Thursday, April 19, 2018

বুড়হা বাবা

কোপাই এর ধার ঘেঁসে হাঁটছিল মেয়েটি ,আনমনা ।
এক আকাশ মেঘ করেছে ।
হটাৎ চোখে পড়লো একটু দূরে তিনটে ছাগল নিয়ে চলেছে সে ,
আমাদের রবিবাবুর কৃষ্ণকলি , হরিণ নয়না ।
মেয়েটি ঃ এই যে , শুনছো ?
কৃষ্ণকলি ঃ হামাকে ডাকছিস তু দিদি ?
মেয়েটি ঃ হ্যাঁ , তোমাকেই , কোথায় চলেছ ?
কৃষ্ণকলি ঃ কুঁথাকে আর যাবো ? ঘর কে যাচ্ছি ।
মেয়েটি ঃ আমার সাথে একটু কথা বলবে ? সেই কতকাল ধরে তোমায় খুঁজছি !
কৃষ্ণকলি ঃ এখন তুর সাথে কথা বুলতে পারবোক লাই । দেখেছিস কিমন হয়েছে আসমান টো ! হেই মুংরি হেই সাংরা চল চল হেট হেট ।
মেয়েটি ঃ প্লিজ , একটু দাড়াও কৃষ্ণকলি !
কৃষ্ণকলি ঃ (বিদ্যুৎ গতিতে ঘুরে গিয়ে ) কি বুলে ডাকলি তু ? কিস্টোকোলি ? উ তো হামার লাম লয় ! হামার লাম সমরী , হামার মরদ বুধুয়া ।
মেয়েটি ঃ হ্যাঁ হ্যাঁ তুমি সমরী । কিন্তু কি জানো , তোমাদের এখানে একজন থাকতেন , জোব্বা পরা দাড়ীওয়ালা বিরাট পুরুষ । তিনি তোমাকে কৃষ্ণকলি নামে ডাকতেন ।
কৃষ্ণকলি ঃ তু কার কথা বুলছিস ? বুড়হা বাবা ?
মেয়েটি ঃ বুড়হা বাবা !!
কৃষ্ণকলি ঃ হ্যা। বুড়হা বাবা । হেই যেখানে ইত্তো বড়ো বড়ো বাড়ি , ইত্তো বড়ো বড়ো লোক , হুই তো বুড়হা বাবার  থান । হামি চিনি উকে ।
মেয়েটি ঃ ঠিক বলেছ ।ওনাকে চেনে সবাই । সব্বাই ।
কৃষ্ণকলি ঃ (হেসে) লারে দিদি , তুরা উকে চিনিস লাই । তুরা উর লামে ইখানে এসে পয়সা দিয়ে হামাদের লাচ দেখিস , হামাদের আদুল গায়ের ফোটোক তুলিস , তুরা উকে চিনিস লাই ! উ হামাদিগের বাপ বটে , বন্ধু বটে , আর তুরা ! কেবল খেতে আসিস । মহুয়া খেতে , তাড়ি খেতে , হামার মতন মেয়্যা দের শরীর খেতে ।আর সেই সাথে একদিন তো উর মিডেল টো ভি খেয়ে লিয়েছিস ! হেই গ বুড়হা বাবা !
মেয়েটি ঃ তুমি জানো সে সব ?
কৃষ্ণকলি ঃ কিনো জানবোক লাই ? হামার ঘরে তুয়ারা সিঁদ দিবি আর হামি জানবোক লাই !
মেয়েটি ঃ ঠিক বলেছ ।যাক, তুমি জান কৃষ্ণকলি ওহ না সমরী , তোমাকে নিয়ে তোমাদের নিয়ে তোমার বুড়হা বাবা কতো অপূর্ব কবিতা লিখেছেন ।
কৃষ্ণকলি ঃ সিটো হামি শুনছি বটেক । তুয়ার মত বিট্যি ছেল্যা বেট্যা ছেল্যা রা এসে বুলে হামাদের । কিন্তু দিদি , একটা কথার জবাব দিবি তু ? বুড়হা বাবা হামাদের ইত্তো ভালবাসলো , ইত্তো মান দিলো , আর তুরা উকে ভালবেসে হামাদের লষ্টো করিস কি করে ? ভাত লাই , কাপড় লাই , লাজ সরম টো ভি কেড়ে লিয়ে লিস কেনে ?
মেয়েটি ঃ কৃষ্ণকলি ! এভাবে বোলোনা তুমি ! অভিশপ্ত হয়ে যাবে গোটা উচ্চবর্গ সমাজ !
কৃষ্ণকলি ঃ  ডর লাগলো দিদি ? ইত্তো পাপ জমছে রে! সাজা ভি পেয়ে যাবি । বুড়হা বাবার সাজা ! ডর কে কি করবি ? তু ঘর কে যা । হামি ভি যাই । জায়গা টো ভাল লয় সাঁঝের সময় । মেয়্যা ছেলা আছি না দুজনে ।
মেয়েটি ঃ আপনা মাঁসে হরিণা বৈরী !
কৃষ্ণকলি ঃ কি বুলছিস তু বটে ?
মেয়েটি ঃ নাহ , কিছুনা । তুমি যাও সমরী , তোমার বুধুয়ার কাছে ফিরে । তোমাকে কৃষ্ণকলি নামে ডাকবার অধিকার হারিয়েছি আমরা । এখন শুধু বুড়হা বাবার দেওয়া সাজার প্রতীক্ষা !

No comments:

Post a Comment