Thursday, September 12, 2019

ল্যাম্পপোস্ট

কয় খাবলা চলটা উঠেছে ,জ্যাবড়া ছালা জং ধরেছে,
পরশুই, ছোপধরা দাঁত রঙের বাল্বটা উধাও হয়েছে ;
সেই ব্যাঁকা অশ্লীল কার্ণিক মারা ল্যাম্পপোস্টটার সঙ্গে সেইই ওই-খসলো আঁচল আর চুনে ধ্যাবড়ানো মুখের মালকিনের সাযুজ্য মারাত্মক রকম।

আঘাটার পারম্পর্য। ঘাঁটা লিপস্টিক।

একফালি হাইওয়ের ন্যাতানো টুকরো মাঝে, এধারের
রেল সিগন্যাল থামের পিঠপানে ওধারের গলা বুক বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্টটার অদ্ভুত গায়েপড়া অথচ খেঁকুরে ঢংটাও, সাদৃ‌শ্যে লাজখই চিবানির সঙ্গে ষোলআনাই ম্যাচিং একদম।
...
 এককালের স্বপ্নিল রঙ মিলান্তি বাত্তিদান।
জওয়ানি কে চার, চল আট, আচ্ছা বেশ বার, ঠিক আছে রে বাবা, ষোলও দিন।
ছাগলের ঢুঁসোনো, কুকুরের ছিটোনো, যাবতীয় শিথিলতা সিধের মহৌষধ-পাত্তা জড়ানো পাবলিকের একমেবাদ্বিতীয়ম পিচদান।
...
এক একটা দিন ঝুম বারিষের হয়।
থইথই সাইড লাইনে মালগাড়ি পড়ে থাকে পচে ঢোল দাঁড়াশ। হাঁড়িয়ার অস্পষ্টতার মত সমস্ত দেখা যায় আবার অদেখাও সবটাই। সেই কাকভোরের কিছু আগে ল্যাম্পপোস্টে হেলান দেয় লড়ঝড়ে এক সাইকেল।

সিগন্যাল অন হয়। সাইকেল স্থির।

আকাশগঙ্গা সড়সড়িয়ে নেমে আসে।
এক ঝটকায় পেঁচিয়ে ধরে সাদা মুখের পরিধি আর কালো শরীর। খানিক পরে দৃশ্যপটে অর্দ্ধনারীশ্বর সাক্ষাৎ।  ল্যাম্পপোস্ট ফুঁড়ে লকলকিয়ে ওঠে কুলকুণ্ডলিনী। চিনি পোড়ার গন্ধ ভাসে বাতাসে।
খাড়া উড়াল।

পূরবী

হাওয়ার ঝাপটা আসা খোলা জানলার গা ঘেঁষা টেবিলটার উপরে হাট করে রাখলেও সব উপন্যাসের সব পাতা ফরফর করে ওড়ে না। পড়াটা মসৃণ হয় না। লক্ষ করলে কারণ জানাও যায়। আর্দ্রতা।
সব বাতাস দখিনা হয় না যে, কিছু জোলো হয়।  স্যাঁতস্যাঁতে।
বড্ড ভারী। কামিনী গন্ধের চলন।
জল গিলে গিলে সেঁটে থাকে পাতারা, একে অপরের শরীরে। টিঁকে থাকার পারস্পরিক অবলম্বন। লেপ্টে থাকা পাতাদের দুই আঙুলে ঘষটে ঘষটে আলাদা করতে হয়। তবেই এগোয় উপন্যাস। হাওয়াটা বয় তখনও, তিরতির।
তার শুভ নাম, পূরবী।

প্রত্যহ যাপনও কেবলই ইমনকল্যাণে গড়া হয় না। এর সঙ্গে দরবারী'র আখমাড়াই কলে নিংড়ে নিংড়ে বিন্দুবিন্দু টনটনে অনুভবে তৈরী হয় যে বেঁচে থাকা, সেটাই সম্পূর্ণ অস্তিত্ব। ছটফটানি স্বাভাবিক। আরও স্বাভাবিক ছিঁড়েখুঁড়ে ছিটকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা। কিন্তু সঠিক নয়।
নিজেকে গড়তেই পিষতে দিতে হয়।
শুদ্ধ পীড়ন বড় অমূল্য প্রাপ্তি। জীবন যখন ক্রমাগত পিষে পিষে একসময় খামচে বের করে আনে এক খাবলা দেওয়ালে ঠেসান দেওয়া শ্রান্ত যন্ত্রণা, সানাইরঙা বিকেলে একরাশ শিউলি জড়ো হয় এলোমেলো কোলে। গভীর একাকী স্বরাট ডাক ওঠে নাভীমূল হতে।
তার শুভ নাম, পূরবী।

ছুটি দাও

শ্রাবণ দশমীর সাঁঝ চাঁদ বাবার জ্বালানো  "পড়তে বস" দেওয়ালগিরির আলো।
লণ্ঠনের কাচে জমেছে কোটি সনের ইচ্ছেধোঁয়া বিস্মরণ।
তাকে হটাবার স্পর্ধা-স্পর্শ পেলেই স্পষ্ট কাটে বুড়ো আঙুলের গোড়া, কড়ে আঙুলের ভিত।
ছিটকে উঠে বিরক্ত রক্তাক্ত হতে হতেই দেখতে পাই,
আলোর যন্ত্র উঁচিয়ে ধরা একটি হাত, মৃদু গৎএ ভাস্বর করছে সেই চোখ নাক ঠোঁট গাল কপাল।
আলোর বৃত্তে চিরপ্রশ্রয়ী মুখ।
অনুনয়ী চোখ ঠোঁট নিরুচ্চার, অথচ চন্দ্রসভার স্থবির তারা-বুলি শুনতে পাই,
"তবু পড়তে বস। কত কী বিনছোঁয়া থেকে গেল বল তো!"

অগত্যা পাতা ওল্টাই।

চরিত্রগুলোর পাশ থেকে কিছু মুহূর্ত আলগোছে হেঁটে গেলে চোখে পড়ে,
জামাগুলো সব ছাপাছোপা বিভিন্নতর হলেও,
ছাট সবকটিই একথোকা নির্দিষ্ট ঘেরের।
চাউনি কানপাতা কথাবলা এসব নজর করলে অবশ্য বেশ ঠাহর হয় ,
খোলস নাট্যকারের মর্জিমাফিক পেঁচিয়ে রাখলেও,
জিভদাঁত আগ্রাসী হিংস্র রকমফেরের।

অকথ্য যন্ত্রণা পাই।

অন্ধকার বড় মায়াভরা।
দেখার আরাম জড়ানো সাদাকালো ছবি, 
থাকার আরাম চোঁয়ানো গর্ভের উষ্ণতা,
ছোঁয়ার আরাম বিছানো রবিবাবুর গান,
সেই গোছের মায়াভরা।

এবারেতো ডুব দিই?

আবারও ভেসে ওঠে সেইই চোখ নাক ঠোঁট ...

ছুটি দাও,
প্লিজ ছুটি দাও।

আজ্ঞে!

মেয়েটার নাম ছিল ঘটিদের ফুলকি,
বাঙাল ছোঁড়াতে গেল দিল্ তার ছল্কা,
হাতে ছুপে এঁকেছিল শান্তু'র উলকি,
জানাজানি দুতরফে ঝাঁকে ঝাঁকে উল্কা!
যতই তেড়িয়া দাদু সময় তো কলকি!
সে দুয়ের আশনাই নয় সেও পল্কা,
শ্যামের ডাকেতে কভু রাখা যায় কুল্ কি?
কনে সাজে চাঁদমুখে চন্দনি কল্কা।
হেঁকে আসে কনেঘর "এ ষড়ের মূল্ কী?"
অপমানে বরঘরে ফুঁসে ওঠে হল্কা!
বরকনে জড়োসড়ো "হিঁচড়োবে চুল কী!" 
বন্ধুরা ঠেলে তোলে শ্যালদা টু কাল্কা।

মা বাপের মন তো রাগ ঝাল কয় ক্ষণ? "আমরা মেনেই নেব, এই স'তে বল গে!"
মোহনবাগান নেয় সরভাজা দুইমণ। ইষ্টবেঙ্গল দেয় "ইলিশ টা..." "আজ্ঞে!"

Saturday, July 27, 2019

বিষণ্নতা

- নৃশংস বিষণ্ন কাউকে দেখেছিস কখনও সুপূর্ণা?

- কী?

- এই ধর চর দিগর বিধ্বংসী এক সাগরী ঝঞ্ঝা, তার আগ্রাসনের কর্কশ চিহ্ন ছড়িয়ে, দাজ্জাল তাণ্ডব সেরে চলে গেছে কিছুমাত্র আগে,
কিছু পরে হয়তো দাঁড়িয়ে আছিস সেই ক্ষোভে ফুঁসে চলা প্রতিস্পর্ধী নদী মোহনার পাশে,
দেখতে পাবি তাঁকে।
আবার ধর নোনতা বালিয়াড়িতে এক ইবলিশের বাচ্চা ঢেউ, ব্যাঙের লাখান জিভ বিছিয়ে, নাগাল পাওয়ার পর মুহূর্তে সড়াৎ গিলে ফেলেছে তরতাজা ছেলেটাকে,
সেক্ষণে দাঁড়িয়ে আছিস সমস্ত বোধ ঘুলিয়ে যাওয়া মায়ের পাশে,
দেখতে পাবি তাঁকে। 
নাহ, পরাভূতের দিকে চাইলে হবে না। পরাক্রমীর দিকে চাইলেও হবে না।
খলখল করে ঝাঁপান জোড়া ঢেউ পেরিয়ে চাইতে হবে প্রাত্যহিক রাক্ষুসেপনার ওধারে।
আত্মপক্ষ সমর্থনের কচকচি সরিয়ে, যেখানে গাঢ় অতি গাঢ় কালচে সবুজ জঙ্গম প্রান্তরেখাগুলি ধারণ করে আছে আদিগন্ত বিস্তৃত এক রাশ পিত্তিরঙ যন্ত্রণা,
যেখানে প্রতিপল অগণন জমাট পিণ্ড হতে চাইছে লুকোনো অনুশোচনা, সেই পানে চাইবি।
তবে দেখা যাবে।

- এত শক্ত কথা আমার বুঝতে ইচ্ছে করছে না রণজয়। সহজ হ। আমার তাড়া আছে।

- বেশ, তবে নিত্যদিন আঁচড়ে খামচে খোকার দুধ খেয়ে যাওয়া বেড়ালটাকে গর্তে পুঁতে ওজন সমান লবণ জলে ঢালতে যাওয়া খোকার মায়ের চোখের দিকে চেয়ে দেখিস একবার।
গোক্ষুর যখন মেঠো গুঁড়ো ওড়ায় দৃষ্টি সীমা জুড়ে।

- ঘন অভিমানী এক নৃশংস বিষণ্ণতা।

- এই তো! বেশ বুঝেছিস খানিক খানিক। এতেই হবে, কিম্বা, যেটুকু বোঝার বাইরে রয়ে গেল সেটুকুর জন্য... নিজের প্রতিবিম্ব দেখতে পারিস। আজ। লাল হলুদের ছোপ ধরা এই নিমন্ত্রণপত্রটি হাতে রেখে। কেমন?

- রণ! 

- মনকে ছুঁয়ে যে মিথ্যে বলা যায়না রে পাগলী!

সবই মায়া

সখা লিখিল (ফুঁসিল) :
হটাৎ যদি খুঁজে পাস তারার ফুল
ঝপ করে গেঁথে ফেল ঝুমকার দুল।
আচমকা হাতে এলে সুয্যির তার
টপ করে বুনে নিস হাঁসুলির হার।
ফাঁকতালে জুটে গেলে ফুলছাপা মথ
তক্ষুনি গড়ে রাখ ঝিকিমিকি নথ।
সেজে এতে অবিশ্যি জুটবেনা বঁধূ
সে বড় কঠিন ঠাঁই পণ মাঙা জাদু।

কালোকোলো ছায়া : (জটিকুটি পার করাব, স্রেফ
কার্ডভরা টাকা আর সুরত দে মাখা কষে আটা।)

সে লিখিল (ঢুঁসিল) :
এরে বুঝি লেখা বলে?কোবতেটা ক'য়?
প্রেম ট্রেম না হলে কী কাব্যিটা হয়!
ভাব সাব বেড়ে হলে কলম রকেট
রাশি রাশি লেখা ভরা ঝোলা ও পকেট।
ফেনিয়ে ফেনিয়ে প্রায় গ্যাঁজা তোলা সুখ
সাহিত্য সফল হয় উথলে চিবুক।

ঢলোঢলো কায়া : (ছানাকাটা দুধ বিকোব, ব্যস
সর লাগা গা'টা আর পরত দে টসটসে মাঠা।)

আমি লিখিলাম (চাটিলাম)  :
ঠেলে ঠুলে গাছে তুলে দিক না মানুষ
বুঝবি মই গ্যেঁড়েছে ফিরলেই হুঁশ।
যতই অখাদ্য হোক পদ্যের হাল
সাবধান! কাটিসনি কুমীরের খাল।

টলমল ভায়া : (সত্যিটা এইবার বলব? আচ্ছা
ঘাঁটাসনি ঘা টা আর হঠাহ্ শাওন কি ঘটা।)
...
শেষমেষ আমি সে ও সখা সমেত যাবতীয় ছায়া কায়া ও ভায়া একলগে খাড়ায়া এবং সমস্বরে শুধায়া  :
- কাকু, ইয়ে কীরম দাঁড়াল? মানে, পদ্যটা।

- মায়া রে। সবই মায়া।

খাঁটি সোনা

যদি বোঝো দিয়ে গেল লোকে পাকা বাঁশ,
বিলকুল না ঘাবড়ে তেড়ে বাজা কাঁস।
ধেইধেই নাচুনিতে জম্পেশ গীত,
সে লোক তো ভুলবেই রাগে হিতাহিত।
ছেতরিয়ে ঘিলু সম ফাটে কৎ বেল,
পড়ে যেন চাকা তলে ভীমগতি রেল।
মুণ্ডু হবেই তার ক্ষোভে ষোল খানা,
চিক্কুর পাড়বে সে, "আরও বাঁশ আনা"।
পিছু হঠা নৈব চ যত খুশি দিক,
তুমি শুধু সিধে রেখো শিরদাঁড়া ঠিক।

পাথরে পাথর ঘষে জ্বলেছিল আলো,
হাজারো জন্ম পার ঘোচাতে এ কালো।
জীবনের একজাম সোজা নয় মনা,
অসংখ্য চেকমেট গড়ে খাঁটি সোনা।

Friday, July 19, 2019

অকিঞ্চন

দেখা হবে।
এই শব্দ দুটির ঢেউ
নেতিয়ে পড়া পুঁইয়ের শরীর ঠেলে দেয় খাড়া মাচার আপাত নিরাপত্তায়।
অজস্র টোল পড়া বালতি ঠেলে দেয় রুখাসুখা কুয়োর শেষতক জলতলে।

দেখা হবে।
এই শব্দ দুটির সুর
মা পাখির পাঁজরে একমুঠো জেদ ভরে ডাক-খেকো দাঁড়াশকে থমকে দেয় দূর হঠো দূরত্বে।
জংধরা হাতলে পোয়াটাক বিশ্বাস ভরে লড়ঝড়ে সাইকেল দাঁড় করায় লাল ওড়নার খোটে।

আকিঞ্চন দেখাখানা হল কী হল না, এটা দেখতে কিঞ্চিৎ অপেক্ষায় থাকতে হয়।
একটা বা দুটো অকিঞ্চন জীবন।

আমরা বড় ব্যস্ত।

Wednesday, July 17, 2019

ক্রূরভদ্র

বুকের ভেতরে যে ইয়াব্বড় পাঁচিলটা আছে ভাঙাচোরা পাঁজরগুলো বেড় দিয়ে, তার গা বোঝাই শ্যাওলা চিরে দুকলি মিঠে সুখী বুলির আঁচড় কাটতে গেলে ঠাহর হয়, এতে দিবারাত্র ঘাই ঠেলে ওঠে শোকের জল, দুঃখের জল।
কালাচ নীল জল।

সে শোকের ঝাপটা এড়িয়ে প্রত্যেকটি দিন পেরোনো ক্রমে ক্রমে এক একটি জগদ্দল গুঁতিয়ে এগোনো পারা, আর এরপরও সেসব প্রাপ্য প্রাপ্ত ঠেলেঠুলে একপ্রকারে দিন কাটানোর চেষ্টা পেতেই, তেতে-ফুঁসে ওঠে রাগের জল, ক্ষোভের জল।
গোখরো খয়েরী জল।

এই কেঁচো-যাপনের হাঁচোড়পাঁচোড়ে যত ঘাইগুঁতো খায় আত্মমর্যাদা নামক বেলোয়ারি ঝালর, যত নিলাজ টানাহ্যাঁচড়া চলে বেঁচে থাকা আর টিকে থাকার গেরস্তে, ততই পাঁজরের খাঁজ চুঁইয়ে ফিনকি গড়ায় ঘেন্নার জল, বিতৃষ্ণার জল।
বোড়া সবুজ জল।
...
এইবার
সমস্ত রকম ঘ্যানঘ্যানে কষ্টগুলোকে বস্তাবন্দী করে, ঘেঁটি ধরে এক্কেবারে বেড়াল পার করিয়ে আসি।
তারপর
বিষাল রস ও খল ঔরস মিলে যাক কুটিল গর্ভে, জন্ম নিক এক জান্তব জাতক- ক্রূরভদ্র যার নাম।

Friday, July 12, 2019

নীলকণ্ঠ

প্রতি রাতে সাগরের পাড় আসে স্বপ্নে। পিঠের ওধারে রেলব্রীজ।

সোঁদা বালুরাশির বুকে ঘাই ভাঙছে ধোঁয়াটে শাদা ফনাওয়ালা অজস্র জলজ পাহাড়। ভাঙা চলছে জংধরা ঢেউটিন গড়নের বালিয়াড়ি। এই গুণলে দশ কী বারো পা দূরে।

প্রতি রাতে সাগরের পাড় আসে স্বপ্নে। পিঠের ওধারে রেলব্রীজ।

চারটি ধার টুকটুকে তাঁত পাড়ে মোড়া মাদুর বিছানো। চিনেবাদামের কোটর যত্ন করে গুছিয়ে রাখা ফক্কা ঠোঙায়। কেবল কিছু কালচে লালচে ফুরফুরে খোসা বেলাগাম ইতস্ততঃ।

প্রতি রাতে সাগরের পাড় আসে স্বপ্নে। পিঠের ওধারে রেলব্রীজ।

মোমরঙের খাটোমোটা টুকরোরা ফ্রকের মেলে রাখা কোঁচড়ে লুকোচুরি খেলছে। শাদা কাগজে ফুলে ফুলে উঠছে একটা সমুদ্র আর খান চারেক কালোকোলো নৌকো। ক্রমাগত উড়ে আসছে বালি রেণু।
...

রেলব্রীজের টঙে একলা দাঁড়িয়ে ওপরমুখো চাইলে নিঃশেষে মিশে যাওয়া যায় নিঃসীম এক গাঢ় নীল শ্লেটে।
স্বপ্নে ভাসা তীরে একলা দাঁড়িয়ে চোখ মুদলে দেখতে পাওয়া যায় পায়ে পায়ে এগিয়ে চলা, মেঘলা নীল বাবাকে।
...

নীলকণ্ঠ হই।

Friday, June 28, 2019

হাসিটা...

অজস্র বাঁকাচোরা রক্তবাহী ভর্তি মাছধোয়াজল-রঙা স্কেলা আর মাঝখানে ঈষৎ বাদামী আইরিশ , চোখে পড়লেই এমন চোখ, বিদ্যুত স্পর্শে ঝিনঝিন করে ওঠে কপালের দুপাশ।
কাশির দমকে কাঁপছে গলার পাশ থেকে কিছুটা সরে কাঁধের মাঝবরাবর শোয়ানো পৈতে আর সামান্য ঠেলে ওঠা চওড়া পিঠ, দৃষ্টি আটকালেই এমন শরীর ভাগ , ঢেঁকির পাড় দেয় বুক।
অস্বাভাবিক উঁচিয়ে জেগে থাকা কণ্ঠমণি আর দুই ক্ল্যাভিকলের মধ্যেকার ছোট্ট গভীর গর্ত, নজরে এলেই এমন গলা, শুকনো খুলির ভেতরে ছোটাছুটি করা হাওয়া শিঁ শিঁ ডেকে নাক কানের ভেতর বাইরে বয়।

শীত জাগে। খুব। গলায় ব্যথা ওঠে। খুব।

পরিশিষ্ট :
হাসিটা কিছুতেই দেখতে পাওয়া যাচ্ছে না। কিচ্ছুতে না।

Sunday, June 2, 2019

একই কি?

যে স্বপ্নবাঞ্ছা জীবন বাঁচা হয়নি এবং হবেই না জেনে ফেলাটা হয়ে গিয়েছে নিশ্চিত, সে মধ্যে মধ্যে ডাকাডাকি জোড়ে ডাকনাম ধরে।
বোল মোহনিয়া।

দেউড়ি চৌকি দেয় শক্ত ঠোঁটের স্বভাব যাযাবর।
বাজুবন্ধ খুল্ খুল্ যায়।
হ্যাঁচকা কালা-বদর।

একজোড়া খরখরে চোখের টংএ রাখা বেভুলমনস্ক ভুরুর জ্যামিতিতে আঁচড় পরে, ছাতার ভাঙা শিক আরও এক গাঁট ভাঙন সয়।
টান দীঘলিয়া।

আজন্ম কাঙ্ক্ষিত প্রবাহে চড়ে বসি জন্মের শোধ ।
ম্যায় চলি পিয়াকে দেশ।
সম্বল কলার বাসনা।

বকের পাখা আর অঙ্ক কষতে বসা খাতা, দুইই শাদা। কিন্তু, একই কি?

Wednesday, April 24, 2019

আকাশগঙ্গা

আঁধারে আজকাল আর আধার খুঁজে পাইনে।
মন অতিমাত্রায় হানটান করলে
তারাদের গান শুনি।
তারারা সব স্থিত মন্দ্র সপ্তকের গজগামিনী চলন ভাল বাসে।

আঙিনায় মিলায় যে ধূয়া তা হারায় উঠোনে ।
নাভীটানের ডাক পাগলপন্থী হলে
তারাদের গান শুনি।
তারারা সব ইলা-কূলে ব্যাপৃত মেঘজলজ কারুণি ছুঁয়ে হাসে।

আদপে প্রকৃত প্রস্তাবে,
ডেক চেয়ারের দিব্যি, সমুদ্রের গানই খুঁজি আকাশগঙ্গায়।

Tuesday, April 23, 2019

প্রতীক্ষায়

এক একটা সন্ধ্যায় দাঁড়িয়ে মনে হয় এই তো রাত্রি এল।
এই তো কাজলি আলোতে মিশছে,
সন্তাপ আড়ালি কালো।

এবারে এগোই তবে?

নির্নিমিখ কেউ ডাকছে।
বড় একলা কেউ।

শ্রীকল্যাণ হতে চন্দ্রকোষ। যাত্রাপথ।
গাঢ়তর থেকে আরও গাঢ়। প্রাজ্ঞরাত।

অপেক্ষা কর। আমিও যে প্রতীক্ষায়।

Sunday, April 21, 2019

নাওটি একাই বাই

এ জীবন কবিতার নয়।
অনিবার্য অক্ষরগুলো সরিয়ে রাখি, নিষ্পন্দ। 
কৃতঘ্নকে শুধোইনি, কীকরে এমন পারলে সে!

প্রাপ্য তো কিছু থাকে না আকিঞ্চন যাপনে।
শুধে সে কৃতঋণ, সান্ত সম্বল চীর।

যাচ্ঞা , হ্যাঁ, তা আছে এক।
কেবল প্রস্থানপথ সামান্য মসৃণতর হলেই,
আভূম কৃতজ্ঞ রই।
...

এ জীবন বিবাদের নয়।
অনির্বাণ ক্ষোভেদের আড়ালে রাখি, নিশ্চল।
বঞ্চককে শুধোইনি, কীভাবে এমন করলে সে! 

ধুলোট বাঁচাটা এগোচ্ছে এক্কাদোক্কা চলনে।
দখিনা নদীমুখী, পথ নিশান স্থির।

বাঞ্ছা , হ্যাঁ, তা আছে এক।
কেবল শঠী প্রতারণা কিছুমাত্রা কম হলেই ,
নাওটি একাই বাই।

ভালই বাসিনি?

যে শোক কোনকালেই উপলব্ধি করিনি আমি তারজন্য আশরীর ছিল পিপাসা তোমার।
যে ব্যথা কোনকালেই অনুভব করনি তুমি তারজন্য আনখশির ছিল তেষ্টা আমার।

যে শোক কোনকালে কাঙ্ক্ষিত ছিল, আজ তাতেই চূর্ণ আমি।
যে ব্যথা কোনকালে ঈপ্সিত ছিল, আজ তাতেই দীর্ণ তুমি।

চূর্ণী, আমরা কি কোনদিনই অমূলক আলোয় ভাসিনি?
দীর্ণা, আমরা কি কোনদিনই অমোঘ আঘাতে হাসিনি?
ভাসিনী, সত্য বল।
আমরা কি কোনদিনও ভালই বাসিনি?

ভাষান্তর

চাঁদের কলার মত তিলে তিলে ক্ষয়ে চলে
দুজনের যাবতীয় গুনগুন কথা।
মনমরা আমিগুলো বিজগুড়ি কাটে, কাতরায়।

একরাশ ফোস্কায় বন্দী পুরোনো সুখের সময়।

ক্রমাগত ঝুঁকে ঝুঁকে আজকাল ঈগলুর বাসিন্দা প্রায়
ন্যূনতম বিচারের বোধ।
তবু ফিনিক্সের যমজ এই চাঁদ বাঁচে, সাঁতরায়।

আচ্ছা, একবার ভাষান্তর ঘটানো যাক?

Tuesday, April 16, 2019

পাচ্ছি না

ফিকে গুঞ্জন প্ল্যাটফর্মে মাকড়সার দাঁড়ায় ভরা ন্যাড়া গাছের পাশ দিয়ে ট্রেন এগোয়।
সবজেটে পূঁজের খাল পাড়ে অ্যাবানডন্ড কেবিন হাউজের পাশ দিয়ে ট্রেন এগোয়।

আয়নার সামনে দাঁড়াই।

এত বৃষ্টির ধার এত বৃষ্টির ছাট
কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছিনা।

Wednesday, April 10, 2019

পাঁক

মেয়েগুলো
সেতু খুঁজে চলে অবেলায় গাঁথা গুম কথাদের মোড়ে,
বিকেল আলোয় বিগতশোভনা নটী সাজা খেলো ঘোরে।
মেয়েগুলোর
নষ্ট ঠোঁটের দিব্যি দিলাশা ছিঁড়ে নেয় চোখা দাঁত,
বেওয়ারিশ ঘোলা রক্ত ও রসে কুলকুচি করে রাত।

ছেলেগুলো
বীভৎস এক বিষণ্ণ ক্ষোভে খেউড় স্রাবী তোড়ে,
মানু‌ষের যত আকুল আদর থেঁতলে পিষছে জোরে।
ছেলেগুলোর
ফুটিফাটা থাইয়ে মুখ ঘষটায় মেহেন্দী রচা হাত।
ঘণ্টা প্রতি তূরীয় বাঁচায় গোটা ঠেক আজ মাত।
...
আমাদের
আড়চোখে জ্বলা লেহন লুকাই,
বাক্! বোল্ !
বাহারে দেখ না সব ঊর্ধরেতঃ দাঁড়কাক।
আমরা
সন্ততি যত আঁচলেতে ঢাকি,
ওয়াক্ ! থুঃ!
আদিম তড়াগে ঠাঁই গা ঘিনঘিনে যত পাঁক।

সন্ধ্যাগাছ

ব্যর্থ প্রেম জড়িয়ে আছে হুতাশ বিকেলের আঙুলে।
ফণিমনসার কুঁড়ি মেখে আছে উদগ্র নিশির ডাক।

প্রান্ত-ঠাঁই নিমফুলে সান্ত্বনার খোঁজ উদ্বাস্তু আলকুশি বীজের।
হিংসুক হাগড়া হাতায় নিরিবিলি গর্ভ পাতে মধুমেওয়া ফল।

খুড়াকাঁটা স্পর্শে যন্ত্রণাদীর্ণ প্রত্যেকেই আজ
মনমরা নক্ষত্র ছুঁয়ে,
এক একটি সন্ধ্যাগাছ।

একটু

মুহূর্তেরা সদ্য গ্রন্থিবদ্ধ।
রচিত মাল্যের প্রতিটি পল-পুষ্প অনির্বাণ জাগরূক।

পূর্বস্থ বাতায়ন উন্মুখ।
দিগ্বলয় লোহিতদেহী অর্ষমার সরণে ত্বিষার্চি প্লাবিত।

তৃপ্ত যূথযাপন। 
শ্রান্ত যূথচারী।
একমাত্র ঈপ্সা জাগরী :
একটু ভাল থাকি?

কার দিকে?

আকাশের কটি স্বেদবিন্দু ছুঁয়েছিল হঠাৎই এক রংচটা মাজাভাঙা ইট।
তারই খাঁজে ডেরা ঘরে শুয়েছিল এক শুঁড়ছেঁড়া ঘোলাটে বোবা কীট।

শুষে নেওয়ার তীক্ষ্ণ প্রতিযোগিতা।
শুরু হল।

কার দিকে আঙুল তুলবে হে?

দেখা মেলে না

কথা দিলাম নোনাজল অধিকৃত জমিজিরেত, ফেরত নেবে বুক।
কথা দিলাম খাঁচা ভেঙে কাঁধে এসে বসবে, অলীক বাসন্তী সুখ।

স্রেফ কথা দাও, অনেকটা ঝড় হলেও ঝাউগাছের চূড়ো থেকে কচি কাকের আস্তানা পড়াটা আটকে দেবে।

দেবে?

কেবল অঝোর বৃষ্টি পড়ার মত চারপাশ গেঁথে চলেছে কেউ।
জলের আর দেখা মেলে না।

পরাজয়

ডানা ভাঙার পরে দেখা যায় তৃষিত আঁখিপল্লব ছুঁয়ে আছে সমস্ত পরাজয়।
ছুরি বসা পিঠে মুখ গোঁজা বিশ্বাসের লোভী ঠোঁট ভিজিয়েছে রক্তস্রোত।
ঘষটে ঘষটে এগোয় টিকে থাকা।

"ভালবাসা" আভিধানিক নড়াচড়ায় স্তিমিত।

নদী ও নারী

নদীর সাথে সই পাতায় নারী।
চেতনে বা অবচেতনে। অধিচেতনে জীবনভর স্বেচ্ছা বা পরেচ্ছায় বহতা ধর্মের অকৃত্রিম মিলই বোধকরি এক অনিন্দ্য গ্রন্থিবন্ধন করে দেয়।
তাই পরস্পরে দেখা সাক্ষাৎ হলেই অনির্বচনীয় আনন্দীদোল জাগে। এর ছপাৎ পা ফেলাতে ওর ছলাৎ আলতো ধাক্কা।

টলটল টলমল।

রূপোর পাঁয়জোরের চমকানি ঢেউয়ের রূপোলী ছটার ঝলকানির সঙ্গে তাল ঠোকে। নথ ঝাঁকিয়ে ছদ্ম কলহ। তারপরেই হাসির ঝর্ণা ধারা উভয়েরই স্নান সারে। প্রাথমিক উচ্ছ্বলতা মিটলে, থিতু হয়ে বসলে ঢেউয়ের ঘাই আর বুকের ঘাই এর নিজস্ব ভাষাচলনে চারটি দুখসুখের আলাপও সারা হয় ধীরে ধীরে।
চাওয়া পাওয়া চেয়ে না পাওয়া কিম্বা না চাইতেই পেয়ে যাওয়ার টুকরো টাকরা খতিয়ান। একলা দোকলা দেওয়া নেওয়ায় আট ছয়ের বা বারো দুয়ের ভাগাভাগিতে জুটে যাওয়া চোদ্দ সম্বলে, বাকি দু আনা পড়শি দিনে গেঁজে বন্দী হয়ে যেতেও তো পারে এই লোভাতুর স্বপ্নকল্প অপেক্ষায় মধ্যবিত্ত আজকালপরশু গড়ান গুজরান।

কলকল ছলছল।

তো এভাবেই একদিন আমার সাথেও জুড়েছিল নদী। সবাইকারই যেমন জোড়ে। যে কোনও মুহূর্তে এক উপায়ে স্রোতস্বিনী আলতোভাবে দৃষ্টি ঘরের চৌকাঠে এল কী কুলকুল করে জেগে ওঠা অকারণ খুশিদল জাকুজির মত নিমেষে ভিজিয়ে দিত বুকের আনাচকানাচ। থোড় বড়ি খারা যাপনের নানাবিধ বঞ্চনা পরবর্তী জঞ্জাল পলকে সাফসুতরো। গড়ে উঠতাম। ভরে উঠতাম। তৃপ্ত হতাম। জীয়ন সম্পৃক্তি বাড়ত বেশ খানিক। স্নেহ প্রেম যৌনতা ঈর্ষা একাকীত্ব সমস্ত বোধের আসঙ্গী।
...
সব উলটিপালটি ইদানীং। তীব্র বিবমিষা জাগে নদীর নামোল্লেখ এলেই। তবু নিজেকে টেনে হিঁচড়ে পাড়ে দাঁড় করালে ওপারের আকাশ জুড়ে হানা দেয় দুটি ফ্যাকাসে কাঁপতে থাকা নীলচে শিরা জাগা পাতা জুড়ে গড়া অঞ্জলি। কিছু রাখা তাতে। নাহ, কণকাঞ্জলি নয় সে, তাতে ধরা আছে গলাগলা খুব কালো মাটি ঠাসা একটা খনখনে সরা ক্লান্ত জুঁই মালার নরম কঙ্কাল জড়ানো। ঘণ্টাখানেক আগে আনভিটা এক নাভীকে অজানা তীক্ষ্ণগন্ধী মাটিতে গুঁজে অচেনা তীব্রবুভুক্ষু তরঙ্গ গ্রাসে কৃত্রিম ভিটের খোঁজে পাঠানোর প্রক্রিয়ার সূচনা। পর ক্ষণ হতে অনাথ সোনাবীজ আশ্রিত যাপনে রয় খেয়ালী নাব্যতার।

থিরতাল টালমাটাল। 

আজকাল নদীর দিকে চাইলে আমি জল দেখিনা। নাভী দেখি কেবল। শয়ে শয়ে হাজারে হাজারে নাভী। জোয়ারে ভাটায় ষাঁড়াষাঁড়িতে অকল্পনীয় সংখ্যক নাভীর গলগলিয়া হুড়মুড়ানিতে শক্তিগর্বী একটি নাভীস্রোতা খলখল করে চলেছে। পিশাচী নাচনী এক। সাক্ষাৎ নিয়তি। বীভৎস দবদবা।

খলখল গলগল।

অসহায় নাচার আমি হারতে হারতে হটতে হটতে শেষমেশ নিজেকে কুঁকড়ে গুটিয়ে গুঁজে রাখার চেষ্টা করি আমার শেষ সম্বলে। বড় ঘরের শতাব্দী প্রাচীন খাটে। বাবার বিছানায়। বালিশের প্রায়ান্ধকারে।
আচমকা আমি টের পাই নদীর রকমেই স্রোত উথলায় আশরীর। বান আসে। মরণ সঙ্কোচনে হাহা ডাক ছাড়ে ব্যক্তিগত প্রয়াত নদী। প্রমাণ হয় সে আপাত প্রয়াণ। মরা নদীর সোঁতা চুঁইয়ে আসে আড়ালী ফল্গু বা শীর্ণা সরস্বতী।

তারপর ...

আমার ঘেন্না পায়। সবকিছু যা ঢেউয়ে আছে। আমার ভয় পায়। সবকিছু যা ঢেউয়ে বাঁচে। 
সেই সাথে নিজেকেও।
কারণ আমি জেনে গেছি প্রতিটি নারী, তরঙ্গত্রাস সত্ত্বেও, চাও বা না চাও, আসলে নদী।

Monday, March 11, 2019

অমোঘ

স্বপ্ন এক্তিয়ার ভুক্তির চারপাশটা ঘষা কাচে গড়া হয়। অতলান্ত তালশাঁস রঙা জলে জেগে ওঠে এক বা একাধিক প্রতিভাস। চৌকো চৌকো এক সার গেঁজে ওঠা কোটরে একের পর এক অ্যালবাম খসা নস্য-হলুদ পাতা মনভাঙা শুয়ে থাকে পাশ ফেরা।

স্বপ্ন ওদের কাতরে কাতরে ডাকে, হাটকায়, খোঁজে।

ওরা কেবল বেভুল ওড়ে, পড়ে এবং হঠাৎই হারিয়ে যায়। এ চলাচলে কখনো হয়তোবা একরকম নিশি টানে বুকের কোল ঘেঁষে বসে এবং নিয়তি টানে আঙুলের কোল গলে মিলিয়ে যায়। বুড়ো সেগুন পাতা ঝড়ের জাড্য ধর্ম বইবে এমনই ধারা।

চোখ এদের খিঁমচে খিঁমচে ধরে, আগলায়, জ্বলে।

অমোঘ মোহ।
অমোঘতর মায়া।
অমোঘতম মৃত্যু।

তবে, প্রেম?

Tuesday, February 26, 2019

নারী হও। মারী হও।

বড় সপাট হয়ে যাচ্ছ। বড় নিষ্ঠাবান রকমের একবগ্গা।
নরম হও। নত হও।

কমনীয় হও।
যেভাবে তৎক্ষণাৎ ঘাড় নুইয়ে বাতাসের অহং তৃপ্ত করে গমের বীরুৎ, সেভাবেই ঝুঁকে যাও।
নমনীয় হও।
যেভাবে গরিষ্ঠের হুঙ্কারে নিজ লেজের কুণ্ডলী দেখায় বেপাড়ার কুকুর, সেভাবেই গুটিয়ে যাও।
রমনীয় হও।
যেভাবে গর্বস্ফীতের অভব্যতা এড়াতে স্বেচ্ছা স্তব্ধ হয় প্রাজ্ঞগর্ভা স্বর, সেভাবেই থেমে যাও।

বড় সরল হয়ে আছ। বড় স্পর্শকাতর রকমের আবেগপ্রবণ।
জটিল হও। কুটিল হও।
...
স্বর্ণলতা দেখো।
আকর্ষে জড়িয়ে রাখে। আকর্ষে পেঁচিয়ে মারে।

নারী হও। মারী হও।
অরি হও।

Monday, February 25, 2019

কী করব?

চোখের পাতাদুটি থরথর করে উঠল। ছেড়ে গেল একে অপরকে। অনিচ্ছা মেশানো স্বাদ জিভে। আকুল যন্ত্রণা জড়িয়ে নিলো গোটা দেহ।

বৈঠা হাতে ধরা, মোষকালো জলস্থল।

হুশ ফিরল বুঝি। গোঙিয়ে বইছে গাঙ।
মনেও যেন পড়ল কিছু। ঝড় উঠেছিল। মারণ ঝঞ্ঝা।

...

নাওয়ের তালাশে বসা ঠাঁয়ে হাত বোলালাম। বামে ডানে চাইলাম। দেরী হয়ে যাচ্ছে বোধহয়। বাইতে হবে কে জানে কত সুমুখ যোজন।

বাঁও মিলবে কোন সে পরাণখাগী বাঁকে ।

হাতড়ে হাতড়ে এগোলাম। হাঁটু ঘসটে গেল হাতের পাতা ছড়ে গেল। টাল বেসামাল। নাও তো ঠাহর হয় না।
...

রক্ত চুঁইছে কষ চিরে। চুঁইয়ে চুঁইয়ে বেরোচ্ছে টাটকা হেরে যাওয়া।
বুঝতে পারলাম।
যদিও সে বৈঠা খানা মুঠোয় ধরা, নাওয়াল হবার জো নেই আমার। নৌকোচরের পাড়ে বসিয়ে গেছ।
গলুই তে নয়।
...
এতখানি একা। এতকাল পর।
এখন আমি কী করব?

Wednesday, February 13, 2019

কবে, বাবা?

কতদিন পরে খুনসুটি অভ্যাসগুলো অকিঞ্চিৎকর ইতিহাস হয়ে যাবে?
কতদিন পরে অভ্যাসবশতঃ অকারণ ডাকেরা সব স্তব্ধ হয়ে যাবে?
কতদিন পরে পাঁজর খিঁমচে গালের পেশী ছিঁড়ে হাসা বন্ধ হয়ে যাবে?

কতদিন পরে আমি কাঁদতে পারব?

তোমার কাছে যাব...
কবে, বাবা?

মরে যাওয়া

আকাশের ঘাড়ে গলায় লেগে থাকা শেষের আলো যে সেসময়ই সমস্তই মুছে গিয়েছিল এমনটা নয়। দিন রয়ে গিয়েছে এটা না বলা গেলেও রাত এসে গিয়েছে এমনটাও বলা যাচ্ছিল না অন্তত চোখ আকাশে রাখলে।
আসলে শ্যামলী কারোর মুখময় লেপা রূপটান মুছতে মুছতে এক দুই পোঁচ রয়ে গেছে যেন কোনও গতিকে, সেটুকু সেটুকু দেখনদার আলো, বাকিটুকু মায়াজড়ানো কালো।

সাঁঝ বাতি হাতে তুলসী তলায় দাঁড়িয়ে এক আঁকশি আকাশ ঠিক অমনপারা দেখে চোখ নামাতেই ঘাই উঠল।
আজ ঠিক তিনটে মাস পেরোল আমার বাবা মরে গিয়েছেন।

হ্যাঁ, অনেকেই মারা গিয়েছেন বলেন বা লেখেন, আমার মরে গিয়েছেন এটা বিশ্বাস করতেই ভাল লাগে।
মরে গিয়েছেন।
নিজে নিজেই মরে গিয়েছেন। বেঁচে থাকাটাও যেমন স্বশর্তে কাটিয়েছেন কোন সে কচিবেলা থেকেই। হাজারো ঝড় ঝাপটাতেও নির্বাচিত পথ পরিবর্তন করেন নি, ঠিক তেমনই মরে গিয়েছেন একসময় নিজের মনমতো খানিক গুছিয়ে গাছিয়ে।
অন্তত মারা যাননি কেউ বা কারোর দ্বারা এটা বাস্তব।
এতে ব্যাকরণগত প্রমাদ কিছু থেকে থাকতেই পারে, কিন্তু এই শব্দদ্বয়ের ফারাক আমার কাছে আজ এমনটাই।

বোকাবোকা ভাবনা। জানি। অত ক্ষমতাধর এ ধরায় কেউ নয়, আমার বাবার মত চূড়ান্ত ছাপোষা মানুষেরা তো ননই। জানি। তবুও ওটাই মানি। আসলে আমিও আমার বাবার মতই অত্যন্ত বোকা মানুষ।

তুলসী মঞ্চে প্রদীপ রেখে সামনে চাইলে দেখা যায় মঞ্চের পিঠ ঘেঁষে পাঁচিলটা, তার পরেই ছাইছাই পুরোনো পিচের আধভাঙা রাস্তার ওপাশে স্ট্রিট লাইটের ফ্যাটফ্যাটে সাদা আলো জুড়ে আছে পথ ও ওধারের খানিকটা, এরপর পোলের ওপাশে ক্রমশ আলো ক্ষীয়মান হতে হতে ডুবে গেছে জমাট নিকষ কালো তে। এ কালো বড় দমচাপা। ভয়াল। বড় জাগতিক আঁধার। বোল নেই, চাওয়া নেই, কেবল আগ্রাসী খিদে। অস্তিত্ব গিলে খাওয়ার, সবটা জোর নিংড়ে নেওয়ার। একলা, ভীষণ একলা বোধ করানো স্বার্থপর কুলিশ এ কালো।

ঠকঠক করে কেঁপে ওঠে গোটা ভেতরবাহির। গুটিয়ে যেতে চায়, কুণ্ডলী পাকাতে চায়। প্রাণপণে নিশ্চুপ চীৎকার উঠে আসে তুলসী মঞ্চের মাটিতে মিশে যাওয়া বাবার অস্থিভস্মের উদ্দেশে। ভয় করছে বাবা। খুব ভয় করছে।
সেই মুহূর্তেই অপার্থিব নাড়া লাগে ক্লান্ত বোধ-ঝোরায়। রুগ্ন ক্ষীণশরীরী বাতি শিখা টপটপ করে ঝরায় কয়েক বিন্দু ধী-জল শুখা হৃদ কোটরে।

আবারও আকাশেই চাইতে বলেন সুগহীনে বসে থাকা ভদ্রলোক।
দৃষ্টি ফেরাই উপর পানে। আস্তে আস্তে বুঝতে পারা যায় কেন এমন অলখ নির্দেশ।

সন্ধ্যালগ্ন বিষাদী আকাশের কাছে ডাকা কালোতে নিজেকে সঁপে দেওয়া যায়। মর্মসহচর সে। তার বুকে রাখা যায় ব্যক্তিগত শোক। সে কালোর ভেতরে অপার স্বান্ত্বনাদাত্রী আলো জেগে থাকে জড়িয়ে জাড়িয়ে। জ্বলতে থাকা চোখে এনে দেয় একমুঠো দুখপ্রশম কান্না। আবার খানিকক্ষণ পেরোলে ডুকরে ওঠা হাহাকার করা একাকীত্ব কে শোনায় :

"জাতস্য হি ধ্রুবো মৃত্যুর্ধ্রুবং জন্ম মৃতস্য চ ।
তস্মাদপরিহার্যেহর্থে ন ত্বং শোচিতুমর্হসি ॥ "

হৃদয়-সিজ

প্রেমের জন্য সাজিয়েছিল উঠোন ভরা আলোর গান,
নষ্ট দুপুর চিবিয়ে খেল ভালোবাসার অপুষ্ট ধান।

দাওয়ার বুকে মেলা ছিল ভরসা ফোঁড়ের শেতলপাটি,
পলি ভেবে গড়তে পুতুল ধ্যুর চুরচুর বেলে মাটি।

প্রেমের জন্য গুছিয়েছিল ভর ভরন্ত হৃদয় তূণ,
নিমেষ ভাঙন দাঁতে কাটল ছিন্নভিন্ন ধনুর্গুণ।

নদীর বাঁকে হয়তো উধাও মান্দাসে লীন নীলাভ লাশ,
পীতাম্বর আর নীলাম্বরী মরণ পেঁচায় আজন্ম পাশ।

বসন্ত্ এলে খলখলিয়ে দান ছোঁড়ে মৌত, রক্তবীজ,
পলাশ শিমূল কৃষ্ণচূড়ায় আভরণ তার হৃদয়-সিজ।

ক্ষীণবীজী ক্ষণজীবী আশনাই ডরা ছাপোষা লোক,
মাকু চলন নাগর-দোলায় ভালবাসাই পোক্ত হোক।

Monday, January 28, 2019

কপোতাক্ষ মধুমতী চিত্রা

আপাততঃ "কাজ" শেষ।

টুকরো টুকরো হাহাকার অবিন্যস্ত গেঁথে তুলছি আমি। ধীরে ধীরে গড়ে উঠছে বে-রূহ্ হাড়-সফেদ মালা অথবা জ্যান্ত পোঁতা শ্বেতপাথুরে কুয়ো।
জলজ জমিনে।
...
হৈমন্তিকী আবছায়ায় বাতাস।

ঠাহর পাচ্ছি দুটি বিরাট মলমল-ই ডানায় ভর করে ভেসে যাচ্ছে খুব চেনা সেই অবয়ব। উত্তর মুখারী গতি তে আমার অচেনা এক আলোর বন্ধু হয়ে।
নভঃ উঠোনে।

...
বিশ্বাস করুন

আমি কিন্তু দখিন মুখে ঠেলেছিলাম পারের নাও।
পারানির কড়ি দিয়েছিলাম গুনে গেঁথে।
...

কিন্তু তাঁর ডানায় যে প্রবল টান উত্তরা।

আসলে ওদিকে...

কপোতাক্ষ মধুমতী চিত্রা।

Wednesday, January 16, 2019

আদরবাসার হাহাকার!

কেবলমাত্র সুরূপার নয়, অরূপা এমনকি কুরূপারও অহর্নিশ জানো বুক ধুকপুক,
গোপনতম প্রত্যাশা হয়ে পাঁজর আড়াল জিরোয় একটি দুটি ইচ্ছে কুবকুব।

যতনচোঁয়া স্বর।
আদরী করতল।
মমতার্দ্র আঁখিদ্বয়।
যাঞ্চা আদরবাসার।

নিরম্বু নির্লজ্জ!

কানাকুয়োর ডাকে যেমন উমান পাও গাভীন গতরভার,
মনের মাগন বোলে তেমন ঠাহর হয় উন্মনা  ভেতরঘর।

সাধনে অগম্য সেতু।
বাঁধনে অদম্য সাধ।
রূপান্তে অবধ্য ঝড়।
আকাঙ্ক্ষা দয়িত বাঁধার।

অবাধ্য অভব্য !

তারপর?
ক্ষণিক রূপকথার রূপকার-কে ছোঁয় তীক্ষ্ণ দস্তুরী স্বরূপকাঠি।
চোখে ঠোঁটে ঘৃণা পেঁচানো সে মাড়িয়ে যায় অচ্ছুত কুরূপমাটি।

আ-শির অপমান
অকুণ্ঠ অকথ্য অবিশ্রাম।
আকণ্ঠ সম্বিত আসে রূপহীনার।

একলা আবার।
একলাটি আঁধার।
একলাই আধার।
আত্মভর।

রূপের হাটে পশরা সাজায় চামড়া বিকিকিনির ব্যাপারী ও হাটুরে।
সেখানে কবি জন্মায় শ'য়ে শ'য়ে।
সেখানে কবিতা জন্মায় পায়ে পায়ে।

এখানে এটা কিন্তু কোনওভাবেই কবির জন্মমুহূর্ত নয়।
এখানে এটা কিন্তু কোনওপ্রকারেই যথাযথ কবিতা নয়।
কিচ্ছুতেই নয়।