচি সে মেটায় পেশিময় ভুখ,
আমি যার বুকে বাঁচি সে রাঙায় আঁচলের সুখ।

কে আমার সর্বগ্রাসী ভালোবাসা?
কে আমার বড়ো মিঠেল ঘৃণা?

এতো সর্বনাশ পেরোলাম,
আজো
ফাগুনের বিকেল চিনিনা!

Wednesday, April 18, 2018

পারিনি

তোমার শহরে মেঘ বিছালো অভিমানী যে আকাশ
আমার ছাদেতে বৃষ্টিরা তার দোসর থেকেই ঝরে।

তোমার আলসে ভিজিয়ে চুপ যে বোকার হদ্দ কাক
আমার বাগানে ঝাউগাছ থেকে তার জোড়াটাই পড়ে।

তোমার টেবিল উলটপালট কাগজ কবিতা উড়লো
আমার একলা সারেঙ্গী জানো সেই ছন্দেই বাজছে।

তুমি না চাইতে যে মনেপড়া তোমায় জড়িয়ে বাঁচলো
আমার হাসনুহানার মিঠাস তারি সোহাগে সাজছে।

আমরা নাকি ভুলে যাবো সবটা এমনি এমনি
অতোটাই সোজা বুঝি? পেরেছো? পারিনি, পারোনি।

দায় নেই

খুব আপন কিছু খুইয়ে ফেলার ভয় নেই।
নিজের বোধের কাছে দেওয়া একটা কথা ছাড়া,
আমার কোনও কথা রাখার দায় নেই।

আমায় তারা অজস্র কথা দিয়েছিলো।
সেসব তাদের খুব সম্ভব মনেতে নেই।
কোন একজন্মে যে সমেতাল মিলেছিলো।
সে বাজনার তারেরই আজ হদিশ নেই।

প্রেয়র কাছে পৌঁছে যাওয়ার তাড়া নেই।
নিজের আত্মার কাছে দেওয়া সেইসে কথা ছাড়া,
আমার কোনও কথা রাখার দায় নেই।

একেক করে সবটা ক্ষতই ক্ষয়াটে হলো।
বেইমানির ঘায়েরা আর দগদগে নেই।
অসম্মানের কালশিটেরাও মিলিয়ে এলো।
প্রতিহিংসার হিসহিসানি-র মরণ নেই!

সেই মুখোশীদের মারণ পূর্বে তর্পণ নেই।
নিজের প্রেতের কাছে দেওয়া এই কথাটা ছাড়া,
আমার কোনও কথা রাখার দায় নেই।

দিলেনা

তুমি বললে আকাশ দিলাম,
আমি পেলাম রিক্ততা।
তুমি বললে মাটিও দিলাম,
আমি পেলাম স্তব্ধতা।

তুমি বললে সাগর নেবে?
আমি শুনলাম হা-শূন্য।
তুমি বললে পাহাড় নেবে?
আমি দেখলাম কাঠিন্য।

এতো কিছু পেয়েও আমি পূর্ণতা তো পেলাম না।
এতো কিছু দিয়েও তুমি, নিজেকেই তো দিলেনা!

স্পষ্ট বাক

নষ্ট মেয়ে কষ্ট লেখে,
পিষ্ট আঙুল ক্লিষ্ট আঁক।
রুষ্ট পুরুষ 'হোক কুষ্ঠ' শাপে,
তুষ্ট "পরম", 'তুই স্পষ্ট বাক।'

নারীর উপর ন্যস্ত

ছুঁয়ে যাওয়া কবিতারা বহুদিন আধপেটাই শীতঘুমে,
ভালোলাগা কবিরাও সংখ্যাধিক্যে নিমগ্ন কোনোখানে,
নতুনতর যাজনে।
অপিচ কোনও কোনও কবিরা কিন্তুক বড্ডই বেশ ব্যস্ত,
আরে বই বেরোচ্ছে বইমেলায়, কবিতার(!) জানিসতো,
দেঁতোঠোঁট প্রশস্ত।
...
কেঁপে উঠবো না কি আর কোনোদিন কারো ঝাউবনের কথোপকথনে?
আজকাল কাটতির ভার প্রচ্ছদে শায়িতা নগ্ন কিম্বা অর্ধনগ্ন নারীর উপর ন্যস্ত।

মন ভালো নেই

মন ভালো  নেই একলা দুপুর কিতকিতেরা দাওয়ায় শুয়ে,
ঝিম ধরালো ছোঁয়াছুঁয়ি মাতাল ব্যথা গলায় রুয়ে।
কুমির ডাঙার মিথ্যে নদী "ডুববি সাথে?" ফুসলে ডাকে,
চিঠি কাকুর ঝোলার আড়াল লুকোচুরি অথৈ বাঁকে।

তুই কেন রোজ ডাকতে আসিস, গাদীর কোটটা কাটা ফেলে?
ইষ্টিকুটুম কামরাঙা কি তোর রাজত্বে সদাই মেলে?
আনবি না আর কক্ষনো তুই আমার জন্যে কেবল একা।
ফুলি কেমন ঠোঁটটি বেঁকায়, গিনি তড়পায় আমরা বোকা!

যায় নি আজ ডোরা শার্ট খেলুড়ে তার মিতার বাড়ী,
অমন করে ঝাঝিয়ে দিলি, তোর সঙ্গে ভীষণ আড়ি!
কিন্তু মন তো বসছে না আজ ডাঙ্গুলী আর গোল্লাছুটে,
কেন যে ছাই চোখ ভেজাচ্ছে আখাম্বা জল বেবাক জুটে।

বিকেল সাজে জড়িয়ে গায়ে কুমকুম আর স্বর্ণচরী,
খালের ঢেউয়ে সামাল সামাল কি লেখা এক ছোট্ট তরী।
আনমনা সুর উথলে পড়ে আড়বাঁশির ওই বুকটা দুলে,
বকুল গাছের উঠোন ভরা মুখ ভার সব শুকনো ফুলে।

সন্ধ্যে প্রদীপ উঠছে জ্বলে ঠাকুরদালান তুলসীতলায়,
"বাঁশিওলা, ফিরবি না আজ" কে শুধোল আলতো গলায়?
সাঁঝের আলো চুঁইয়ে নামে অশ্রুধোয়া পান পাতাটি,
কে বলেছে কৈশোর প্রেম সব শাপিত সবটা মাটি?

খেলুড়ে দুটি চললো  ফিরে নিজেদের সেই নিটোল গাঁয়ে,
কাগজের নাও এক হাতে আর বকুল বাঁশি  অন্য টায়ে।
গোল্লাছুট কুমিরডাঙা চুউউ কিতকিত এবার আসি?
আমরা তোদের আজও জানিস, অনেকখানি ভালোবাসি।

অযোগ্যতা

অনেক দিনের পরে,
এক সে ঝলক ঝলমলিয়ে রাজহংসী চলা,
থিতিয়ে যাওয়া মুগ্ধতাকে আবার চলকে দিল।
অনেকটা দিন আগে,
শ্রাবণসন্ধ্যা চায়ের ধূমে চোখের কথা বলা,
দোকলা হব লুকোনো সাধ আঠারো আনা হল।
অনেক দিনেরা কেটে,
পাশুঁটে প্রৌঢ় আঙুলেতে মুকুতা এবং পলা,
নীলা সওয়ার অযোগ্যতা আজও খিঁমচে গেল!

বাঁধবি?

জানিস সুপূর্ণা,
কোনো কোনো প্রেম দাঁড় ঝাঁকানি ঘমন্ডী কাকাতুয়া।
ঝুঁটিফুটি বাগিয়ে সে এক দস্তুরমত আড়ম্বরী আশনায়।

টেকে না...

একেকটা আবার,
ঝিম লাগা ঝুম দুপুরে আতেঁল গেরেমভারী ঘুঘুটি।
কিঞ্চিৎ ডাঁয়েবায়ে থুত্নিটি নাচিয়ে ব্যারীটোনে দিল দ্যায়।

থাকে না...

দুচারটে এমন,
হরদম কিচিমিচি সাজুনে গুজুনে ছটফটি টিয়ারা।
লাফিয়ে চিকরিয়ে এক ঠোঁটেমাখা ভালোবাসা বাতলায়।

বোঝে না...

উফফ! থামবি?
কি হলো! বলবি?
সবই তোর টেকে না থাকে না আর বোঝেনা!
সুপূর্ণা, কোন বুকেই ভালোবাসা কি বাঁচেনা?

জানিস রণজয়,
আরেক সে প্রেম দুই সিধেসাদা গেরস্তঘর চড়াই।
দিনভর ব্যস্ততা সন্ধ্যেয় দুটি বাঁধে সোহাগকে আচঁলায়।

আজকাল বুঝলি, মোটেও অমনটা হয় না!
জানিস ভারী, তোর আসল প্রেমতো সয় না! 

এভাবে,
গোধূলি জোগায় কথোপকথন বাঁধুনী,
দুজনায় গড়ে চাপানউতোর এ বেনুনী।
হটাৎ,
বিকেলে মিশছে পূরবী নিজেকে রাঙ্গিয়ে,
কনে দেখা আলো তর্ক টা দিলো ডুবিয়ে।

ওমন বুকে বাঁধবি সুপূর্ণা?
এমন ভালোবাসবি, রণজয়?

জীয়ন

রণ,
কাল রাত জুড়ে চোখে টায়টায় আকাশ ছিল আমার।
বিহান বয়সী প্রেম তালাশে ফিরেছি তারাময় অবয়বে।
সাঝঁ বয়সে এ কি নির্লজ্জ বিচ্যুতি রোজনামচার।
কালপুরুষে এখনো তৃষ্ণা আকণ্ঠ জাগে অপার্থিবে! 

পূর্ণা,
কুহকী নিশির ডাকে সাড়া কাল দিলাম অমানিশায়।
আশরীর মেখে নিলাম অশরীরী অতীতচারিতা।
প্রাকপ্রৌঢ় গুজরান মৌতাতে তরর্ বেহুদা নেশায়।
অ্যান্ড্রোমিডা আজো চোরাচাউনির সেই অবগুণ্ঠিতা!
...
ইশশ্! কতো বেলা হয়ে গেল।
আহ্! এতো বেলা বয়ে এলো!
...
এই যাপনের সমস্তটাই নিষিদ্ধ
এই যাপন ব্যার্থ প্রণয় নিষিক্ত।
...
তাই বলে কি অ্যান্ড্রোমিডা
তাই বলে কি কালপুরুষ
মুছে দেবে রাতের জীয়ন?
ধ্যাত্ ধুর্ হ্যাটট্ হুউউশশ্!

পবিত্রতম

ছেলেটি ঠোঁট দিয়ে ঠোঁট ছুঁলে মেয়েটির পবিত্রতা নষ্ট হয় না, ছেলেটি পবিত্রতর হয়।
...

ছেলেটি চোখ দিয়ে শরীর চাটলেও মেয়েটির পবিত্রতা নষ্ট হয় না, ছেলেটি অপবিত্রতর হয়।

নিশ্চুপের বাক্যালাপ

ধরে নে পূর্ণা, দ্যাখা হলো  দীর্ঘ অথবা স্বল্প আগামী তে, হয়তোবা কালই।
কি ঘটবে বলতো তাতে?
চূড়ান্ত নালেঝোলে মাখা আহাম্মকি কিছু করব আমি, বা তুইই কি?
দুই অজন্মা হাড়হাভাতে!

নাহ, মনের শরীর বয়স্কা হয়েছে রণ, নিপুণ শৈল্পিক দক্ষতা জন্মেছে আড়াল করার।
রাগ থেকে রিরংসা,
ক্ষোভ থেকে ক্ষিপ্ততা,
প্রেম থেকে অভিমান,
দাবী থেকে চাহিদা
সব সব সব...
আবডালে রাখি আমি।
মধ্যবিত্ত গৃহস্থের ঢলোঢলো গৃহিনী।
কোয়েলের মোড়কে হাড়গিলে গৃধিনী!

(তুই হেঁট মুন্ডু পায়ের নখে মাটি খুঁড়তিস আর আমি ঊর্ধমুন্ডু নারকোল পাতায় লটকানো মেঘের টুকরো গুণতাম।
তবু আমরা পরস্পর কে ছুঁয়েই রইতাম, নির্জলা তৃষ্ণা আর নিস্ফলা অঙ্গীকার আকণ্ঠ ধারণ করতাম, মনে আছে?)

(তোর লড়ঝড়ে সাইকেলটার মতোই আমাতে একচোখা ছিলি বড়ো, দুর্নিবার একরোখাও। ক্ষীর গুমোরে নাকের পাটা ফুলতো আমার, আবার  ঘাম জমতো তেলোতে তোর দস্যিপনার ডরে। মনে পড়ে?)

কিছু বললি?
নাতো?
তুইকি কিছু?
নাহ।...
...ভ্রাম্যভাষ স্তব্ধ।

...ওরা নিশ্চুপের বাক্যালাপে মগ্ন।
সব কথা কি ঠোঁট নেড়ে বলা যায়...

তুই এলিনা!

সব ভিজে যাচ্ছে রণ! সব সব সবটা ভিজছে।

ভোর থেকে দুপুর, আলসে থেকে উঠান, কেয়ারি থেকে আগাছা, বেড়াল থেকে দাঁড়াশ, সাইকেল থেকে ল্যাম্প পোষ্ট, কুমুদিনী থেকে আত্মদীপ
প্রকৃতি ভিজেই চলছে!
অহং থেকে  অভিমান, লালসা থেকে প্রেম, গ্লানি থেকে তৃপ্তি, হাঁটা থেকে পিছুটান, ন্যাকামি থেকে ফুসলানো, ঘৃণা থেকে চাহিদা
পুরুষ ভিজেই চলছে!

সব্বাই মরে যাচ্ছে রণ, আকণ্ঠ মরেই যাচ্ছে।

কি অকুণ্ঠ ভালোলাগায় কি উদ্দাম ভালোবাসায়
তীব্রতম আশ্লেষে বৃষ্টি খিঁমচে
ভিজতে ভিজতে চুপ্পুর মরণ সব্বার!

আমি যতটা শুকনো ততটাই শুকনো থেকে গেলাম।
আজও। আজকেও।

তুই এলিনা। ...

বনলতা ও মেয়েটি

বনলতা: (যথারীতি যেভাবে তাকান সেভাবে তাকিয়ে) অ্যাই মেয়ে শোনো, তুমিই না...?

মেয়েটি: হ্যাঁ, ...আমিই সেই।

বনলতা: হা ঈশ্বর! নিশ্চয়ই আজ "আমি নিদালির আঁখি, নেশাখোর চোখের স্বপন! মানুষ দেখেনি মোরে কোনদিন, - আমাকে চেনেনি।" নইলে কোন স্পর্ধায় সে তোমার চোখে...যাক, "হরিণ খেয়েছে তার আমিষাশী শিকারীর হৃদয় ছিঁড়ে।"

মেয়েটি: এভাবে বলবেন না প্লিজ। আপনি "নিবিড় রমণী তার জ্ঞানময় প্রেমিকের খোঁজে" এসে আমায় দেখলেন "আবহমানের ভাঁড় এসেছে গাধার পিঠে চড়ে", দ্যাটস ইট। আপনি তো জানেন, "হৃদয়ের নয় - তবু হৃদয়ের নিজের জিনিস হয়ে তুমি রয়ে গেছো।"

বনলতা: হয়তো ...আসলে কি জানো "নিজেকে স্বাধীন বলে মনে করে নিতে গিয়ে তবু মানুষ এখনো বিশৃঙ্খল।" যাক, "ঢের ছবি দেখা হলো - ঢের দিন কেটে গেল - ঢের অভিজ্ঞতা জীবনে জড়িত হয়ে গেলো, তবু..."

মেয়েটি: "তবুও ভ্রমে লীন হওয়াও কঠিন", তাইনা?

বনলতা: ঠিক। "কাঁদছে পাখি পৌষ নিশির তেপান্তরের বক্ষে, ঘুম নাহি আজ চাঁদের চোখে, নিদ নাহি মোর চক্ষে!"

মেয়েটি: ফিরে যান আপনি। এখানে ঘুমোতে হলে এর মধ্যেই ঘুমোতে হবে। "এখন কিছুই নেই - এখানে কিছুই নেই আর, অমল ভোরের বেলা রয়ে গেছে শুধু।"

বনলতা: "অনেক পুরোনো দিন থেকে উঠে নতুন শহরে আমি আজ দাঁড়ালাম এসে", তাই হয়তো ..."তবু এই পৃথিবীর জীবনই গভীর।" আজও। আচ্ছা, আমি তাহলে চলি কেমন? যেমনই হোক, "গাহি মানবের জয়! কোটি কোটি বুকে কোটি ভগবান আঁখি মেলে জেগে রয়।"

মেয়েটি: হ্যাঁ, আসুন। ভালো থাকার চেষ্টা করবেন। আর আমি অপেক্ষায় থাকি "যা হয়েছে - যা হতেছে - এখন যা শুভ্র সূর্য হবে, সে বিরাট অগ্নি শিল্প কবে এসে আমাদের ক্রোড়ে কোরে লবে।"...

বারণ আছে।

দিনেরা বড্ড বকবক করে, রাতেরা অনেক গল্প বলে। সাধারনতঃ।
এক একটা অন্যময় রাত আবার নিজেই গড়ে অনিন্দ্য গল্পের মেঘময় শরীর নিজের গোটা স্বপ্নালু অস্তিত্ব দিয়ে।
আর সেই রাত কিন্তু সবটা, সবটা শোনায় নিঃসাড়ে। মিশমিশিয়ে। ফিসফিসিয়ে।
শোনায় নাকি দেখায় নাকি সর্বস্ব ছুঁয়ে দেয় গল্প বুলিয়ে?
জড়িয়ে নেয়, মিশিয়ে নেয়, মাখিয়ে নেয় অবলীলায়।
এরপর...
অনুভূতির উঠোনে এসে দাঁড়ায় আপাত অলীক এক মোহময় মায়াময় অপার চরাচর।
নীল নীল আরও আরও নীল
এই ডুবছি এই ভাসছি
এই দেখছি এই হারাচ্ছি
অথই পাথার নীলাভ আলোর
পালক পালক নীলাভ মেঘের
তারপর ...
বলবো না!
বারণ আছে!!

কবে বুঝবি বল?

দিতে পারো ওই এক কুশী কাকচক্ষু মরম জল?
ধ্রুবশুভ্র চন্দনগন্ধী।
ঠোঁটের কষ ছুঁয়ে নামলো যা এক্ষুনি।
কথা দিচ্ছি।
মুহূর্তে বিলিয়ে দেবো অতৃপ্তির আযৌবন অহংকার।
নতজানু পরিতৃপ্ত একান্ত প্রেম হবো।
একবার।
আরেকবার।
অন্তিমবার।

রুধির তো তীরের পিপাসা মেটায়।
কিন্তু তৃষ্ণা যে তূণীরেরও থাকে সুপূর্ণা।
তুই কবে সেটা বুঝবি বল?

তোমরা শুনবে?

নদীর আদৃত নিয়তি বয়ে চলা।
সে বিনা আয়াসেই হোক বা বহুল প্রয়াসে,
দারুণ তরাসেই হোক বা ঈষৎ আভাসে,
অন্তঃসলিলা কিম্বা আন্তঃসলিলা।

সুখে বয়ে চলা, শোকে বইয়ে চলা।

কিন্তু সভ্যতা এই গতির বন্দন বরদাস্ত না করে তাকে বন্দিনী বানাবার প্রচেষ্টায় অনুপল খামতি রাখেনা।
আর গোলটাও তখনই বাধে যখন বাঁধের বাঁধনে সে আর কোনো মতেই এক লহমাও বাঁধা থাকেনা।

তীব্র বয়ে চলা, তীক্ষ্ণ বইয়ে চলা।

সভ্যতা আদতে পৌরুষত্ত্বের এক উড্ডীয়ান ঝান্ডা বৈ আর কিছু তো নয়,
কিন্তু  নদীও যে আদ্যোপান্ত নারী। আর নারী মাত্রেই যে সে রাধারানী হয়।

টানে বয়ে চলা, প্রাণে বইয়ে চলা।

জগতের কোনো আয়ান ক্ষমতা ধরেনি কক্ষনো বৃষভানু কন্যা কে রোখার।
পার্থিব শিকলি কে অপার্থিব টিকলি বানিয়ে বিনোদিনী চির দুর্নিবার।

উড়িয়ে বয়ে চলা, তুড়িয়ে বইয়ে চলা।

তারপর একদিন কানু নদ চলে মথুরায়,
নদীটিরও স্রোত তিলে তিলে হয় অধরা।

অভ্যস্ত বয়ে চলা, একঘেয়ে বইয়ে চলা।

আজ নদ ও নদীর গল্প বলবো , শুনবে?

বয়সের ভারে ন্যুব্জ শরীর শুকনো
মনের আঙিনা পিয়াসী বড্ড রুগ্ন।
স্রোতস্বিনীর জিয়ন ও যাপন যোবনে
স্মৃতির উজানে বৈঠা বাইবো সৃজনে।

আমি যদি বলি, বলোনা তোমরা শুনবে?

এসেছিল

নিজেকে শোনা হয়না বহুদিন।
এঁকে ওঁকে তাঁকে শুনতে এবং বুঝতে আর বুঝতে এবং শুনতে...আর জানতে এবং যুঝতে,
এই ওই সেই ইত্যবসরের ইত্যাদিগুলোতেই
অনুপল থেকে অনাদি অবধি কাবার।
নাহ্,
আজ আমি পাশটায় শোয়াবো, নিজেকে।
আজ আমি শুনবো শোনাবো , নিজেকে।
তারপর ...
গলা জড়িয়ে ঘুম পাড়াবো, নিজেকে।
ঘুমিয়েছে...
এরপর
ঘুমিয়েছি ভাববো নিজেও।
মিছিমিছি...
আসলে, সেই সে রাত টা না এলে কি সেই সে ঘুম টা আসতে পারে বা আসতে চায়?
শোনা কিম্বা শোনানোগুলোও কি হয়,
আদৌ?
রাতটা আবার কবে আসবে সুপূর্ণা?
রাতটা সেবার কবে এসেছিল রণজয়?