Thursday, September 12, 2019

ল্যাম্পপোস্ট

কয় খাবলা চলটা উঠেছে ,জ্যাবড়া ছালা জং ধরেছে,
পরশুই, ছোপধরা দাঁত রঙের বাল্বটা উধাও হয়েছে ;
সেই ব্যাঁকা অশ্লীল কার্ণিক মারা ল্যাম্পপোস্টটার সঙ্গে সেইই ওই-খসলো আঁচল আর চুনে ধ্যাবড়ানো মুখের মালকিনের সাযুজ্য মারাত্মক রকম।

আঘাটার পারম্পর্য। ঘাঁটা লিপস্টিক।

একফালি হাইওয়ের ন্যাতানো টুকরো মাঝে, এধারের
রেল সিগন্যাল থামের পিঠপানে ওধারের গলা বুক বাড়িয়ে দাঁড়িয়ে থাকা ল্যাম্পপোস্টটার অদ্ভুত গায়েপড়া অথচ খেঁকুরে ঢংটাও, সাদৃ‌শ্যে লাজখই চিবানির সঙ্গে ষোলআনাই ম্যাচিং একদম।
...
 এককালের স্বপ্নিল রঙ মিলান্তি বাত্তিদান।
জওয়ানি কে চার, চল আট, আচ্ছা বেশ বার, ঠিক আছে রে বাবা, ষোলও দিন।
ছাগলের ঢুঁসোনো, কুকুরের ছিটোনো, যাবতীয় শিথিলতা সিধের মহৌষধ-পাত্তা জড়ানো পাবলিকের একমেবাদ্বিতীয়ম পিচদান।
...
এক একটা দিন ঝুম বারিষের হয়।
থইথই সাইড লাইনে মালগাড়ি পড়ে থাকে পচে ঢোল দাঁড়াশ। হাঁড়িয়ার অস্পষ্টতার মত সমস্ত দেখা যায় আবার অদেখাও সবটাই। সেই কাকভোরের কিছু আগে ল্যাম্পপোস্টে হেলান দেয় লড়ঝড়ে এক সাইকেল।

সিগন্যাল অন হয়। সাইকেল স্থির।

আকাশগঙ্গা সড়সড়িয়ে নেমে আসে।
এক ঝটকায় পেঁচিয়ে ধরে সাদা মুখের পরিধি আর কালো শরীর। খানিক পরে দৃশ্যপটে অর্দ্ধনারীশ্বর সাক্ষাৎ।  ল্যাম্পপোস্ট ফুঁড়ে লকলকিয়ে ওঠে কুলকুণ্ডলিনী। চিনি পোড়ার গন্ধ ভাসে বাতাসে।
খাড়া উড়াল।

পূরবী

হাওয়ার ঝাপটা আসা খোলা জানলার গা ঘেঁষা টেবিলটার উপরে হাট করে রাখলেও সব উপন্যাসের সব পাতা ফরফর করে ওড়ে না। পড়াটা মসৃণ হয় না। লক্ষ করলে কারণ জানাও যায়। আর্দ্রতা।
সব বাতাস দখিনা হয় না যে, কিছু জোলো হয়।  স্যাঁতস্যাঁতে।
বড্ড ভারী। কামিনী গন্ধের চলন।
জল গিলে গিলে সেঁটে থাকে পাতারা, একে অপরের শরীরে। টিঁকে থাকার পারস্পরিক অবলম্বন। লেপ্টে থাকা পাতাদের দুই আঙুলে ঘষটে ঘষটে আলাদা করতে হয়। তবেই এগোয় উপন্যাস। হাওয়াটা বয় তখনও, তিরতির।
তার শুভ নাম, পূরবী।

প্রত্যহ যাপনও কেবলই ইমনকল্যাণে গড়া হয় না। এর সঙ্গে দরবারী'র আখমাড়াই কলে নিংড়ে নিংড়ে বিন্দুবিন্দু টনটনে অনুভবে তৈরী হয় যে বেঁচে থাকা, সেটাই সম্পূর্ণ অস্তিত্ব। ছটফটানি স্বাভাবিক। আরও স্বাভাবিক ছিঁড়েখুঁড়ে ছিটকে বেরিয়ে যাওয়ার প্রচেষ্টা। কিন্তু সঠিক নয়।
নিজেকে গড়তেই পিষতে দিতে হয়।
শুদ্ধ পীড়ন বড় অমূল্য প্রাপ্তি। জীবন যখন ক্রমাগত পিষে পিষে একসময় খামচে বের করে আনে এক খাবলা দেওয়ালে ঠেসান দেওয়া শ্রান্ত যন্ত্রণা, সানাইরঙা বিকেলে একরাশ শিউলি জড়ো হয় এলোমেলো কোলে। গভীর একাকী স্বরাট ডাক ওঠে নাভীমূল হতে।
তার শুভ নাম, পূরবী।

ছুটি দাও

শ্রাবণ দশমীর সাঁঝ চাঁদ বাবার জ্বালানো  "পড়তে বস" দেওয়ালগিরির আলো।
লণ্ঠনের কাচে জমেছে কোটি সনের ইচ্ছেধোঁয়া বিস্মরণ।
তাকে হটাবার স্পর্ধা-স্পর্শ পেলেই স্পষ্ট কাটে বুড়ো আঙুলের গোড়া, কড়ে আঙুলের ভিত।
ছিটকে উঠে বিরক্ত রক্তাক্ত হতে হতেই দেখতে পাই,
আলোর যন্ত্র উঁচিয়ে ধরা একটি হাত, মৃদু গৎএ ভাস্বর করছে সেই চোখ নাক ঠোঁট গাল কপাল।
আলোর বৃত্তে চিরপ্রশ্রয়ী মুখ।
অনুনয়ী চোখ ঠোঁট নিরুচ্চার, অথচ চন্দ্রসভার স্থবির তারা-বুলি শুনতে পাই,
"তবু পড়তে বস। কত কী বিনছোঁয়া থেকে গেল বল তো!"

অগত্যা পাতা ওল্টাই।

চরিত্রগুলোর পাশ থেকে কিছু মুহূর্ত আলগোছে হেঁটে গেলে চোখে পড়ে,
জামাগুলো সব ছাপাছোপা বিভিন্নতর হলেও,
ছাট সবকটিই একথোকা নির্দিষ্ট ঘেরের।
চাউনি কানপাতা কথাবলা এসব নজর করলে অবশ্য বেশ ঠাহর হয় ,
খোলস নাট্যকারের মর্জিমাফিক পেঁচিয়ে রাখলেও,
জিভদাঁত আগ্রাসী হিংস্র রকমফেরের।

অকথ্য যন্ত্রণা পাই।

অন্ধকার বড় মায়াভরা।
দেখার আরাম জড়ানো সাদাকালো ছবি, 
থাকার আরাম চোঁয়ানো গর্ভের উষ্ণতা,
ছোঁয়ার আরাম বিছানো রবিবাবুর গান,
সেই গোছের মায়াভরা।

এবারেতো ডুব দিই?

আবারও ভেসে ওঠে সেইই চোখ নাক ঠোঁট ...

ছুটি দাও,
প্লিজ ছুটি দাও।

আজ্ঞে!

মেয়েটার নাম ছিল ঘটিদের ফুলকি,
বাঙাল ছোঁড়াতে গেল দিল্ তার ছল্কা,
হাতে ছুপে এঁকেছিল শান্তু'র উলকি,
জানাজানি দুতরফে ঝাঁকে ঝাঁকে উল্কা!
যতই তেড়িয়া দাদু সময় তো কলকি!
সে দুয়ের আশনাই নয় সেও পল্কা,
শ্যামের ডাকেতে কভু রাখা যায় কুল্ কি?
কনে সাজে চাঁদমুখে চন্দনি কল্কা।
হেঁকে আসে কনেঘর "এ ষড়ের মূল্ কী?"
অপমানে বরঘরে ফুঁসে ওঠে হল্কা!
বরকনে জড়োসড়ো "হিঁচড়োবে চুল কী!" 
বন্ধুরা ঠেলে তোলে শ্যালদা টু কাল্কা।

মা বাপের মন তো রাগ ঝাল কয় ক্ষণ? "আমরা মেনেই নেব, এই স'তে বল গে!"
মোহনবাগান নেয় সরভাজা দুইমণ। ইষ্টবেঙ্গল দেয় "ইলিশ টা..." "আজ্ঞে!"