Saturday, November 27, 2021

'কলিকাতার কসবি কিস্‌সা'

 



'কলিকাতার কসবি কিস্‌সা' আসলে একটি খোঁজ। 

প্রাচীন ভারতের নানান প্রদেশ থেকে নবীন বঙ্গের শ্রেষ্ঠ নগরে, বিভিন্ন যুগে ও যুগপতিদের কালে কেমন ছিলেন তাঁরা― বাহ্যিক রূপ এবং সাঙ্গীতিক গুণই ছিল যাঁদের জীবিকার মূল পুঁজি, সেই বারনারীরা এবং বাঈজীরা? কেমন ছিল পেশাজীবন, ব্যক্তিজীবন, বাঁচন এবং মরণ? ঘৃণা, প্রেম, বাৎসল্য ও তিতিক্ষা? সমাজের চোখে তাঁরা ও তাঁদের চোখে সমাজের যে সার্বিক ছায়াচিত্র, তাকেই আঁকার ক্ষুদ্র প্রচেষ্টা বহমান এই বইটি জুড়ে।



জন্মজাত অভ্যাসবশতঃ

 হেমন্তজন্মা মানুষেরা বিষাদলগ্ন হন ঋতুবশতঃ।


তাতঝিমুনিজারিত খুনখুনে বিড়াল চোখে পড়লে তাদের থানজড়ানো সরী পিসিকে মনে পড়ে; চোত নিদাঘের একাদশীতে পাকঘরের দাওয়ায় আঁচল বিছিয়ে, নিরম্বু কাতশোয়া এক তরুণীর দীর্ঘ প্রশ্বাস শুনতে পান।


গোধূলিশেষের প্যালেটগলা দিকচক্রবাল চোখে পড়লে তাদের ব্রঙ্কোস্প্যাজম খাবলানো বুক মনে পড়ে; আশ্বিনের মাঝামাঝি হু হু বাতাস ছোটা ওয়ার্ডের ঘেরা বেডে, দেওয়ালঠেস এক যুবকের রক্তক্লান্ত ঠোঁটের কষ দেখতে পান।


হেমন্তজন্মা মানুষেরা তিয়াসলগ্ন হন ঋতুবশতঃ।


বগির জানলায় কপালথিতু ফিরতি রমণী বসা দেখলে তাদের ভোর ঝরা বকুলের কাছে যেতে ইচ্ছে হয়; শানঘাটের শেষ-পৈঠায় ঘষে গড়া বীজবাঁশি শুনবে শুরু-পৈঠার ঘষটে যাওয়া ফুল–দল, বুঝতে পারেন।


ওপারের ফুটপাথ দিয়ে এলোঝেলো মাথার পুরুষ যেতে দেখলে তাদের ঝোঁকা চালতাতলায় যেতে ইচ্ছে হয়; ঘাসজমিতে শিরশির খেলা দীর্ঘ পাতারা উদগ্র ডগায় ছোঁবে হাট-খোলা ফুল–বুক, বুঝতে পারেন।

...


তীক্ষ্ণ অথচ এক্কেবারে নিরুচ্চার গুপ্ত প্রেমিক হন।

প্রিয় মৃত্যু-মাফলার পেঁচানো গলা এগিয়ে আকন্ঠ চুমুতে দড় হন।

সম-কালীন শিশির স্বভাবে বড় অলক্ষ্যে সরে যান।

জন্মজাত অভ্যাসবশতঃ।

Wednesday, September 29, 2021

এ বৃষ্টি থামবে?

 অতলান্তিক শোকজলের ভেতর ঠ্যাং মুড়ে বসে থাকে দুইটি অসমবয়সী ভিজাকাক। 

এর ডানায় আলতো ঠেকে রয় ওর ডানা।

মুহ্যমান।

এতদ বয়সকাল যাবৎ অভিজ্ঞতার সার ― এক মুষ্ঠি পোয়াতি বায়সকাল।

চক্ষুষ্মান উড়ে যায় পরভৃত ছানা।

বেঈমান।


সর্বদাই কালিসন্ধে এ দিগরে।

মেঘগুলো আদ্যিকঠিন বালিশ একেকগোটা।

বুকে বড্ড চাপ ধরে মা রে।

হাঁসফাঁস শ্বাস বোঝাই গাঢ়হিম শাদা ফোঁটা।

...


বেগ সামান্য ধরে এল।

আঁচলে একরত্তি শারদবিকেল মাখা আলো বেঁধে ঘাটে উঠল।

ঐ বড় ঘরের মেয়ে।

...

এ বৃষ্টি থামবে?

Tuesday, September 28, 2021

জালালি ও কইত্তর

 সেবার কী হল জানো এক চাষা ক্ষেতেতে, 

নিড়ানি দিতেছে বসে একটেরে ভূঁয়েতে।

হেথা হোথা নেই কেউ নিজ্ঝুম চারিধার, 

হঠাৎ শোনে সে স্বর চাচা মোরে কর বার।


কে ডাকে দিগরে নেই একজনও মনিষ্যি, 

আমারে ধরেছে তবে এ মামদো অবিশ্যি।

ডরে কাঁপে চাচাজান ঠকাঠক হাঁটুতে, 

উঠতে নজরে এল প্ৰদীপটা ঘাসেতে।


ঘষটে কোলের কাছে যেই তারে টেনেছে, 

মেঘরঙা টেকো এক আল জুড়ে বসেছে।

(আহা!) কর কী হালার পুত ভেঙে গেল আল তো,

চাপ কেন নাও মিঞা জুড়ে দেব আলতো।


আগে তুমি বল দেখি কী কী খোয়াব দেখলে,

কেমন হবে সে বল সবকটা মিটলে?

ভ্যাবল চাষাটি ভাবে কী আপদ জুটলো,

কাজ কাম সব দেখি আজ শিকে উঠলো!


দশাসই গতরেতে জোড় হাত দৈত্য,

ঝুঁকে বলে হুকুমআকা আমি তব ভৃত্য।

হুকুমাকা হুকুমাকা বিরিয়ানি খান তো?

আচ্ছা জ্বালালে বাপু এই তুই থাম তো।


চাইনে হুকুমদারী নিজ হাতে খেটে খাই,

চাও যদি লেগে পড়ো হালখান ধরো ভাই।

বিরানি হবে না মোর ভেতো পেটে সেদ্ধ,

এক থাল ভাত দেবে সর পুঁটি শুক্তো?


চিনেছি তোমারে আমি প্রদীপের দানো হও

মাঠ ভরা ধান ওই দেখছ তো ভেবে কও―

পারবে আমারে দিতে তৃপ্তি সে ফলানোর,

আছে "কি" তোমার গেঁজে খুশিয়াল বলানোর?


ঘাম জমে দুধ হয় ধানের ওই গর্ভে

চাষাবাদ ছাড়িয়ে কি মারবে ও মরবে?

ভরা মাঠে হাওয়া বয় গালচে যে রঙদার

জাদুতে সে হুট হাজির এ কেমন আবদার!


সাঁঝবেলা ঘরে ফিরি বিবিজান সোহাগে,

পিড়ি পেতে আলাপন মৌটুসি পরাগে।

চৌপর দিন ভর যত শ্রম ভোলাতে,

পারবে তো এঁকে দিতে সেই হাসি ঠোঁটেতে?


আমার তাকতে স্রেফ চড়া সুখই প্রাপ্তি,

পারি নাকো জোগাতে যে শান্ত সুষুপ্তি।

দিতে পারি বিলাস ও জহরত দুনিয়ার,

ভালোবাসা গড়ে দেব এ বাহির ক্ষমতার।


থুতনিটা ঝুলে পড়ে আলাদিন–এ–দৈত্যর

সরল খুশিতে ওড়ো জালালি ও কইত্তর।

কলিকাতার কসবি কিস্‌সা


 "কলিকাতার কসবি কিস্‌সা" নিয়ে লিখতে শুরু করেছিলাম বৈশাখের প্রথম দিন সকালে, পরের দিন থেকে আজ অবধি যা যা পোস্ট এই বইটি বিষয়ে দিয়েছি, এক জায়গায় করা রইল। রইল আখ্যাপত্রটিও।


পড়লে একটা আন্দাজ পাবেন কেমন হতে চলেছে আমার আর Subhankar Maji  শুভঙ্করের আখরকথা প্রকাশন–এর এই প্রয়াস। তারপর অক্টোবর পেরোলেই এসে পড়বে নভেম্বর, আর সেই মাসেই তো আসবে দুই মলাটে গাণিক্যের ইতিহাস ও এক ঝাঁক গণিকার জীবনেতিহাস ― 


"কলিকাতার কসবি কিস্‌সা"


16th April


https://www.facebook.com/100001646810291/posts/4097716393626547/


30th May


https://www.facebook.com/100001646810291/posts/4229386200459565/


18th June


https://m.facebook.com/story.php?story_fbid=4284279084970276&id=100001646810291


23rd June


https://www.facebook.com/100001646810291/posts/4297876100277241/


6th July


https://www.facebook.com/100001646810291/posts/4334776623253855/


10th July


https://www.facebook.com/100001646810291/posts/4345254765539374/


17th July


https://www.facebook.com/100001646810291/posts/4364595843605266/


27th July


https://www.facebook.com/100001646810291/posts/4396380867093430/


31st July


https://www.facebook.com/100001646810291/posts/4408310439233806/


4th August


https://www.facebook.com/100001646810291/posts/4419871471411036/


23rd August


https://www.facebook.com/100001646810291/posts/4478114778920038/


24th August


https://www.facebook.com/100001646810291/posts/4482493828482133/


#ক_ক_ক_

Wednesday, August 18, 2021

জন্মদাগ

 জলে ভেসে যায় ঐ থোড়ের ডোঙা, 

আতপত্রের ভাত―

ভারী করে তোলে এ ঘাটের বাতাস, 

সাঁঝ আগলায় রাত।

অল্প ছুঁয়েছে যে মালসার কানা, 

সে স্বাদ বইছে জল―

ধূপধোঁয়া জ্বলামোমেরে শুধোয়,

যাওয়াটা জরুরী, বল?


পাঁজরের বেড়া ঘাই ঠেলে তোলে, 

চেনা সম্বোধনের বোল―

ফুকরে ওঠে যত অস্ফূট ডাক, 

এল জবাব – কলরোল।


তারার ভূমে অপারবাসী অনন্তপল জাগ।

তুমি মেখে নিলে যেটা ছাইয়ের ছৈয়ে, 

তা আমার জন্মদাগ।

আলো আসবেই

 গাঢ় নীল মেঘের তাড়নায় কাঁসার সানকি ষোলকলাটি আড়াল হচ্ছে, হ্যাঁ রয়ে রয়েই।

অলকানন্দার শ্রান্ত শরীরটায় বাতাসের তীক্ষ্ণ ঝাপটা ধাক্কা মারছে, তাও ফিরে ফিরেই।

স্বস্তির নিশ্বাসখানা বুকের খাঁচাখানা নির্ভার করতে গিয়েও, থমকে থেমে যাচ্ছে।


ঝমঝমিয়ে নামছে , ভারী দানার জল।

থমথমিয়ে উঠছে, গত তাণ্ডবের স্মৃতি।


সমস্তের পরেও মস্তিষ্কের প্রতিটি স্নায়ু কেবল আঁকড়ে ধরে আছে এক জোড়া শব্দ।


আজ

অবতরণ দিবস।


আলো আসবে। আসবেই।

Sunday, April 11, 2021

পদচিহ্ন

 আমি যখন বলব প্রতিটি হৃদ-নক্ষত্রের মৃত্যু-নিঃশ্বাস মুহূর্তটাকে কড়া নৈঃশব্দ্য আগাগোড়া ঘের-বন্দী রাখে,

তুমি কিন্তু বুঝে নিয়ো তুমুল ভাঙচুরের গলা বাওয়া ডাক আসলে টিপে ধরে রাখে আত্মগ্লানির ক্ষরণ।


কণ্ঠায় বিশ্বাসের কষ ঝরায় না দেখা ছুরির ফলা।

কন্ঠিটায় অপ্রেমের রঙ ধরায় একটা অদৃশ্য ক্ষুর।


গলগল করে বেরোয় বিস্ময় ঘৃণা শাপশাপানি।

সেও তো বেশ লালই।

হ্যাঁ, অবিমিশ্র নয়। হিলহিলে লাশ-নীল প্যাঁচানো। থোকা থোকা ঘেন্না-হলুদ জড়ানো।

তবুও এই এতোখানি লালই তো, গাঢ় ঘন লাল।


তবে যে সর্বক্ষণ শুনি কেবল প্রেমেরই অবিসংবাদিত অধিকার লালে!

অপ্রেমেও এত প্রেম কেন ডোবালে ঈশ্বর?


কিন্তু তোমাকে তো সেখেনে নিয়ে যাওয়া চলে না।

তুমি বরং গন্ধরাজের পাপড়িতে কীটের পদচিহ্ন খোঁজ।

অসুখটার পদবী বৃষ্টি

 পার্চমেন্ট রঙের মুখ দেখলে তক্ষুণি আঁজলা ভরে আবির নিয়ে মাখিয়ে দিয়ো না ছুটে গিয়ে। 

সহ্য ক্ষমতা ডিঙিয়ে যেতে পারে।

শোননি কি লাদাখ থেকে নামার পরে ধ্বস্ত সেনানীকে তক্ষুণি বাড়ি ফেরানো হয় না? 

বোধের মাত্রা হারিয়ে যেতে পারে।


কোলাপস করে যাবে। আশঙ্কা।


তার চারটে আঙুল আলতো ধরে দুজনায় বোসো কোনও প্রাচীন ঘাটে।

নবীন সম্পর্ক গড়তে ওর জুড়ি কেউ নেই।

তারই কোশে কিছুটা ফাগ রেখে বোলো তোমায় রাঙিয়ে দিতে।

ছেঁড়া বিশ্বাস জুড়তে এর পারা আর নেই।


সেটেলড হয়ে যাবে। আশা।


আক্রান্তের সংখ্যা এখন দুই।

এর পরপরই বৃষ্টি নামবে। নিশ্চিত ।

অনন্ত আকাঙ্ক্ষিত অসুখটার পদবী বৃষ্টি।

Sunday, February 14, 2021

সেরে ফেলি

 এই বেলা সেরে ফেলি সেসবের বলাকওয়া যা কিছু এতকাল "চুপ কর! চুপ চুপ!" জমালো।

এই বেলা চেয়ে ফেলি সেসবের লাভভাগ যা কিছু এতকাল "কথা নয়! করে ফেল!" জোগালো।


প্রতিটি নতুন বাঁকের মুখে এলেই বুকের ভেতর উসকে ওঠে হদ্দ পুরোনো কাঙালপনা।

অযুত নিযুত পল ফলানো পথটাকে ফিরে ফিরে দেখার আকুলিবিকুলি ওজর মানে না। 


থমকানোর সময় দেবে না জীবন। 

পিছে ফেরবার তো নয়ই।

শোধরানোর সুযোগ দেবে না জীবন।

চোরা আক্ষেপ তো হয়ই।


এই বেলা গেয়ে ফেলি সেসবের বোলতান যা কিছু এতকাল "আবিন্তা! আহেলি!" শোনালো।

এই বেলা বেঁচে ফেলি সেসবের রাতদিন যা কিছু এতকাল "ছুঁয়ে দেখ! একবার!" শাসালো।