Monday, February 24, 2020

শিকড়

বিমান তার পায়ের পাতাদুটি মাটি থেকে যেইমাত্র আলতো উঠিয়ে নেয়, হাউমাউ কান্না পায়।
সবসময়ই এমন নয় যে রওনা হওয়া অভ্যস্ত জিরেতের বাইরে, এমনও নয় যে বহু বহু কাল পরে ফেরার সময় মিলবে। এমনকি হয়তো ফেরাই হচ্ছে সাম্প্রতিক নিজভূমে।
তবুও কান্না ডাকে। হু হু করে ওঠে পাঁজরার খাঁচা।
বোধকরি মাটির অমোঘ টান হল এই।

পায়ের তলার মাটি বড় মহার্ঘ বস্তু হে।
প্রতিটি উদ্বাস্তু অস্তিত্ব রক্তকণায় বয়ে চলে ওই নাছোড় মাটিটুকু আঁকড়ে থাকার তীব্র পিপাসাটা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম হতভম্ব উত্তরাধিকারী সেই তেষ্টার।
কী ভীষণ প্রেম! কী ভীষণ বিতৃষ্ণা!

আসলে শিকড় সাপের চলন অভ্যাস করে।
আসলে শিকড় জিনের কথন গ্রাস করে।
শিকড় বড় অভিমানী। শিকড় বড় ক্ষমতাধর।

মহার্ঘ্য দাবী রেখে গিয়েছে সবকটি পা এবং বুকের ক্ষতচিহ্ন। অফেরতযোগ্য।
উজিরপুরে বাস্তুসাপের খোলস কাগজী লেবুগাছে শুয়ে থাকে অসহায়। আসামী হেমন্তের চোখ জ্বলে। রাগী চোখ এড়িয়ে জল ঝরে।

শূন্য করোটি আরও শূন্য বাতাসকে পথ জোগায়।
বায়ুভূক নিরালম্ব মুখস্থ বলে আজন্মের অঙ্গীকারনামা।

ছেলেটা চলে গেছে অগম্য দূর পার।

Tuesday, February 4, 2020

আদৌ?

রোগা নদীটা সাঁঝ গড়ালেই রামধনু রঙ রেশম শাড়ি আজও পরে।
কতকাল হয়ে গেল বল দেখি, কাছাকাছি বসে থাকিনা জল-ছুঁই ঘাটের পৈঠায়।
অনিন্দ্য নৈঃশব্দ্য।

চিলতে আকাশটা আলো দেখলেই তুঁতে চন্দন জামেওয়ার শাল আজও জড়ায়।
কতযুগ পার হল ভেবে দেখ, পাশাপাশি হেঁটে পেরোই না ভোর-ছুঁই সাঁকোর জমি।
অলঙ্ঘ্য নৈকট্য।
...

কিন্তু এটা তো তুমি মানবে বল,
আমরা তো কোনও এককালে এসবই করতুম কেবল।
খুব রকমেই করতুম, কি না?

মনে পড়ে? আমারই কি পড়ে আদৌ?
...

আজকাল কেবল একটা বিরাট চাদর পেঁচিয়ে প্রেতের মতন চলাফেরা করে থাকি। 
বড্ড ভারী ধরণের কালচে রঙ সেটার।
নাকটা কেবল বেরিয়ে আসে। আরও ভারী গন্ধ টানে।
ঘন জমাট অভিমান।
অভেদ্য। অচ্ছেদ্য।
...

আরেকটি সত্য গন্ধেরও ঝাপটা টের পাই,
অল্পে অল্পে খুইয়ে ফেলছি আমাদের দামী সকলটুকু।
সামান্য হলেও পাচ্ছ নিশ্চয়, নয়?

বোঝ তুমি? আমিই কি বুঝি আদৌ?