Monday, September 24, 2018

সাঁকোটার ভাল নাম জীবন।

কখনো কখনো ঝোড়ো কুয়াশার পাগলাটে ঝাপটায় সাঁকোটা বেয়াড়া রকম দুলে ওঠে।
হাত আধেক দূরত্বের চিরচেনা ঋজু অবয়ব বড় বেশি টলমল দেখতে পাই।
মাথার ভেতরে বীভৎস বমি বমি ভয় ঝনঝন বেজে চলে।
গজ দুয়েক চাউনি সরালেই শ্রান্ত অথচ শান্ত একজোড়া স্থিতধী শক্ত চোখ নজরে আসে।
এক আধ টুকরো সাহস কুচি জমতে থাকে থিরথির বুকে।
দৃঢ় মুঠো তে আঁকড়ে রাখি সে দুয়ের প্রৌঢ় আঙুল গুলো।
এগিয়ে যাই তিন এক্কে এক এর অদ্ভুতুড়ে ধারাপাতি চলাচল নড়বড়ে পায়ে জড়িয়ে।
আগলাতে চাওয়া চতুর্থ এক অস্তিত্ব টের পাই ঘাড়ের গায়ে পিঠে। সে উষ্ণ পরশ বোলায় পাশে আছি রকমে।
আরেকটু এগিয়ে যাই। আরেকটু ঘন পায়ে।

সাঁকোটার ভাল নাম জীবন।

মরণ ও অন্যান্য।

মরণ ও অন্যান্য।
এক
মৃত্যু আমাদের চারপাশে পায়চারি করে। আসে যায়, ফের আসে যায় ফের...
সাধারণের জমাট শোকের উঠোন বাগান রবি বাবুর সেই গন্তব্যাভিমুখী রেলপথের পাশের অনবরত অপসৃয়মান মাঠচত্ত্বরের মত উদাসী জোৎস্নায় ভাসে না। আবলুশের পারা অন্ধকার গিলতে আসে তাদের। তাঁর মত সংহত চিত্ত, স্থৈর্য, অন্তর্দৃষ্টি এবং গভীর সত্যোপলব্ধিও সকলের থাকে না। তবে এই ছাপোষা গেরস্তের বুকভাঙা অবুঝ শোক গলানোর উপায় কী?

নদী।

নদী না মেলে তো খাল বিল যেকোনো জলাশয়। গভীর ও ছলছল, নির্বাক ও সবাক।
আসলে জল। অনেকটা, অনেকটা জল। একইসঙ্গে অনেকখানি বিছিয়ে থাকা ও অনেকখানি রিক্ততা। গহীন ঘন চলিষ্ণু বুকের উপরে দিগন্ত স্পর্শী শূন্যতা প্রসারে জলাশয় আমার আপনার মত আকস্মিকতায় থতিয়ে গুম পাঁচপেঁচিকেও তিরিতিরি ভাবনার ঢেউ দেয়। নিজেদেরই অনবধানতায় স্বজনহৃত আমরা আগল খুলে দেই শোকগ্রস্ত বুক কপাটের। হুহু করে উথলে আসে শোকেদের শ্রাবণী ঝোরা।  মনের দোর পেরিয়ে ওই, ওই জলের ঘরে দোরে উঠোনে শ্রান্ত গা এলায় তারা।
ভারী থেকে আরও ভারী হয়ে চলা মনের ভার গড়াল দেওয়া কাঁসার ঘড়ার চলনে গড়িয়ে যায় নিঃসাড়ে।

এক সময় বুঝতে পারি, যে গেছে, সে গেছেই। পায়েলের আংটা ছুটে গেছে তার বরাবরের মত। হারে পাশায় বাজু আর নাকফুলে জড়িয়ে মড়িয়ে বেঁচে থাকার দলভুক্ত এখনও আমরা কয়জনা এপারে দাঁড়িয়ে আছি অদেখা কিন্তু অনুভূত একাধিক পায়ের মলের ঝিনিঝিনির তীব্র টানে। অলঙ্ঘ্য নয় কিন্তু আপাতত দূরতিক্রম্য সেই অলীক বীথি সরে সরেই রয়ে গেল আপাতত।

আর এদিগরে রোজনামচার সাপ লুডো ছকে ঘরগুলোতে রয়ে গেছে যারা, মন বুঝ মানে, ঘরে ফিরতে হবে তাদেরই আগলাতে।

ধ্যাত্তেরিকা!

গুটগুটি বেলায় একবার জন্মদিনের উপহার হিসেবে প্যাস্টেল আর ওয়াটার কালারের সেট এর সঙ্গে পাওয়া পেন্সিল বক্সের মধ্যে পেন্সিল, শার্পনার, খানদুয়েক ব্রাশ ছাড়াও ছিল ব্রুমওয়ালা মুসাম্বি গন্ধী ইরেজার আর মজাদার টিউবে ভরা ঝিমঝিম গন্ধওয়ালা সোনা রঙের আঠা।

আজকাল কি মেলে সেই ভুটানি গিফট বক্স?
খুবই মেলে তবে ভুটানি নয়, চীনেটাই মেলে। 

কাগজ তা সে সাদাই হোক কী রংদার, টিউবের পেট টায় অল্প অল্প চাপ আর কাগজ যেন বিন্দু বিন্দু রূপকথার আস্তানা নিমেষে। ওহ্, একটা কথা বলে রাখি, ওপর থেকে সিধে কড়কড়ে রকমে দিদিমণিদের মত করে দেখলে সেসব ঘণ্টা বুঝবে, মাটিতে কাগজ রেখে উব্বুত হয়ে শুয়ে, চাইতে হবে নাকটা কাগজের কিনারায় আলতো ছুঁইয়ে।

আজকাল কি কেউ শোয় সেভাবে মাটিতে?
শোয় তো নিশ্চয় তবে মাটিতে নয়, ডিভানে।

পেটমোটা ক্ষুদে ক্ষুদে মালভূমি নজরে আসবে। তার তাদের ভেতরে ঝিকিমিকি দিয়ে চেনা আসবাবের অচেনা টুকরোরা গা ঘেঁসাঘেঁসি শুয়ে বসে তাও নজরে আসবে। সে ভারী শিরশিরে অবাক করা জগত। বানানোর চাবিকাঠি তোমার হাতেই। কিন্তু একবারটি তৈয়ের হলেই নজর তোমার বন্দী তাদের রাজ্যে। চাবিকাঠির মালিকানা বদলে যাবে, উমান পাবে না।

আজকাল কি সেরম চাবিকাঠির চল আছে?
লকের চল আছে তবে চাবি তাতে কমই লাগে।

অনেক ভ্যানতাড়া হল। এবারে ঝেড়ে কাশো বাপু। বলতে কী চাও, শুনি?

আজ দেখলাম বুঝলে, বৃষ্টি শেষে, সেই আঠার মত আলো।
পুব আকাশের একদিক শ্লেট কিন্তু আরেকদিকে নীলের ঢেউ জাগছে, সার্চ লাইটের মত ফিনকি ফিনকি আলোর তার হিলহিলিয়ে পড়ছে।
এদের কাজকর্মের মাঝেই কোন ফাঁকতালে গলিঘুঁজি গলে বেরিয়ে এসেছে সেই রূপকথার আঠালো আলো।

আমগাছের ওই দাহশেষে জল ফোস্কা ওয়ালা পোড়া কাঠের মত ভেজা দক্ষিণমুখী মরা ডালটাকে পেঁচিয়ে পেঁচিয়ে উঠতে চাইছে আরও উপরের পিঁপড়ে খাবলানো রক্তাল্পতায় ভোগা ডিগডিগে ন্যাতা পাতাগুলোর সিঁথিতে। কুরূপা প্রকৃতির গায়ে মাথায় হাত বুলিয়ে আদর করছে সুরূপা প্রকৃতি। কী অপার্থিব মায়া!

বহুদিন যাবৎ খুব জ্বরে পড়ে থাকা খোকাখুকুর গায়ে মাথায় মায়ের হাত বুলিয়ে সোভিয়েত দেশের গল্প গুলো খুব খুব আস্তে আস্তে বলতে বলতে বার্লি খাওয়ানোর ছবিটা দেখলাম, জান?

ভালবাসাবাসি আলো। আদর আদর আলো।
দেখলাম।

ধ্যাত্তেরিকা! সাত কাহনে এই খ্যাটন!
ডাক্তার দেখাও বুঝলে, চোখের ডাক্তার আর সঙ্গে মাথারও। তোমার না পরীক্ষা সামনে???