Wednesday, April 24, 2019

আকাশগঙ্গা

আঁধারে আজকাল আর আধার খুঁজে পাইনে।
মন অতিমাত্রায় হানটান করলে
তারাদের গান শুনি।
তারারা সব স্থিত মন্দ্র সপ্তকের গজগামিনী চলন ভাল বাসে।

আঙিনায় মিলায় যে ধূয়া তা হারায় উঠোনে ।
নাভীটানের ডাক পাগলপন্থী হলে
তারাদের গান শুনি।
তারারা সব ইলা-কূলে ব্যাপৃত মেঘজলজ কারুণি ছুঁয়ে হাসে।

আদপে প্রকৃত প্রস্তাবে,
ডেক চেয়ারের দিব্যি, সমুদ্রের গানই খুঁজি আকাশগঙ্গায়।

Tuesday, April 23, 2019

প্রতীক্ষায়

এক একটা সন্ধ্যায় দাঁড়িয়ে মনে হয় এই তো রাত্রি এল।
এই তো কাজলি আলোতে মিশছে,
সন্তাপ আড়ালি কালো।

এবারে এগোই তবে?

নির্নিমিখ কেউ ডাকছে।
বড় একলা কেউ।

শ্রীকল্যাণ হতে চন্দ্রকোষ। যাত্রাপথ।
গাঢ়তর থেকে আরও গাঢ়। প্রাজ্ঞরাত।

অপেক্ষা কর। আমিও যে প্রতীক্ষায়।

Sunday, April 21, 2019

নাওটি একাই বাই

এ জীবন কবিতার নয়।
অনিবার্য অক্ষরগুলো সরিয়ে রাখি, নিষ্পন্দ। 
কৃতঘ্নকে শুধোইনি, কীকরে এমন পারলে সে!

প্রাপ্য তো কিছু থাকে না আকিঞ্চন যাপনে।
শুধে সে কৃতঋণ, সান্ত সম্বল চীর।

যাচ্ঞা , হ্যাঁ, তা আছে এক।
কেবল প্রস্থানপথ সামান্য মসৃণতর হলেই,
আভূম কৃতজ্ঞ রই।
...

এ জীবন বিবাদের নয়।
অনির্বাণ ক্ষোভেদের আড়ালে রাখি, নিশ্চল।
বঞ্চককে শুধোইনি, কীভাবে এমন করলে সে! 

ধুলোট বাঁচাটা এগোচ্ছে এক্কাদোক্কা চলনে।
দখিনা নদীমুখী, পথ নিশান স্থির।

বাঞ্ছা , হ্যাঁ, তা আছে এক।
কেবল শঠী প্রতারণা কিছুমাত্রা কম হলেই ,
নাওটি একাই বাই।

ভালই বাসিনি?

যে শোক কোনকালেই উপলব্ধি করিনি আমি তারজন্য আশরীর ছিল পিপাসা তোমার।
যে ব্যথা কোনকালেই অনুভব করনি তুমি তারজন্য আনখশির ছিল তেষ্টা আমার।

যে শোক কোনকালে কাঙ্ক্ষিত ছিল, আজ তাতেই চূর্ণ আমি।
যে ব্যথা কোনকালে ঈপ্সিত ছিল, আজ তাতেই দীর্ণ তুমি।

চূর্ণী, আমরা কি কোনদিনই অমূলক আলোয় ভাসিনি?
দীর্ণা, আমরা কি কোনদিনই অমোঘ আঘাতে হাসিনি?
ভাসিনী, সত্য বল।
আমরা কি কোনদিনও ভালই বাসিনি?

ভাষান্তর

চাঁদের কলার মত তিলে তিলে ক্ষয়ে চলে
দুজনের যাবতীয় গুনগুন কথা।
মনমরা আমিগুলো বিজগুড়ি কাটে, কাতরায়।

একরাশ ফোস্কায় বন্দী পুরোনো সুখের সময়।

ক্রমাগত ঝুঁকে ঝুঁকে আজকাল ঈগলুর বাসিন্দা প্রায়
ন্যূনতম বিচারের বোধ।
তবু ফিনিক্সের যমজ এই চাঁদ বাঁচে, সাঁতরায়।

আচ্ছা, একবার ভাষান্তর ঘটানো যাক?

Tuesday, April 16, 2019

পাচ্ছি না

ফিকে গুঞ্জন প্ল্যাটফর্মে মাকড়সার দাঁড়ায় ভরা ন্যাড়া গাছের পাশ দিয়ে ট্রেন এগোয়।
সবজেটে পূঁজের খাল পাড়ে অ্যাবানডন্ড কেবিন হাউজের পাশ দিয়ে ট্রেন এগোয়।

আয়নার সামনে দাঁড়াই।

এত বৃষ্টির ধার এত বৃষ্টির ছাট
কিচ্ছু দেখতে পাচ্ছিনা।

Wednesday, April 10, 2019

পাঁক

মেয়েগুলো
সেতু খুঁজে চলে অবেলায় গাঁথা গুম কথাদের মোড়ে,
বিকেল আলোয় বিগতশোভনা নটী সাজা খেলো ঘোরে।
মেয়েগুলোর
নষ্ট ঠোঁটের দিব্যি দিলাশা ছিঁড়ে নেয় চোখা দাঁত,
বেওয়ারিশ ঘোলা রক্ত ও রসে কুলকুচি করে রাত।

ছেলেগুলো
বীভৎস এক বিষণ্ণ ক্ষোভে খেউড় স্রাবী তোড়ে,
মানু‌ষের যত আকুল আদর থেঁতলে পিষছে জোরে।
ছেলেগুলোর
ফুটিফাটা থাইয়ে মুখ ঘষটায় মেহেন্দী রচা হাত।
ঘণ্টা প্রতি তূরীয় বাঁচায় গোটা ঠেক আজ মাত।
...
আমাদের
আড়চোখে জ্বলা লেহন লুকাই,
বাক্! বোল্ !
বাহারে দেখ না সব ঊর্ধরেতঃ দাঁড়কাক।
আমরা
সন্ততি যত আঁচলেতে ঢাকি,
ওয়াক্ ! থুঃ!
আদিম তড়াগে ঠাঁই গা ঘিনঘিনে যত পাঁক।

সন্ধ্যাগাছ

ব্যর্থ প্রেম জড়িয়ে আছে হুতাশ বিকেলের আঙুলে।
ফণিমনসার কুঁড়ি মেখে আছে উদগ্র নিশির ডাক।

প্রান্ত-ঠাঁই নিমফুলে সান্ত্বনার খোঁজ উদ্বাস্তু আলকুশি বীজের।
হিংসুক হাগড়া হাতায় নিরিবিলি গর্ভ পাতে মধুমেওয়া ফল।

খুড়াকাঁটা স্পর্শে যন্ত্রণাদীর্ণ প্রত্যেকেই আজ
মনমরা নক্ষত্র ছুঁয়ে,
এক একটি সন্ধ্যাগাছ।

একটু

মুহূর্তেরা সদ্য গ্রন্থিবদ্ধ।
রচিত মাল্যের প্রতিটি পল-পুষ্প অনির্বাণ জাগরূক।

পূর্বস্থ বাতায়ন উন্মুখ।
দিগ্বলয় লোহিতদেহী অর্ষমার সরণে ত্বিষার্চি প্লাবিত।

তৃপ্ত যূথযাপন। 
শ্রান্ত যূথচারী।
একমাত্র ঈপ্সা জাগরী :
একটু ভাল থাকি?

কার দিকে?

আকাশের কটি স্বেদবিন্দু ছুঁয়েছিল হঠাৎই এক রংচটা মাজাভাঙা ইট।
তারই খাঁজে ডেরা ঘরে শুয়েছিল এক শুঁড়ছেঁড়া ঘোলাটে বোবা কীট।

শুষে নেওয়ার তীক্ষ্ণ প্রতিযোগিতা।
শুরু হল।

কার দিকে আঙুল তুলবে হে?

দেখা মেলে না

কথা দিলাম নোনাজল অধিকৃত জমিজিরেত, ফেরত নেবে বুক।
কথা দিলাম খাঁচা ভেঙে কাঁধে এসে বসবে, অলীক বাসন্তী সুখ।

স্রেফ কথা দাও, অনেকটা ঝড় হলেও ঝাউগাছের চূড়ো থেকে কচি কাকের আস্তানা পড়াটা আটকে দেবে।

দেবে?

কেবল অঝোর বৃষ্টি পড়ার মত চারপাশ গেঁথে চলেছে কেউ।
জলের আর দেখা মেলে না।

পরাজয়

ডানা ভাঙার পরে দেখা যায় তৃষিত আঁখিপল্লব ছুঁয়ে আছে সমস্ত পরাজয়।
ছুরি বসা পিঠে মুখ গোঁজা বিশ্বাসের লোভী ঠোঁট ভিজিয়েছে রক্তস্রোত।
ঘষটে ঘষটে এগোয় টিকে থাকা।

"ভালবাসা" আভিধানিক নড়াচড়ায় স্তিমিত।

নদী ও নারী

নদীর সাথে সই পাতায় নারী।
চেতনে বা অবচেতনে। অধিচেতনে জীবনভর স্বেচ্ছা বা পরেচ্ছায় বহতা ধর্মের অকৃত্রিম মিলই বোধকরি এক অনিন্দ্য গ্রন্থিবন্ধন করে দেয়।
তাই পরস্পরে দেখা সাক্ষাৎ হলেই অনির্বচনীয় আনন্দীদোল জাগে। এর ছপাৎ পা ফেলাতে ওর ছলাৎ আলতো ধাক্কা।

টলটল টলমল।

রূপোর পাঁয়জোরের চমকানি ঢেউয়ের রূপোলী ছটার ঝলকানির সঙ্গে তাল ঠোকে। নথ ঝাঁকিয়ে ছদ্ম কলহ। তারপরেই হাসির ঝর্ণা ধারা উভয়েরই স্নান সারে। প্রাথমিক উচ্ছ্বলতা মিটলে, থিতু হয়ে বসলে ঢেউয়ের ঘাই আর বুকের ঘাই এর নিজস্ব ভাষাচলনে চারটি দুখসুখের আলাপও সারা হয় ধীরে ধীরে।
চাওয়া পাওয়া চেয়ে না পাওয়া কিম্বা না চাইতেই পেয়ে যাওয়ার টুকরো টাকরা খতিয়ান। একলা দোকলা দেওয়া নেওয়ায় আট ছয়ের বা বারো দুয়ের ভাগাভাগিতে জুটে যাওয়া চোদ্দ সম্বলে, বাকি দু আনা পড়শি দিনে গেঁজে বন্দী হয়ে যেতেও তো পারে এই লোভাতুর স্বপ্নকল্প অপেক্ষায় মধ্যবিত্ত আজকালপরশু গড়ান গুজরান।

কলকল ছলছল।

তো এভাবেই একদিন আমার সাথেও জুড়েছিল নদী। সবাইকারই যেমন জোড়ে। যে কোনও মুহূর্তে এক উপায়ে স্রোতস্বিনী আলতোভাবে দৃষ্টি ঘরের চৌকাঠে এল কী কুলকুল করে জেগে ওঠা অকারণ খুশিদল জাকুজির মত নিমেষে ভিজিয়ে দিত বুকের আনাচকানাচ। থোড় বড়ি খারা যাপনের নানাবিধ বঞ্চনা পরবর্তী জঞ্জাল পলকে সাফসুতরো। গড়ে উঠতাম। ভরে উঠতাম। তৃপ্ত হতাম। জীয়ন সম্পৃক্তি বাড়ত বেশ খানিক। স্নেহ প্রেম যৌনতা ঈর্ষা একাকীত্ব সমস্ত বোধের আসঙ্গী।
...
সব উলটিপালটি ইদানীং। তীব্র বিবমিষা জাগে নদীর নামোল্লেখ এলেই। তবু নিজেকে টেনে হিঁচড়ে পাড়ে দাঁড় করালে ওপারের আকাশ জুড়ে হানা দেয় দুটি ফ্যাকাসে কাঁপতে থাকা নীলচে শিরা জাগা পাতা জুড়ে গড়া অঞ্জলি। কিছু রাখা তাতে। নাহ, কণকাঞ্জলি নয় সে, তাতে ধরা আছে গলাগলা খুব কালো মাটি ঠাসা একটা খনখনে সরা ক্লান্ত জুঁই মালার নরম কঙ্কাল জড়ানো। ঘণ্টাখানেক আগে আনভিটা এক নাভীকে অজানা তীক্ষ্ণগন্ধী মাটিতে গুঁজে অচেনা তীব্রবুভুক্ষু তরঙ্গ গ্রাসে কৃত্রিম ভিটের খোঁজে পাঠানোর প্রক্রিয়ার সূচনা। পর ক্ষণ হতে অনাথ সোনাবীজ আশ্রিত যাপনে রয় খেয়ালী নাব্যতার।

থিরতাল টালমাটাল। 

আজকাল নদীর দিকে চাইলে আমি জল দেখিনা। নাভী দেখি কেবল। শয়ে শয়ে হাজারে হাজারে নাভী। জোয়ারে ভাটায় ষাঁড়াষাঁড়িতে অকল্পনীয় সংখ্যক নাভীর গলগলিয়া হুড়মুড়ানিতে শক্তিগর্বী একটি নাভীস্রোতা খলখল করে চলেছে। পিশাচী নাচনী এক। সাক্ষাৎ নিয়তি। বীভৎস দবদবা।

খলখল গলগল।

অসহায় নাচার আমি হারতে হারতে হটতে হটতে শেষমেশ নিজেকে কুঁকড়ে গুটিয়ে গুঁজে রাখার চেষ্টা করি আমার শেষ সম্বলে। বড় ঘরের শতাব্দী প্রাচীন খাটে। বাবার বিছানায়। বালিশের প্রায়ান্ধকারে।
আচমকা আমি টের পাই নদীর রকমেই স্রোত উথলায় আশরীর। বান আসে। মরণ সঙ্কোচনে হাহা ডাক ছাড়ে ব্যক্তিগত প্রয়াত নদী। প্রমাণ হয় সে আপাত প্রয়াণ। মরা নদীর সোঁতা চুঁইয়ে আসে আড়ালী ফল্গু বা শীর্ণা সরস্বতী।

তারপর ...

আমার ঘেন্না পায়। সবকিছু যা ঢেউয়ে আছে। আমার ভয় পায়। সবকিছু যা ঢেউয়ে বাঁচে। 
সেই সাথে নিজেকেও।
কারণ আমি জেনে গেছি প্রতিটি নারী, তরঙ্গত্রাস সত্ত্বেও, চাও বা না চাও, আসলে নদী।