Thursday, June 18, 2020

ডাক পাঠাল

প্রৌঢ়ত্বে স্রেফ আঁকড়ে বাঁচি বর্ষাদিনের সে বিকেল বেলা,
আকাশ যখন মেঘ ঝরিয়ে কাচা আলোর গল্প বলা।
বিকেল ডোবে সাঁঝ-সোঁতায়, রাত-দরিয়ায় সাঁঝের ঝাঁপ,
নিঝুম রাত শিরশিরিয়ে ফিসফিসালো আদিম শাপ।
...

নির্জনতা ডাক পাঠাল
পাঁজর বাঁধে লাগল ঘাই
আকাশ গড়ে তপ্ত ধূম আর মাটি গড়ে শীতল ছাই।

কেউ কোত্থাও নেই

কেউ কোত্থাও নেই।

সময় বড় একলা হাঁটছিল।
রাজপথিক একা।
প্রজাপথিক একা।
নাগরিক একা।
মফস্বলি একা।
গ্রামীণ একা।
কানাগলি একা।
সব কটা সময় একাই হাঁটছিল।

তারপর সে অনেক, অনেক মানুষ দেখতে পেল।
তাদের কোলে কাঁখে ঘাড়ে আরও অনেক ক্ষুদে ক্ষুদে মানুষ।
চোখে মরিয়া ক্লান্তি, মরিয়া লড়াই।

সময় এবার ওদের পাশে পাশে হাঁটছিল।
খিদের ভাগ পেল।
রুটির ভাগ পেল।
তৃষার ভাগ পেল।
জলের ভাগ পেল।
জিরোনোর ভাগ পেল।
তামাকের ভাগ পেল।
সব কটা ভাগ পোঁটলা বেঁধে হাঁটছিল।

তারপর দিন থেকে রাত, রাত থেকে ভোর এল।
এ বাঁক পেরোলে ঠাহর হয় হুই দিগরে 'পৌঁছে যাব' নিশানি মোড়।
হঠাৎই ট্রেন এল, একটা ট্রেন।

সময় আবার একলা হাঁটছে।

কেউ কোত্থাও নেই?

(সময় কিচ্ছু দেয় না। কিচ্ছু নেয়ও না।
স্রেফ জমাখরচের খেরোর খাতা বগলে পথ চলে।
ওরা তার পিঠে ছুরি গেঁথে খাতাখানা কেড়ে নিলে!!!)

নাছোড়বান্দা আশা

মরে যাওয়া জন্মগুলোর যত অপূর্ণ সাধ, এক আঁজলায় মিটিয়ে নেব গতাগত জন্মের শোধ।
আগামী জন্মে।
না রাখা সমস্ত কথাদের লিখে রাখা খাতাগুলো জড়ো করে, উস্কে দেব দারুণ ক্রোধ।
আগামী জন্মে।
প্রত্যেক সুখী ঘরে হানা দেব, মুঠোয় থাকবে অনৃত কথাকারদের কলার আর চুলের গোছ।
আগামী জন্মে।

এ জন্মে কেবল মরামাছের চোখ হয়ে টিকে থাকি।

(ঐ আগামী জন্মকেই মায়াভ্রম ডাকে মস্তিষ্ক। বুক নাছোড়বান্দা আশা বলে থাকে।)

চেয়েছিল?

দেখাদেখি হয়।
মুখোমুখি ইদানীং আর সাক্ষাৎ হয় না আমাদের কারোরই।
দুটি ঠোঁটের বেড়া।
মুখগুলি ঢেকে আছে হরেকরকম রঙ ও বুননের আবডালে।

হাসির প্রত্যুত্তর মেলে না, ঠং করে ঘাই ওঠে অভিমানের, থমকিয়ে মনে পড়ে, হাসিটা দেখাবার উপায় নেই আমারও, তাঁরও।

চোখাচোখি হয়।
চোখ আতিপাতি সখ্যতা উষ্ণতার অনুরণন হাতড়ে খুঁজে চলে। 
দুটি চোখের তারা।
অব্যাহত নির্দিষ্ট দূরত্ব অসহায় নিষেধাজ্ঞার তরঙ্গ মেলে।

দেশের দশের নানা মাপের মসীহ্‌ সাজার সূত্রে অম্বল,
মধ্যেমধ্যে অসূয়া দ্বেষ আর দেখনদারির চোঁয়া ঢেকুর ওঠে, আমারও, তাঁরও।

এই অবসর এই অবকাশ চেয়েছিল সে?
আমিও!

তুইই বল!

অনেক দূরের জন্ম থেকে গন্ধ বিলোয় খোঁপার ফুল।
রঙিন ঘোরে ঘিরছে আনখ জ্বলন্তমোম জোছনা রাত।
আকুল ভুলের জন্ম দিল শিরশিরানি ঝুমকো দুল!
এখন কি আর সম্পর্কেরা সুতোয় বাঁধা জন্ম সাত?

শিমুল পলাশ সেই বিহানে রডোডেনড্রন মাতাল দিক।
মুঠো ধুকপুক হৃদকমলে পা বাড়ানোর অচিন ভয়।
আজ রাখলি আজব দাবী (সে) কৃষ্ণচূড়া ফিরিয়ে নিক!
বিনিসুতোর মালায় কি সবার চিরকালীন রাজ্যি হয়?

এত আলো এত আকাশ নিটোল প্রেমের জমাট দাগ।
মুহূর্ত যেই পেরিয়ে গেল মৃত্যু দাগের আধখানা পল।
বোকাইচণ্ডী বুঝতে হয় রে কানাকড়িতে বিকোয় রাগ!
বড্ড ক্ষুদে স্মৃতির দেরাজ ; কোথায় রাখি, তুইই বল?

নাগর জীবন না-ঘর জীবন সুর-বেসুরো জোড়ের গান।
নগর যাপন মালুম না পাক, অশ্রুসজল তোফাই স্নান।

হাঘরে

দিনগুলো ঘোলাটেপারা ঠেকছে।
কেটে সাফ কৃষ্ণচূড়ার শিকড়ে হোঁচট পা-টা বাড়ালে।
তোমায় মনে পড়ছে।

রাতগুলো ধূসর তাঁবুতে মুড়ছে।
ফর্দাফাই আবিরের ঠোঙাপচা গন্ধ গুমোট বাড়ালে।
তোমায় মনে পড়ছে।

একসময় রঙ দোল এলে, তুমি নিশ্চিত আসতে।

বসন্তই সম্ভবতঃ, নামটা তোমার।
নয়?

ইদানীং আমরা অভ্যস্ত নানা উচ্ছিষ্টের যাতায়াতে।

হাঘরে সম্ভবতঃ, নাম আমাদের।
নয়?

অক্ষম প্রাণ

এঁরা কেউ কথা রাখেনি।
সুতলির গিঁটে বাধা অক্ষম প্রাণ, টান পড়লেই ছিঁড়ে যায়।  কথা রাখবেই বা কী করে!
রাখতে পারেনি।
তুমি কথা দিয়ে রেখেছ আমাদের। মনে আছে তো?
সে কথা রেখো।

ওঁদের কিন্তু অমৃতলোকেই রেখো।