নদীর সাথে সই পাতায় নারী।
চেতনে বা অবচেতনে। অধিচেতনে জীবনভর স্বেচ্ছা বা পরেচ্ছায় বহতা ধর্মের অকৃত্রিম মিলই বোধকরি এক অনিন্দ্য গ্রন্থিবন্ধন করে দেয়।
তাই পরস্পরে দেখা সাক্ষাৎ হলেই অনির্বচনীয় আনন্দীদোল জাগে। এর ছপাৎ পা ফেলাতে ওর ছলাৎ আলতো ধাক্কা।
টলটল টলমল।
রূপোর পাঁয়জোরের চমকানি ঢেউয়ের রূপোলী ছটার ঝলকানির সঙ্গে তাল ঠোকে। নথ ঝাঁকিয়ে ছদ্ম কলহ। তারপরেই হাসির ঝর্ণা ধারা উভয়েরই স্নান সারে। প্রাথমিক উচ্ছ্বলতা মিটলে, থিতু হয়ে বসলে ঢেউয়ের ঘাই আর বুকের ঘাই এর নিজস্ব ভাষাচলনে চারটি দুখসুখের আলাপও সারা হয় ধীরে ধীরে।
চাওয়া পাওয়া চেয়ে না পাওয়া কিম্বা না চাইতেই পেয়ে যাওয়ার টুকরো টাকরা খতিয়ান। একলা দোকলা দেওয়া নেওয়ায় আট ছয়ের বা বারো দুয়ের ভাগাভাগিতে জুটে যাওয়া চোদ্দ সম্বলে, বাকি দু আনা পড়শি দিনে গেঁজে বন্দী হয়ে যেতেও তো পারে এই লোভাতুর স্বপ্নকল্প অপেক্ষায় মধ্যবিত্ত আজকালপরশু গড়ান গুজরান।
কলকল ছলছল।
তো এভাবেই একদিন আমার সাথেও জুড়েছিল নদী। সবাইকারই যেমন জোড়ে। যে কোনও মুহূর্তে এক উপায়ে স্রোতস্বিনী আলতোভাবে দৃষ্টি ঘরের চৌকাঠে এল কী কুলকুল করে জেগে ওঠা অকারণ খুশিদল জাকুজির মত নিমেষে ভিজিয়ে দিত বুকের আনাচকানাচ। থোড় বড়ি খারা যাপনের নানাবিধ বঞ্চনা পরবর্তী জঞ্জাল পলকে সাফসুতরো। গড়ে উঠতাম। ভরে উঠতাম। তৃপ্ত হতাম। জীয়ন সম্পৃক্তি বাড়ত বেশ খানিক। স্নেহ প্রেম যৌনতা ঈর্ষা একাকীত্ব সমস্ত বোধের আসঙ্গী।
...
সব উলটিপালটি ইদানীং। তীব্র বিবমিষা জাগে নদীর নামোল্লেখ এলেই। তবু নিজেকে টেনে হিঁচড়ে পাড়ে দাঁড় করালে ওপারের আকাশ জুড়ে হানা দেয় দুটি ফ্যাকাসে কাঁপতে থাকা নীলচে শিরা জাগা পাতা জুড়ে গড়া অঞ্জলি। কিছু রাখা তাতে। নাহ, কণকাঞ্জলি নয় সে, তাতে ধরা আছে গলাগলা খুব কালো মাটি ঠাসা একটা খনখনে সরা ক্লান্ত জুঁই মালার নরম কঙ্কাল জড়ানো। ঘণ্টাখানেক আগে আনভিটা এক নাভীকে অজানা তীক্ষ্ণগন্ধী মাটিতে গুঁজে অচেনা তীব্রবুভুক্ষু তরঙ্গ গ্রাসে কৃত্রিম ভিটের খোঁজে পাঠানোর প্রক্রিয়ার সূচনা। পর ক্ষণ হতে অনাথ সোনাবীজ আশ্রিত যাপনে রয় খেয়ালী নাব্যতার।
থিরতাল টালমাটাল।
আজকাল নদীর দিকে চাইলে আমি জল দেখিনা। নাভী দেখি কেবল। শয়ে শয়ে হাজারে হাজারে নাভী। জোয়ারে ভাটায় ষাঁড়াষাঁড়িতে অকল্পনীয় সংখ্যক নাভীর গলগলিয়া হুড়মুড়ানিতে শক্তিগর্বী একটি নাভীস্রোতা খলখল করে চলেছে। পিশাচী নাচনী এক। সাক্ষাৎ নিয়তি। বীভৎস দবদবা।
খলখল গলগল।
অসহায় নাচার আমি হারতে হারতে হটতে হটতে শেষমেশ নিজেকে কুঁকড়ে গুটিয়ে গুঁজে রাখার চেষ্টা করি আমার শেষ সম্বলে। বড় ঘরের শতাব্দী প্রাচীন খাটে। বাবার বিছানায়। বালিশের প্রায়ান্ধকারে।
আচমকা আমি টের পাই নদীর রকমেই স্রোত উথলায় আশরীর। বান আসে। মরণ সঙ্কোচনে হাহা ডাক ছাড়ে ব্যক্তিগত প্রয়াত নদী। প্রমাণ হয় সে আপাত প্রয়াণ। মরা নদীর সোঁতা চুঁইয়ে আসে আড়ালী ফল্গু বা শীর্ণা সরস্বতী।
তারপর ...
আমার ঘেন্না পায়। সবকিছু যা ঢেউয়ে আছে। আমার ভয় পায়। সবকিছু যা ঢেউয়ে বাঁচে।
সেই সাথে নিজেকেও।
কারণ আমি জেনে গেছি প্রতিটি নারী, তরঙ্গত্রাস সত্ত্বেও, চাও বা না চাও, আসলে নদী।
চেতনে বা অবচেতনে। অধিচেতনে জীবনভর স্বেচ্ছা বা পরেচ্ছায় বহতা ধর্মের অকৃত্রিম মিলই বোধকরি এক অনিন্দ্য গ্রন্থিবন্ধন করে দেয়।
তাই পরস্পরে দেখা সাক্ষাৎ হলেই অনির্বচনীয় আনন্দীদোল জাগে। এর ছপাৎ পা ফেলাতে ওর ছলাৎ আলতো ধাক্কা।
টলটল টলমল।
রূপোর পাঁয়জোরের চমকানি ঢেউয়ের রূপোলী ছটার ঝলকানির সঙ্গে তাল ঠোকে। নথ ঝাঁকিয়ে ছদ্ম কলহ। তারপরেই হাসির ঝর্ণা ধারা উভয়েরই স্নান সারে। প্রাথমিক উচ্ছ্বলতা মিটলে, থিতু হয়ে বসলে ঢেউয়ের ঘাই আর বুকের ঘাই এর নিজস্ব ভাষাচলনে চারটি দুখসুখের আলাপও সারা হয় ধীরে ধীরে।
চাওয়া পাওয়া চেয়ে না পাওয়া কিম্বা না চাইতেই পেয়ে যাওয়ার টুকরো টাকরা খতিয়ান। একলা দোকলা দেওয়া নেওয়ায় আট ছয়ের বা বারো দুয়ের ভাগাভাগিতে জুটে যাওয়া চোদ্দ সম্বলে, বাকি দু আনা পড়শি দিনে গেঁজে বন্দী হয়ে যেতেও তো পারে এই লোভাতুর স্বপ্নকল্প অপেক্ষায় মধ্যবিত্ত আজকালপরশু গড়ান গুজরান।
কলকল ছলছল।
তো এভাবেই একদিন আমার সাথেও জুড়েছিল নদী। সবাইকারই যেমন জোড়ে। যে কোনও মুহূর্তে এক উপায়ে স্রোতস্বিনী আলতোভাবে দৃষ্টি ঘরের চৌকাঠে এল কী কুলকুল করে জেগে ওঠা অকারণ খুশিদল জাকুজির মত নিমেষে ভিজিয়ে দিত বুকের আনাচকানাচ। থোড় বড়ি খারা যাপনের নানাবিধ বঞ্চনা পরবর্তী জঞ্জাল পলকে সাফসুতরো। গড়ে উঠতাম। ভরে উঠতাম। তৃপ্ত হতাম। জীয়ন সম্পৃক্তি বাড়ত বেশ খানিক। স্নেহ প্রেম যৌনতা ঈর্ষা একাকীত্ব সমস্ত বোধের আসঙ্গী।
...
সব উলটিপালটি ইদানীং। তীব্র বিবমিষা জাগে নদীর নামোল্লেখ এলেই। তবু নিজেকে টেনে হিঁচড়ে পাড়ে দাঁড় করালে ওপারের আকাশ জুড়ে হানা দেয় দুটি ফ্যাকাসে কাঁপতে থাকা নীলচে শিরা জাগা পাতা জুড়ে গড়া অঞ্জলি। কিছু রাখা তাতে। নাহ, কণকাঞ্জলি নয় সে, তাতে ধরা আছে গলাগলা খুব কালো মাটি ঠাসা একটা খনখনে সরা ক্লান্ত জুঁই মালার নরম কঙ্কাল জড়ানো। ঘণ্টাখানেক আগে আনভিটা এক নাভীকে অজানা তীক্ষ্ণগন্ধী মাটিতে গুঁজে অচেনা তীব্রবুভুক্ষু তরঙ্গ গ্রাসে কৃত্রিম ভিটের খোঁজে পাঠানোর প্রক্রিয়ার সূচনা। পর ক্ষণ হতে অনাথ সোনাবীজ আশ্রিত যাপনে রয় খেয়ালী নাব্যতার।
থিরতাল টালমাটাল।
আজকাল নদীর দিকে চাইলে আমি জল দেখিনা। নাভী দেখি কেবল। শয়ে শয়ে হাজারে হাজারে নাভী। জোয়ারে ভাটায় ষাঁড়াষাঁড়িতে অকল্পনীয় সংখ্যক নাভীর গলগলিয়া হুড়মুড়ানিতে শক্তিগর্বী একটি নাভীস্রোতা খলখল করে চলেছে। পিশাচী নাচনী এক। সাক্ষাৎ নিয়তি। বীভৎস দবদবা।
খলখল গলগল।
অসহায় নাচার আমি হারতে হারতে হটতে হটতে শেষমেশ নিজেকে কুঁকড়ে গুটিয়ে গুঁজে রাখার চেষ্টা করি আমার শেষ সম্বলে। বড় ঘরের শতাব্দী প্রাচীন খাটে। বাবার বিছানায়। বালিশের প্রায়ান্ধকারে।
আচমকা আমি টের পাই নদীর রকমেই স্রোত উথলায় আশরীর। বান আসে। মরণ সঙ্কোচনে হাহা ডাক ছাড়ে ব্যক্তিগত প্রয়াত নদী। প্রমাণ হয় সে আপাত প্রয়াণ। মরা নদীর সোঁতা চুঁইয়ে আসে আড়ালী ফল্গু বা শীর্ণা সরস্বতী।
তারপর ...
আমার ঘেন্না পায়। সবকিছু যা ঢেউয়ে আছে। আমার ভয় পায়। সবকিছু যা ঢেউয়ে বাঁচে।
সেই সাথে নিজেকেও।
কারণ আমি জেনে গেছি প্রতিটি নারী, তরঙ্গত্রাস সত্ত্বেও, চাও বা না চাও, আসলে নদী।
No comments:
Post a Comment