বাঁচারা বসত করে।
নদীর উপর শিকড় হীন সংসার গড়ে নাজু নাইয়ার সম্বৎসরের জীবন।
প্রতিপলে গতিময় প্রতিপলে স্থিতিশীল।
ভাত বাড়ে নাজু বউ, গরম ভাত, চূড়োয় ফিকে বেগুনি গোলা সাদাটে পেটের পেঁয়াজ একটি।
অল্প অল্প দোলে।
কাঁচা মরিচের চিকিমিকি সবুজ মতো হিলহিলে শরীর পায়ে নিয়ে থালা ভরা ভাতের রাশি দোলে,সীমের চ্যাপ্টা ঘষা সবজেটে মতো টুকরো টাকরা গায়ে নিয়ে টাটকানি মাছের ঝোলের বাটি দোলে, স্বামীর পরিতৃপ্ত মুখে গরাস গেলা দেখে বউয়ের বুক সেই সে দূরের পাড় ঘেঁষাঘেঁষি ক্ষেতের মতো গাঢ় সবুজাভ এক ধীরা খুশাল দুলুনিতে থিতু হয়। ঈষৎ মেটেল গাঙের জলের ঘটিতে সেই মিঠেল মুখখানি দোল খায়।
লাজানিয়া চাউনি স্বামীর থেকে ঘুরিয়ে নাইয়ার আদরিণী বউ চোখ বসায় আদুল কচিটার আদুরে মুখে।
খোকা শুয়ে থাকে ত্যানা ন্যাকড়ার ওমে গুমসুম। কচি পাকা ধান রঙা মাজায় কালো কারে গাঁথা জালের কাঠি নাভীর নিচটায় শুয়ে থাকে ওরই মতো গুটিসুটি। পাহারাদার সে। খোকার বাঁচন আর জ্বীন-পরী-বুরি নজরের চোখের মাঝে দেওয়াল তোলে।
সে দেওয়ালও দোলে খুবসম্ভব।
খোকা হাঁচি দেয় ঘুমঝিলে ডুবন্ত। নড়ে ওঠে জালের কাঠি।
হেই সামাল!
বাতাসের গতিক ঠাওরায় নাইয়া। ভোরের গাঙের বুক জুড়ে ভীড় করেছে ফুটন্ত ভাতের হাঁড়ির মুখে উড়তে থাকা ভাপেরা। নজর চলেনা বেশী তক্। কিন্তু হাত জড়ো করার তো উপায় নেই। বিবিবাচ্চা এক জাহান ভরসায় বুকজুড়ে মুখ ডুবিয়ে। মাছ ধরতেই হবে, নাও বাইতেই হবে। মহাজনদের হাঁ তে কামটের দাঁত। ভাশলে জাল কাঁধে অনুভবী মন বৈঠা আঁকড়ায়।
হেই সামাল!
...
ব্যাথারা বসত করে।
পাড়ের উপর শিকড় গেঁথে সংসার ঠ্যালে দুলি বাগদীর দিবানিশির যাপন।
প্রতিপলে যন্ত্রণাবদ্ধ প্রতিপলে ভাঙচুর।
গাঙের ঘাটে ঘড়া ভরে দুলি বউ। পেতলের সোনাল মাজা ঘড়া গবগবিয়ে জল গেলে। ঘাটপাড়ের ঘোড়া নিমের কাঁটায় দুলি বউ কঁকিয়ে কাৎরিয়ে ফোস্কা গালে।
অল্প অল্প ফোলে।
চাকা চাকা গাঢ় অবমাননা মতো রক্তালু দাগ বসা পিঠ ফোঁপানিতে ফোলে। সূর্য বসা পাটের মতো বিষন্ন রক্তিম দাগী চোখের উঠোন যাতনায় ফোলে। জমাট আঁধারি বুকটা হাহাকারে গলাচেরার মতো রক্তমুঠি পেষণে ফোলে। ঘাটের পৈঠায় হাঁটু মুড়ে বসে দুলি বউ ডুকরে ডুকরে ফোলে। ঈষৎ মেটেল গাঙের জলের ঢেউ আরশিতে সেই মেঘেল মুখখানি ফুলে ওঠে।
দুখিয়ারী চাউনি কোলের থেকে তুলে বাগদীর অভাগিনী বউ চোখ রাখে ঘ্যানঘ্যানে আকাশের নিস্তেজ সূর্যের মুখে।
রক্তাল্পতার গ্রাসে রাহুগ্রস্থ ক্ষেত খামার নদী মাঠ গ্রাম। সবেরই উপরে ছাই রঙা অস্পষ্টতার পর্দা। ঘোলাটে ঘষা কাঁচের বিষন্ন দেওয়াল উঠেছে যেন চোখ আর চরাচরের মাঝে।
সে দেওয়ালও ফোলে খুবসম্ভব।
দুলি বউয়ের কোঁকানি আছড়ায় অদৃষ্টের আখরে। উত্তরে হাওয়া ঘা খেয়ে ঘাই মারে।
হেই সামাল!
এই গাঙেরই দূরের বাঁকে এক গঞ্জে জন খাটে বাগদী। আজ ডুব দিয়েই ভিতরে জানান পেলো জলে বড়ো কান্নার মিশেল। বুকজলে দাঁড়িয়ে নিজের গাঁয়ের পানে চেয়ে রইলো আবছা দৃষ্টিতে। বউটার বড়ো মুখচাপা, মা আর বোনের বড়ো মুখনাড়া স্বভাব। আন্দাজ করতে চাইলো ইদানিং চ্যালাকাঠের কটা ঘা রোজ বরাদ্দ মেয়েটার। স্বামী যথেষ্ট রোজগেরে না হলে একত্তর থাকা সংসারে বউয়ের বড্ড খোয়ার। শরীর শক্ত হয়ে যায়। গামছা কাঁকালে মরণপণ মন আজ আরোও দশ বস্তা বেশী বওয়ার কসম আঁকড়ায়।
হেই সামাল!
নদী সবটা দ্যাখে।
নদী সমস্তটা জানে।
এর নাও ঘরের দাওয়ায় ওর ভিত ঘরের চৌকাঠে খলবলিয়ে বলে যায় একই বুলি।
হেই সামাল সামাল।
সকাল আসবেই!
...
আশারা বসত করে।
নদীর উপর শিকড় হীন সংসার গড়ে নাজু নাইয়ার সম্বৎসরের জীবন।
প্রতিপলে গতিময় প্রতিপলে স্থিতিশীল।
ভাত বাড়ে নাজু বউ, গরম ভাত, চূড়োয় ফিকে বেগুনি গোলা সাদাটে পেটের পেঁয়াজ একটি।
অল্প অল্প দোলে।
কাঁচা মরিচের চিকিমিকি সবুজ মতো হিলহিলে শরীর পায়ে নিয়ে থালা ভরা ভাতের রাশি দোলে,সীমের চ্যাপ্টা ঘষা সবজেটে মতো টুকরো টাকরা গায়ে নিয়ে টাটকানি মাছের ঝোলের বাটি দোলে, স্বামীর পরিতৃপ্ত মুখে গরাস গেলা দেখে বউয়ের বুক সেই সে দূরের পাড় ঘেঁষাঘেঁষি ক্ষেতের মতো গাঢ় সবুজাভ এক ধীরা খুশাল দুলুনিতে থিতু হয়। ঈষৎ মেটেল গাঙের জলের ঘটিতে সেই মিঠেল মুখখানি দোল খায়।
লাজানিয়া চাউনি স্বামীর থেকে ঘুরিয়ে নাইয়ার আদরিণী বউ চোখ বসায় আদুল কচিটার আদুরে মুখে।
খোকা শুয়ে থাকে ত্যানা ন্যাকড়ার ওমে গুমসুম। কচি পাকা ধান রঙা মাজায় কালো কারে গাঁথা জালের কাঠি নাভীর নিচটায় শুয়ে থাকে ওরই মতো গুটিসুটি। পাহারাদার সে। খোকার বাঁচন আর জ্বীন-পরী-বুরি নজরের চোখের মাঝে দেওয়াল তোলে।
সে দেওয়ালও দোলে খুবসম্ভব।
খোকা হাঁচি দেয় ঘুমঝিলে ডুবন্ত। নড়ে ওঠে জালের কাঠি।
হেই সামাল!
বাতাসের গতিক ঠাওরায় নাইয়া। ভোরের গাঙের বুক জুড়ে ভীড় করেছে ফুটন্ত ভাতের হাঁড়ির মুখে উড়তে থাকা ভাপেরা। নজর চলেনা বেশী তক্। কিন্তু হাত জড়ো করার তো উপায় নেই। বিবিবাচ্চা এক জাহান ভরসায় বুকজুড়ে মুখ ডুবিয়ে। মাছ ধরতেই হবে, নাও বাইতেই হবে। মহাজনদের হাঁ তে কামটের দাঁত। ভাশলে জাল কাঁধে অনুভবী মন বৈঠা আঁকড়ায়।
হেই সামাল!
...
ব্যাথারা বসত করে।
পাড়ের উপর শিকড় গেঁথে সংসার ঠ্যালে দুলি বাগদীর দিবানিশির যাপন।
প্রতিপলে যন্ত্রণাবদ্ধ প্রতিপলে ভাঙচুর।
গাঙের ঘাটে ঘড়া ভরে দুলি বউ। পেতলের সোনাল মাজা ঘড়া গবগবিয়ে জল গেলে। ঘাটপাড়ের ঘোড়া নিমের কাঁটায় দুলি বউ কঁকিয়ে কাৎরিয়ে ফোস্কা গালে।
অল্প অল্প ফোলে।
চাকা চাকা গাঢ় অবমাননা মতো রক্তালু দাগ বসা পিঠ ফোঁপানিতে ফোলে। সূর্য বসা পাটের মতো বিষন্ন রক্তিম দাগী চোখের উঠোন যাতনায় ফোলে। জমাট আঁধারি বুকটা হাহাকারে গলাচেরার মতো রক্তমুঠি পেষণে ফোলে। ঘাটের পৈঠায় হাঁটু মুড়ে বসে দুলি বউ ডুকরে ডুকরে ফোলে। ঈষৎ মেটেল গাঙের জলের ঢেউ আরশিতে সেই মেঘেল মুখখানি ফুলে ওঠে।
দুখিয়ারী চাউনি কোলের থেকে তুলে বাগদীর অভাগিনী বউ চোখ রাখে ঘ্যানঘ্যানে আকাশের নিস্তেজ সূর্যের মুখে।
রক্তাল্পতার গ্রাসে রাহুগ্রস্থ ক্ষেত খামার নদী মাঠ গ্রাম। সবেরই উপরে ছাই রঙা অস্পষ্টতার পর্দা। ঘোলাটে ঘষা কাঁচের বিষন্ন দেওয়াল উঠেছে যেন চোখ আর চরাচরের মাঝে।
সে দেওয়ালও ফোলে খুবসম্ভব।
দুলি বউয়ের কোঁকানি আছড়ায় অদৃষ্টের আখরে। উত্তরে হাওয়া ঘা খেয়ে ঘাই মারে।
হেই সামাল!
এই গাঙেরই দূরের বাঁকে এক গঞ্জে জন খাটে বাগদী। আজ ডুব দিয়েই ভিতরে জানান পেলো জলে বড়ো কান্নার মিশেল। বুকজলে দাঁড়িয়ে নিজের গাঁয়ের পানে চেয়ে রইলো আবছা দৃষ্টিতে। বউটার বড়ো মুখচাপা, মা আর বোনের বড়ো মুখনাড়া স্বভাব। আন্দাজ করতে চাইলো ইদানিং চ্যালাকাঠের কটা ঘা রোজ বরাদ্দ মেয়েটার। স্বামী যথেষ্ট রোজগেরে না হলে একত্তর থাকা সংসারে বউয়ের বড্ড খোয়ার। শরীর শক্ত হয়ে যায়। গামছা কাঁকালে মরণপণ মন আজ আরোও দশ বস্তা বেশী বওয়ার কসম আঁকড়ায়।
হেই সামাল!
নদী সবটা দ্যাখে।
নদী সমস্তটা জানে।
এর নাও ঘরের দাওয়ায় ওর ভিত ঘরের চৌকাঠে খলবলিয়ে বলে যায় একই বুলি।
হেই সামাল সামাল।
সকাল আসবেই!
...
আশারা বসত করে।
No comments:
Post a Comment