Wednesday, April 18, 2018

হীরেকপালি?

সেইসব মানুষীরা সোনাকপালি যাদের প্রথম প্রেমিকের সাথে গুছিয়ে সংসার হয়।
সেইসব মানুষীরা হিরেকপালি যাদের প্রথম প্রেমিকের সাথে দেখা অবধি হয় না।

চিঠি মেলে।
আর্চিজের তুলট কাগজে ফিনফিনে শব্দেরা মিলেমিশে এক এত্তো বড়ো ময়ূরপঙ্খী গড়ে দেয়।
তাতে নিমেষেই নিঝুমবেলার দিকভোলানো সওয়ারী বেশ শিরিশিরে মজার।
প্রাপক বিশষণায়িত ষোলো খানেকে কিন্তু প্রেরকের নামখানি অবধি নেই।

উপহার মেলে।
জ্যামিতি বাক্সে শুয়ে থাকে কাঙ্খিত কলম, ক্ষুদে ভালুকছানাওয়ালা রিং, পাঁচ টাকার ফাইভ স্টার।
আসমাঁজমিন থেকে আড়াল করে তাদের আলতো আদর ছোঁয়া বেশ গুপচুপ খুশির।
প্রাপক গরবিনী এমত প্রাপ্তিতে কিন্তু প্রেরকের লাজবন্ত আড়ালমুঠো।

মাঝে মাঝেই ঠাহরমতো হয় কানের খিড়কিদোরে কার যেন নিশ্বাসের ফিসিফিসানি।
সপাটে ঘুরতেই বেমক্কা চারটে একই টিউশান পোড়ো বিজবিজিয়ে ওঠে।
মাঝে মাঝেই ধুকপুকানি বলে কেউ যেন অপলক চেয়ে আছে ছুটি মেলা দঙ্গলে।
ঝুপ দাঁড়িয়ে এদিক সেদিক ফিরতেই ধাক্কাধাক্কির ত্বরণই কেবল ঘাইদিয়ে ওঠে।

হোমটাস্কের জমা রাখা খাতার ভাঁজে গুটিসুটি ঘাপটি সাদা গোলাপের। স্মৃতি হাতড়ানো কার সাথে ঝগড়াটা করেছি? এ গোলাপ তো চিরকালই জানামতে সন্ধিনিশান।
কিছুদিন যেতেই গোলাপেরা বেমক্কাই রং বদলে বাসন্তী। মিতালী পাতাতে চায়? এ গোলাপ তো শুনি বন্ধুতা বুকে পাতে।
কাটতে সাত দশদিন ফের পাপড়িরা বদলে যায় খুনখারাপি লালে। সেকি! প্রেমের প্রস্তাব পাঠালো সে দস্যি? এ গোলাপ তো শুনি ...ধ্যাত!

শোনা হয়ে ওঠেনা বহুবার বহুভাবে লিখে যাওয়া আকুতির পংক্তিমালা।
তোর মাথার দিব্যি তোকে আমি অনেকদিন হলো খুব খুবই ভালোবাসি।
দুদিনের বেশি না দেখলে আমি রোজ অল্প অল্প মরে মরে যাই জানিস।
ইত্যাদি ইত্যাদি ইত্যাদি।

একদিন বেমালুম হারিয়ে যায় কে জানে কোন সে বলতে না পারা কারণে ...

দিনান্তের শহরতলীমুখী ট্রেন ক্রমশঃ পেরোয় শহরের ঠিকানা।
ছোটো বড়ো স্টেশানের হাজারো চলমান অবয়ব ছেঁচে মেয়েটি হাতড়ায় আকৈশোর কল্পিত মুখের আদল।

শেষ দুপুরের স্বর্ণচম্পা আলোয় রেলপথের পাশে বিঘে খানেক সরকারী ঘাসজমির মাঝে একখানি দুধসাদা ভিটে, বারান্দায় রংচটা সাইকেল।
ওখানে কে থাকে? ওটা কার সাইকেল?

ওখানে ও থাকে? ওটা ওর সাইকেল?

গাড়ি এগোয়।
জানলার লোহাকাঠিতে নুইয়ে আসে মাথা। অবসন্ন চাওয়া শেষবারের মতো দৃষ্টি বুলিয়ে যায় সাদা কুঠিটায়। বেরং সাইকেলে।

চোখ বুঝে আসে।
ধূসরবস্তুতে প্রকট হয়ে ওঠে প্রচ্ছন্ন সমস্ত স্মরণ ভাঁড়ার।
মন আঁকড়ে মুখ গোঁজে মহার্ঘ আতরগন্ধী অনিঃশেষ ভালোবাসায়।

সইয়া, ম্যায় কাহা বিসরায়ো তোহরে নাম...
কি অসৈরণ কান্ড বলো দেখি! সইয়া না হাতি!  মানুষটাকে চেনা তো দুরস্ত, নামটাই তো এজন্মে জানা গেল না।
এতে করে ঝঞ্ঝাট কি হলো,
সব নামে সব মুখে সব চোখে সব ঠোঁটে
আর
সব কলমে এবং সব কবিতায়...
তাকে, তাকেই পাওয়া, তাই পাওয়াটাও এজন্মে ফুরোলো না।

হিরেকপালি সাধে বলি!

No comments:

Post a Comment