Wednesday, April 18, 2018

বাজছে?

কাজল পরতে খুব ভয় পেতো এককালে। গনগনে আঁচেরপারা জ্বলে উঠতো যে চোখ, অনিচ্ছা জলে ভরে উঠতো।

কাজল পরতে খুব ভালোবাসতো আরেককালে। ঝকমকে ফটিকপারা জ্বলে উঠতো যে চোখ, ঠমকে গমকে ভরে উঠতো।

কাজল পরতে খুব সাধ হয় আজকাল।  মায়াময় চাউনিতে প্রতিমাপারা জ্বলে উঠবে যে চোখ, প্রশ্রয়ী আবেশে ভরে উঠবে। 

কিন্তু, পরা হয়ে ওঠে না।

বলা ভালো আয়নার সামনে যায় হয়তো সাধটুকু বুকে নিয়ে, কিন্তু আয়নার সামনে দাঁড়িয়ে লোকমুখে নির্ধারিত যে কুৎসিত দর্শন অবয়বটা দেখতে পায়, বুঝতে পারে তার চোখে কাজল ছোঁয়ানো বড্ডরকম বীভৎসতা।
পুরুষের গড়া বিচারে।

দাঁড়কাক পায়ের তেলোর খরখরে গড়ন ছাপিয়েছে দুচোখের উঠোন , এপ্রান্ত থেকে ওপ্রান্ত। আলকাতরার লেপা হয়ে গেছে চোখের মাঝবরাবর মণিকে দাঁড় করিয়ে কেন্দ্র কল্পনায় তৈয়ের এক বৃত্তের শরীর।

কাজলের ঠাঁইটুকু কি করেই বা মেলে আর?
দিনগতপাপক্ষয়ের ঠাঁইটাই জোটে কেবল।

বনলতাই হোক বা নীরাই হোক বা নন্দিন, ছাপার অক্ষর থেকে ধরার ক্রোড়ে এলে, বিশেষ বয়সে প্রৌঢ়া হয়েছে সকলেই। আর এক্ষেত্রে তো নিতান্তই ছাপোষা মধ্যবিত্ত গৃহস্থ কন্যা জীবন এক। নিয়মের বত্যয় বিশেষ হয় কি করে?
পুরুষের গড়া কানুনে।

কি আর করা, মোটের উপর মেনে মানিয়েই নিয়েছে একপ্রকার এই কড়কড়ে বাস্তবতা।
থাকতে হবে তো। বাঁচতে হবে। গয়ংগচ্ছতা।

কিন্তু আজ কি হলো হটাৎ!

সাজের বাক্সে এতোকাল পড়ে থাকা গুচ্ছ গুচ্ছ কাজলের কৌটোদের জড়ো করছে সে। অদ্ভুতুড়ে কঁকিয়ে কঁকিয়ে উঠছে সমানে কাঁকিয়ে যাচ্ছে প্রত্যেকটা পাত্র আর কঁকানি ও কাঁকানির সবটা জড়ো করছে একটা বড়ো কৌটোয়।

এক কচি বড্ড কচি কাজলদীঘি চোখ ডুকরে চলেছে সেই কখন থেকে। বড়ো ব্যথা পেয়েছে। নারকীয় যন্ত্রণা আছড়েছে একরত্তি এক শরীরে।

নারীটির ওই কাজলে চোখ আলো করার দিন শেষ। পুরুষটির ওই কাজলে মুখ কালো করার দিন শুরু।
নারীর নির্ঘোষে।

দুয়ার পেরিয়ে রাজপথে আজ সে।
দুধারে চাইতেই ঠাহর হয় এই "সে" দের সংখ্যা প্রতি পলে বাড়ছে। কেবলই বাড়ছে।

ঘণ্টা কিন্তু বাজছে...

No comments:

Post a Comment