Sunday, December 27, 2020

আনন্দনগরীর সেকাল

 কবিতা লিখতে ভালবাসি কচিকাল থেকেই। 

শব্দের ঝিলমিল ঝঙ্কার আর ছন্দের অবাক করা চলনের মিঠে জাদু গুণ করেছিল। যাহোক কিছু ঘুলিয়ে মিলিয়ে খাড়া করার চেষ্টা করতাম স্কুলের নীচের দিককার ক্লাস থেকেই। বুঝতেই পারছেন সেগুলো কী অদ্ভুতুড়ে দাঁড়াত। (শ্যামলদার শ্যামল চ্যাটার্জী কাছে এর কিছু কিছু নমুনা আছে)। কেউ ফিরেও তাকিয়ে দেখেনি সেসব খ্যাপামির খতিয়ান কিন্তু তাতে লেখার প্রাবল্যে ভাঁটা পড়ত না কারণ একনিষ্ঠ পাঠক দুইজন ছিল আমার। শ্রোতা আরেকজন।

বাবা আর মা। দিদা।

হ্যাঁ, পরের দিকে আমার লেখালেখি ফালাফালা করে দিলেও সেই বয়সে খানিকটা প্রশ্রয়ই দিয়েছে মা। আর বাবা তো চিরকাল "অ্যাঁ? হ্যাঁ, ভাল , ভালোই তো।" ছাড়া কিচ্ছু বলেনি।


তারপর একটা সময় বরাত মাফিক প্রেমপত্র লেখার কাজ শুরু করলাম। অনুভব করতে পারলাম গদ্যের মাধুর্য। লেখার প্রতি ভালবাসা গাঢ়তর হতে লাগল। একসময় বন্ধু হয়ে গেল কাগজ কলম, মন ভাগ করে নিতে থাকল অব্যক্ত অভিব্যক্তি। ফলে নিজেকে ভাল রাখবার জন্য, নিজের সঙ্গে কথা বলবার জন্য আর নিজের ভেতরের চাহিদা মেটাতেই লিখে চলেছি। সই পাতিয়ে নিয়েছি কালি কলম মন এই ত্রিশক্তির সঙ্গে। অন্তরাত্মা জানেন, সেগুলো ছাপার যোগ্য এ আমার কোনওকালেই মনে হয়নি, আজও হয় না। 


এরপর দশ সালে ফেসবুকে এলাম। শ্যামল চট্টোপাধ্যায়, প্রসেনজিৎ চট্টোপাধ্যায় Prasenjit Chattopadhyay , শ্রীদীপ চট্টোপাধ্যায় Sridip Chattopadhyay এবং সায়ন্তন গুপ্ত Sayantan Gupta , অলিপ কুণ্ডু Alip Kundu মাসুদুর রহিম বন্ধু হলেন। হইহই করে ইন্ধন জুটলো। শ্যামলদাকে তো কড়ার করে নিতাম নকুড়ের মিষ্টি আনবে, তবে কবিতা পাবে। মনের আনন্দে লিখতাম ফেসবুকে, দশ বার জন পড়তেন। প্রাপ্তি ষোল আনা এতেই মনে করতাম। দস্তুরমত ফেবু লিখিয়ে যাকে বলেন আপনারা। 


ধীরে ধীরে Amitabha Siraj অমিতাভ সিরাজ, রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য সান্যাল Ramkrishna Bhattacharya Sanyal, রূপঙ্কর সরকার রূপঙ্কর সরকার Rupankar Sarkar, রফিকুল ইসলাম Rafiqul Islam, নইমুল হক পারভেজ Naimul Hoque Pervez, সোমমৌলি অধিকারী Som Mauli Adhikary, ব্যোমকেশ মণ্ডল Byomkesh Mondal, গৌতম সরকার Gautam Sarkar সঞ্জয় চক্রবর্তী Sanjoy Chakraborty তন্ময় দে Tanmoy Dey , সমিত মুখোপাধ্যায় Samit Mukherjee এঁদের সঙ্গে পরিচিত হলাম। সম্পর্ক ফেবুর গণ্ডী ছাড়াল। অমিতাভ সিরাজ মিঠুলদা, রামকৃষ্ণ ভট্টাচার্য সান্যাল রামকৃষ্ণ জেঠু, রফিকুল ইসলাম রফিক দাদা, সোম মৌলি অধিকারী সোমদা, সমিত মুখোপাধ্যায় সমিতদা, গৌতম সরকার গৌতমদা, তন্ময় দে মামা, নইমুল হক কেবল পারভেজ হয়ে গিয়েছেন তা বেশ কয়েক বছর হল। সমৃদ্ধ হতে থাকলাম।


সোমদা আর তাপসদাকে Tapas Das পাওয়ার মধ্য দিয়ে আমার কতখানি ঋদ্ধ হওয়া এ কেবল আমিই অনুভব করি।

পেলাম জাহিদ হোসেনকে Zahid Hossain। পৃথিবীর যে প্রান্তেই আমরা দুইজন থাকি না কেন, আমি জানি আমার দাদা সর্বদা পাশে আছেন। প্রতি মুহূর্তে শিখি দাদার থেকে।


এরপর মঞ্চে অবতীর্ণ হলেন সুজয় দাস Sujoy Das। ফেসবুকের ফ্রেন্ডলিস্টে আসা একজন মানুষ কবে যে আমার সত্যিকারের মামু হয়ে গেলেন আজ আর দিনক্ষণ মনে করে বলতে পারি না। সত্যিকারের বন্ধু যাঁর কাছে সব ওগরানো যায়। পেলাম স্বাতী চট্টোপাধ্যায় দাসকে Swati Chattopadhyay Das। খোলা গলায় বলতে পারি ওঁকে আমি আদর্শ মানি। সুজয় মামুর বন্ধু অরিন্দম চক্রবর্তী Arindam Chakravorty হয়ে উঠলেন অরিণ মামু। ভেতর নিঙড়ে কীভাবে কবিতা জন্মায় অরিণ মামু শিখিয়েছে।

এঁদের প্রত্যেকের উৎসাহে ফেবুতে লেখালেখি বাড়ল তো বটেই, আকাশবাণীতেও একাধিক এবং আকর্ষণীয় সব কাজের সুযোগ মিলল। 'বুধ সকালে', 'আসুন বেড়িয়ে যান' ও 'কলকাতার ডায়েরী' তে লিখে বড় আনন্দ পেয়েছি। একেবারেই অজ্ঞ আমাকে সঞ্জয়দা Sanjay Chatterjee ও রবিনদার নিঃস্বার্থ সাহায্য ভুলব না। নিজের লেখা নিজেই প্রথম রেকর্ড করবার দিনটা তো আমার কাছে অতুলনীয় আবেগের।


শমী মজুমদারকে Shomi Mazumder পেলাম। বন্ধুতা শব্দের অনিন্দ্য অনুরণন। এক্কেবারে মুশকিল আসান এবং একই সঙ্গে আমার সিধু জ্যাঠাও বটে। হেন বিষয় নেই যার উপর ওঁর পড়াশোনা নেই। তাছাড়া ওঁর উপরে যে দাবী ও অত্যাচার আমি চালাই, এ জীবনে কারোর উপরে চালাইনি।


ধীরে ধীরে রামকৃষ্ণ জেঠুর আগ্রহে নুনেতে ভাতেতে-র তৃতীয় খণ্ডে লিখলাম কড়া পানীয় নিয়ে, সুদীপদার Sudip Bhattacharyya আগ্রহে পারাপার-এ লিখলাম কবিতা। এদিক সেদিক এপার ওপারে লেখা হল কিছু কবিতা গল্প রম্য রচনা ভ্রমণ বৃত্তান্ত। 

সুদীপদারই আগ্রহে আঠারো সাল থেকে এইবার অবধি কলকাতা বইমেলায় বলবার সুযোগ পেলাম। ইদানীং জেঠুর যোগাযোগেই বৈদ্যুতিন মাধ্যমে বকবক করছি মাঝে মাঝেই।

সবই হল, কিন্তু নিজেকে পাতি ফেবু লিখিয়ে ছাড়া অন্য কিছু ভাববার সাহস জোটেনি কখনও, ইচ্ছেও হয়নি। বেশ ছিলাম এসব নিয়ে। 


ব্যক্তিগত জীবনে তুমুল ওঠাপড়া চললেও, গায়ে যতটা কম লাগে, কলম যেন না থামে, তারই চেষ্টা করে গিয়েছেন এঁরা। আমিও সম্মান রাখার চেষ্টা করেছি।


এ বছরের শুরুর মাস দুই তিন পরে সুদীপদাই ফের উসকে দিল কলকাতা নিয়ে লেখালেখির খেয়াল। ছাপা হবে। খানিকটা তো ছিলই আকাশবাণীর দৌলতে, গুছিয়ে বসলাম অক্ষরের ক্যালাইডোস্কোপ আরও কতটা কী দেখায় সেটা লিখতে। প্রসূন বন্দ্যোপাধ্যায় Prasun Bandopadhyay সহায়তা করলেন সার্বিক ভাবেই।

লেখা তো হল কিন্তু ছাপা হবে হবে হয়েও কলেবরের (আমার নয়, বইয়ের) বিভিন্ন জটিলতায় ছাপার প্রক্রিয়া ব্যাহত হল। 

মলাটবন্দী হচ্ছে না এটা নিশ্চিত হওয়ার পরে আমি তো যথা পূর্বম ফেবুতেই দিয়ে দেব যা লিখেছি এমনটা স্থির করলাম। অলক্ষ্যে কলকাঠি নাড়লেন কপালেশ্বর। আমারই এক দাদার সূত্রে গাঙচিল প্রকাশনার অধীর বাবুর Adhir Biswas সঙ্গে কথাবার্তা শুরু হল। প্রচ্ছদের দায়িত্ব এক কথায় নিয়ে নিল আমার অন্যতম ঈশ্বর বিশ্ব মামার Biswanath Bandyopadhyay ভাগ্নী ছেলেবেলার বন্ধু মামুনের Suchismitam Mukherjee ভাই, আমার ভ্রাতৃসম বুবুন Pritam Kanjilal।

এই সমষ্টির মিলিত ফলশ্রুতি হল : 

"আনন্দনগরীর সেকাল"।


স্পষ্ট বলে রাখি, সর্বাঙ্গসুন্দর হওয়া অসম্ভব কারণ আমার অজস্র ত্রুটিবিচ্যুতি। আপনারা বইটি পড়ে যদি সেই ত্রুটিগুলোই সামনে এনে দেন, শুধরে দেন, সবিশেষ কৃতজ্ঞ থাকব।


ভাল হোক।


তোমার সঙ্গে

 তোমার সঙ্গে যেইদিন আমার প্রথম দেখাটা হল,

সিঁড়ির মুখে ওঠার পথে আঁধার খানিক ছিল।

অস্পষ্টতায় এগিয়ে যাওয়া পল কয়েক নিল।

তারপরেতে দিঠির আরাম বড় সহজ আলো।

দাঁড়িয়েছিলে সিঁড়ির মাথায় তিলেক ক্ষণই বল,

ত্বরিত পায়ে নেমে এলে হাসিতে ঝলোমলো।

মাঝামাঝিতে মুখোমুখি বড্ড নিজের ভেল।

হঠাৎ আপন ঠাঁই মিলেছে এমন ঠাহর গেল।

"এসেই যখন পড়লে সাঁঝে, হাঁটবে পাশে? চল"।


তোমার সঙ্গে যেইদিন আমার প্রথম দেখাটা হল,

এখন থেকে তা অযুত নিযুত আগামী বছর ক'ল।

নাই বা গেলে

 বেশি দূর যেয়ো না, বুঝলে?

ছলাৎ ছল আড়চাউনি দিনমান পেরিয়ে, ছলছল চেয়ে থাকা শঙ্খালি সাঁঝ। 

বেশি দূর নাই বা গেলে।

টালিঘরের ভেতরে

গাঢ় নাভী থেকে উঠে আসে সেইই কাঁঠালচাঁপার গন্ধ। 

খসখসে, বহুদিন মরে ভূত মানিব্যাগের খাঁজে। 

টালিঘরের বাইরে

কাঁচা নালা থেকে উঠে আসে সেইই ভালো বমির ছন্দ।

করকরে, বহুদিন খসে প্রেত কলঘরের মেঝেয়। 

বেশি দূর যেয়ো না, বুঝলে?

গরগরে কলঙ্ক-রাগ আষ্টেপৃষ্ঠে জড়িয়ে, টলটল গণ্ডি কাটা ইমদাদী বাজ। 

বেশি দূর নাই বা গেলে ...


থকথকে রক্ত মেখে ছেতরে আছে কালাচের ত্বক।

শাঁখামুটি ইনিয়ে বিনিয়ে পেঁচাচ্ছে কেবল।

কী হয়! কী হয়!

 সাঁঝদিয়াই অন্ধ-মণিটিকে সাঁটিয়ে দিয়ে গেছে রাত চাদরে। সবজেটে-নীল বিষ লালায় মাখিয়ে। 

জানখসা ঠাউরেছে এরে সেই রঙিলা, বেল্লিক খেয়াল। 


দিনমানের সোনাল দিঠিটিকে খুবলে খেয়ে গেছে এক বাদুড়ে। এনামেল সানকিটা জিহ্বায় কাঁকিয়ে। 

এ খলিফাও দ্যাখ সেঁটে আছে বিলকুল, বেহায়া বাচাল। 


কবেকার পাথুরে প্রেতের দল, সারবন্দী লঙরে।

তামামশোধের খেলায় মেতেছে খেঁকুরে সময়। 

চোরাঘাই ঝাপটে চামচিকে সাঁতরাচ্ছে সাগরে। 

নির্বাক সুপুরির চিমসানো ডর, কী হয়! কী হয়!

Friday, July 17, 2020

ডুব

শ্মশানঘাট
ধুতি উড়নি চাদর তোষক
চ্যালা খাট

সমস্তের হাতবদল হয়। মাটিমাখা নাভীর দলাটা অবধি।

শাদা মালা
কাঠি মালসা ধূপ আতপ
সবরী কলা

মন্ত্রের চলনও বদলায়। নোট গুলোর অঙ্ক আদতে বিধি।

না ভালোবেসে থাকতে না পারাটা কিম্বা লাখ কোশিশেও না ভালবাসতে পারাটা
এধার ওধার হয়? অন্তত আংশিক?

কী বুকে যে টুপ করে ডুব দেব!

বাঁচতে ...

খয়ের রঙা ধান ভরা এক কৌটো
মিশি রঙা খোলস এক গোখরোর
চিড় বোঝাই খটখটে এক কলসী
পাল্লাটা খোয়া গেছে এক গোবরাট

বাঁচতে এসেছিল ওরা।

বৃষ্টি এইমাত্র থামল।

পরিত্যক্ত

যে মেয়েটা নক্ষত্রের পাড়ায় যাবে বলে হারিয়েছে আলেয়া গলিতে,
তার শাদা চোখ পড়ে আছে তোমাদের পরিত্যক্ত কুয়োতলায়।

মণি নিয়ে গিয়েছে আকাশ।

Thursday, June 18, 2020

ডাক পাঠাল

প্রৌঢ়ত্বে স্রেফ আঁকড়ে বাঁচি বর্ষাদিনের সে বিকেল বেলা,
আকাশ যখন মেঘ ঝরিয়ে কাচা আলোর গল্প বলা।
বিকেল ডোবে সাঁঝ-সোঁতায়, রাত-দরিয়ায় সাঁঝের ঝাঁপ,
নিঝুম রাত শিরশিরিয়ে ফিসফিসালো আদিম শাপ।
...

নির্জনতা ডাক পাঠাল
পাঁজর বাঁধে লাগল ঘাই
আকাশ গড়ে তপ্ত ধূম আর মাটি গড়ে শীতল ছাই।

কেউ কোত্থাও নেই

কেউ কোত্থাও নেই।

সময় বড় একলা হাঁটছিল।
রাজপথিক একা।
প্রজাপথিক একা।
নাগরিক একা।
মফস্বলি একা।
গ্রামীণ একা।
কানাগলি একা।
সব কটা সময় একাই হাঁটছিল।

তারপর সে অনেক, অনেক মানুষ দেখতে পেল।
তাদের কোলে কাঁখে ঘাড়ে আরও অনেক ক্ষুদে ক্ষুদে মানুষ।
চোখে মরিয়া ক্লান্তি, মরিয়া লড়াই।

সময় এবার ওদের পাশে পাশে হাঁটছিল।
খিদের ভাগ পেল।
রুটির ভাগ পেল।
তৃষার ভাগ পেল।
জলের ভাগ পেল।
জিরোনোর ভাগ পেল।
তামাকের ভাগ পেল।
সব কটা ভাগ পোঁটলা বেঁধে হাঁটছিল।

তারপর দিন থেকে রাত, রাত থেকে ভোর এল।
এ বাঁক পেরোলে ঠাহর হয় হুই দিগরে 'পৌঁছে যাব' নিশানি মোড়।
হঠাৎই ট্রেন এল, একটা ট্রেন।

সময় আবার একলা হাঁটছে।

কেউ কোত্থাও নেই?

(সময় কিচ্ছু দেয় না। কিচ্ছু নেয়ও না।
স্রেফ জমাখরচের খেরোর খাতা বগলে পথ চলে।
ওরা তার পিঠে ছুরি গেঁথে খাতাখানা কেড়ে নিলে!!!)

নাছোড়বান্দা আশা

মরে যাওয়া জন্মগুলোর যত অপূর্ণ সাধ, এক আঁজলায় মিটিয়ে নেব গতাগত জন্মের শোধ।
আগামী জন্মে।
না রাখা সমস্ত কথাদের লিখে রাখা খাতাগুলো জড়ো করে, উস্কে দেব দারুণ ক্রোধ।
আগামী জন্মে।
প্রত্যেক সুখী ঘরে হানা দেব, মুঠোয় থাকবে অনৃত কথাকারদের কলার আর চুলের গোছ।
আগামী জন্মে।

এ জন্মে কেবল মরামাছের চোখ হয়ে টিকে থাকি।

(ঐ আগামী জন্মকেই মায়াভ্রম ডাকে মস্তিষ্ক। বুক নাছোড়বান্দা আশা বলে থাকে।)

চেয়েছিল?

দেখাদেখি হয়।
মুখোমুখি ইদানীং আর সাক্ষাৎ হয় না আমাদের কারোরই।
দুটি ঠোঁটের বেড়া।
মুখগুলি ঢেকে আছে হরেকরকম রঙ ও বুননের আবডালে।

হাসির প্রত্যুত্তর মেলে না, ঠং করে ঘাই ওঠে অভিমানের, থমকিয়ে মনে পড়ে, হাসিটা দেখাবার উপায় নেই আমারও, তাঁরও।

চোখাচোখি হয়।
চোখ আতিপাতি সখ্যতা উষ্ণতার অনুরণন হাতড়ে খুঁজে চলে। 
দুটি চোখের তারা।
অব্যাহত নির্দিষ্ট দূরত্ব অসহায় নিষেধাজ্ঞার তরঙ্গ মেলে।

দেশের দশের নানা মাপের মসীহ্‌ সাজার সূত্রে অম্বল,
মধ্যেমধ্যে অসূয়া দ্বেষ আর দেখনদারির চোঁয়া ঢেকুর ওঠে, আমারও, তাঁরও।

এই অবসর এই অবকাশ চেয়েছিল সে?
আমিও!

তুইই বল!

অনেক দূরের জন্ম থেকে গন্ধ বিলোয় খোঁপার ফুল।
রঙিন ঘোরে ঘিরছে আনখ জ্বলন্তমোম জোছনা রাত।
আকুল ভুলের জন্ম দিল শিরশিরানি ঝুমকো দুল!
এখন কি আর সম্পর্কেরা সুতোয় বাঁধা জন্ম সাত?

শিমুল পলাশ সেই বিহানে রডোডেনড্রন মাতাল দিক।
মুঠো ধুকপুক হৃদকমলে পা বাড়ানোর অচিন ভয়।
আজ রাখলি আজব দাবী (সে) কৃষ্ণচূড়া ফিরিয়ে নিক!
বিনিসুতোর মালায় কি সবার চিরকালীন রাজ্যি হয়?

এত আলো এত আকাশ নিটোল প্রেমের জমাট দাগ।
মুহূর্ত যেই পেরিয়ে গেল মৃত্যু দাগের আধখানা পল।
বোকাইচণ্ডী বুঝতে হয় রে কানাকড়িতে বিকোয় রাগ!
বড্ড ক্ষুদে স্মৃতির দেরাজ ; কোথায় রাখি, তুইই বল?

নাগর জীবন না-ঘর জীবন সুর-বেসুরো জোড়ের গান।
নগর যাপন মালুম না পাক, অশ্রুসজল তোফাই স্নান।

হাঘরে

দিনগুলো ঘোলাটেপারা ঠেকছে।
কেটে সাফ কৃষ্ণচূড়ার শিকড়ে হোঁচট পা-টা বাড়ালে।
তোমায় মনে পড়ছে।

রাতগুলো ধূসর তাঁবুতে মুড়ছে।
ফর্দাফাই আবিরের ঠোঙাপচা গন্ধ গুমোট বাড়ালে।
তোমায় মনে পড়ছে।

একসময় রঙ দোল এলে, তুমি নিশ্চিত আসতে।

বসন্তই সম্ভবতঃ, নামটা তোমার।
নয়?

ইদানীং আমরা অভ্যস্ত নানা উচ্ছিষ্টের যাতায়াতে।

হাঘরে সম্ভবতঃ, নাম আমাদের।
নয়?

অক্ষম প্রাণ

এঁরা কেউ কথা রাখেনি।
সুতলির গিঁটে বাধা অক্ষম প্রাণ, টান পড়লেই ছিঁড়ে যায়।  কথা রাখবেই বা কী করে!
রাখতে পারেনি।
তুমি কথা দিয়ে রেখেছ আমাদের। মনে আছে তো?
সে কথা রেখো।

ওঁদের কিন্তু অমৃতলোকেই রেখো।

Monday, February 24, 2020

শিকড়

বিমান তার পায়ের পাতাদুটি মাটি থেকে যেইমাত্র আলতো উঠিয়ে নেয়, হাউমাউ কান্না পায়।
সবসময়ই এমন নয় যে রওনা হওয়া অভ্যস্ত জিরেতের বাইরে, এমনও নয় যে বহু বহু কাল পরে ফেরার সময় মিলবে। এমনকি হয়তো ফেরাই হচ্ছে সাম্প্রতিক নিজভূমে।
তবুও কান্না ডাকে। হু হু করে ওঠে পাঁজরার খাঁচা।
বোধকরি মাটির অমোঘ টান হল এই।

পায়ের তলার মাটি বড় মহার্ঘ বস্তু হে।
প্রতিটি উদ্বাস্তু অস্তিত্ব রক্তকণায় বয়ে চলে ওই নাছোড় মাটিটুকু আঁকড়ে থাকার তীব্র পিপাসাটা। প্রজন্মের পর প্রজন্ম হতভম্ব উত্তরাধিকারী সেই তেষ্টার।
কী ভীষণ প্রেম! কী ভীষণ বিতৃষ্ণা!

আসলে শিকড় সাপের চলন অভ্যাস করে।
আসলে শিকড় জিনের কথন গ্রাস করে।
শিকড় বড় অভিমানী। শিকড় বড় ক্ষমতাধর।

মহার্ঘ্য দাবী রেখে গিয়েছে সবকটি পা এবং বুকের ক্ষতচিহ্ন। অফেরতযোগ্য।
উজিরপুরে বাস্তুসাপের খোলস কাগজী লেবুগাছে শুয়ে থাকে অসহায়। আসামী হেমন্তের চোখ জ্বলে। রাগী চোখ এড়িয়ে জল ঝরে।

শূন্য করোটি আরও শূন্য বাতাসকে পথ জোগায়।
বায়ুভূক নিরালম্ব মুখস্থ বলে আজন্মের অঙ্গীকারনামা।

ছেলেটা চলে গেছে অগম্য দূর পার।

Tuesday, February 4, 2020

আদৌ?

রোগা নদীটা সাঁঝ গড়ালেই রামধনু রঙ রেশম শাড়ি আজও পরে।
কতকাল হয়ে গেল বল দেখি, কাছাকাছি বসে থাকিনা জল-ছুঁই ঘাটের পৈঠায়।
অনিন্দ্য নৈঃশব্দ্য।

চিলতে আকাশটা আলো দেখলেই তুঁতে চন্দন জামেওয়ার শাল আজও জড়ায়।
কতযুগ পার হল ভেবে দেখ, পাশাপাশি হেঁটে পেরোই না ভোর-ছুঁই সাঁকোর জমি।
অলঙ্ঘ্য নৈকট্য।
...

কিন্তু এটা তো তুমি মানবে বল,
আমরা তো কোনও এককালে এসবই করতুম কেবল।
খুব রকমেই করতুম, কি না?

মনে পড়ে? আমারই কি পড়ে আদৌ?
...

আজকাল কেবল একটা বিরাট চাদর পেঁচিয়ে প্রেতের মতন চলাফেরা করে থাকি। 
বড্ড ভারী ধরণের কালচে রঙ সেটার।
নাকটা কেবল বেরিয়ে আসে। আরও ভারী গন্ধ টানে।
ঘন জমাট অভিমান।
অভেদ্য। অচ্ছেদ্য।
...

আরেকটি সত্য গন্ধেরও ঝাপটা টের পাই,
অল্পে অল্পে খুইয়ে ফেলছি আমাদের দামী সকলটুকু।
সামান্য হলেও পাচ্ছ নিশ্চয়, নয়?

বোঝ তুমি? আমিই কি বুঝি আদৌ?

Saturday, January 18, 2020

শোকগর্ভা

পাঁজরার খাঁজে কোনও গতিকে সিঁটিয়ে থাকা পাতলা কাতর মাংস ছেতরে ঝুলছে।
তাদের
জংধরা এক কাঁচির খুনে ডগায় খুঁচিয়ে চলেছে নিষ্পাপ নিয়তি।

নিমেষ তক রেয়াত না দেওয়া ঘাড় ভাঙানি ঢেউরা দাপানির উমান দিতে ব্যস্ত।
তাদের
নির্মম দবদবায় ঘাই ফেরতের অবসর পাচ্ছে না ফিরতি ঢেউ।

জুঁইয়ের খরখরে পাপড়িরা ছুঁয়ে ফেলা থালাবাসনে রেখে গেছে বাসী রক্তের ছোপ।
কাঠ কাঁচের ঘেরাটোপে মমি হয়ে দেওয়ালে লেগে আছে কিছু মরে যাওয়া মুহূর্তেরা।
চন্দনের শখানেক মামড়ি ইতিউতি উড়ে ছড়িয়ে দিয়েছে সংক্রামক শোকগর্ভা ক্ষোভ।

আশপাশ ছেয়ে কেবল কনকনে একলাবোধি ঝাপটা।
চামড়া চিরে ফেঁড়ে ফালাফালা করা অগুণতি মৃত নখের ঝড়।

মৌলা মেরে লে হি লে মেরি জান।

দেদীপ্য শতদল

এটা একটা স্রেফ কিছুমিছু। মণিকর্ণিকার কিছু ছবি দিয়েছেন Swati Sanyal স্বাতী সান্যাল। সেগুলো দেখেই এগুলো ওগরালাম আর কী!

"এ পিত্থিবির গভ্যের সবচে' আদরী ফসল ঝে ধান্য, তার টান জীবির জিভ ত্যাগ দিলি ভাববা সে জীবির শরীল ত্যাগ দেবার সময় এ্যসি গ্যেছে। আরও জোরালো গোপন টান দেছে তারে অন্য ভুবন। তারে যাতি হবে নে এইবেলা। চক্কু মুদলিই দুই ভুরুর মদ্যি কেডা ঝ্যান ফুকারি ফুকারি ওঠে,
'চল গো, নাও তৈয়ের, ঝা কিছু সত্যকার সঞ্চয়, ঝোলায় ভর আর এগোউ দেকি ঘাটের দিকি। কী কও? বলি যাবা? কারে কী বলি যাবা? এইডে করবা? ওইডে করবা? হা হা হা! অখন তো মণি তুমি মরবা! জিরোনের বেলাটুকুও আর নাই গো, বলা কওয়া থাকল আধসারা। লগিদে ঠ্যেল দে দেছে রে নাও, মাঝি সে নিঠুর নিয়তি পারা।'
জিভ আড় জুড়লো তো বোঝপা মরণও আড় ভাঙল।"

স্বাদকারক অসহায় ভবিষ্যদ্রষ্টা, সর্ব্বপ্রথম সে পায় আগত মৃত্যুর লবণাক্ত আঘ্রাণ।
ঈশ্বরীর কাঁখে চিতানির্বাণ কলস, জগৎ বেড় দিয়ে ঘেরে নির্ঘুম মণিকর্ণিকা মশান।

"মায়ার সমসার, বুঝলা মণি?
টান তারিরো বড় কম তো নয়, জেবন শিকলি ছিঁড়তি সে বহু ঝটাপটিই চলে জীবির করোটি আর পঞ্জরের। কিন্তু তারেও পরাস্ত হতিই হয় একসময়। প্রাণবায়ু ডগায় বেঁধোয় ভবিতব্য খঞ্জরের। তখন মাসমেদের শরীল ঘেরে জ্বলন্ত কাঠ আর আগুনের ছপটি পড়ে বাসনার শরীলে।
জীবাত্মা আর কী করে বল দিন্ বেচারা,  আছাড়িপিছাড়ি খায় গতিপ্রাপ্ত আত্মজনের নিরালম্ব অস্তিত্বি। এই অ্যাতোটুক অ্যাতোটুক মিঠেকড়া কামনার সব ঘা খাওয়া টুকরোসকল কুচি কুচি ছিটকি পড়ে তেনাদের অশরীলে।"

বিদেহী পূর্বজ ধারণ করেন অনুজের অবোধ আকাঙ্ক্ষা, সার্থক হয় উত্তরপুরুষের সপিণ্ডকরণ।
অশান্ত চাহিদার গনগনে অগ্নি পথ অতিক্রম করে বায়ুভূক, জাগে অচঞ্চল শিখা নীল নির্বাণ।

"ফুলকি ওড়ে কেবল, অজস্র ফুলকি।
মনে লয় য্যান 'আকাশস্থ নিরালম্ব বায়ুভূক নিরাশ্রয়' রাশি রাশি আলোর পাপড়ি।
নিরুচ্চার তরঙ্গ ওঠে :
আমরা আছি গো, সব্বাই আছি, তোমাগের মধ্যিই আমরা বাঁচি।"

উত্তরপুরুষ ছায়া অপসৃয়মান, রাত বাড়ে, ঘুম আসে।
কেবল সৃজন জুড়ে এক দেদীপ্য শতদল জাগে।

কাটাকুটি বন্দিশ

একসময় পেভমেন্টওয়ালা চওড়া পথ যা সিধে নিজেকে বিছিয়ে রেখেছে আমার নাক চোখ কুঁচকে দেখতে পাওয়ার পরেও কে জানে কত হাজার মাইল, তাকে উৎসবে নিজের বেণী বাঁধতে পাওয়া দুধারে চিকচিকে জরি সেলাই করা চকচকে কালো ফিতের সমান আবেগ ও আনন্দের কারণ মনে হত।

জেব্রাক্রসিং বস্তুটা আদতে হল খুব লক্ষ্মী, সমস্ত নিয়ম মানা শহুরে কচিকাঁচাদের কিতকিত খেলার একমাত্র মোক্ষম জায়গা, এক নিয়ম ভাঙা মফস্বলি খুকির ঠিক এরকম ঠাওরানোর বয়স সেটা।
...

আজকাল কোন কোন দিন কোনও চওড়া পথের পাশে দাঁড়ালে শিরশির করে পায়ের চেটো। অ্যাসফল্টে গড়া এক অনন্তপ্রসারী অত্যন্ত একঘেয়ে রঙা সরীসৃপের চামড়া ছাড়িয়ে রোদে শুকোচ্ছে নাগরিক যাপন। যা তার বহাল থাকার যাবতীয় রসদের জোগানদার।

গত্যন্তরহীন আমি সেটা পেরোতে গিয়ে হঠাৎই খেয়াল করি জেব্রাক্রসিং আড়েবহরে বেশ খানিকটা।
বিরক্তিকর রিফ্লেক্সে বাম পা কিতকিত খেলার শুরুয়াৎ করে ফেলেই হোঁচট খায়।
...

মুণ্ডুটার এক খোপের বাসিন্দা চড়াই চিড়িক দিলেই আরেক খোপের মালিক দাঁড়কাকে ঠোক্কর মারে খুলিতে।

কিতকিত খেলাটা কোনভাবেই আর সম্ভবপর নয় কারণ এক দীর্ঘদেহী ভদ্রলোকের বাম মুঠোর মধ্যে আমার ডান মুঠো গুঁজিমুঁজি সেঁধোতে পারে না ইদানীং।
...

প্রত্যেক আঙুলে নখের খাঁজে লেগে থাকা পিণ্ড তৈরির তিলের কালি ছাড়া আর যা রয়ে গেছে তা হল মাইলকেমাইল হেলদোলহীন কুচুক্কুরে এক কুৎসিত হেঁটে চলা। জুতোর তলায় কালো খাদান পথ যার গালভরা নাম রেখেছি জীবন।
নিয়তির অনুমোদন মিললে ওরই মধ্যে মধ্যে পেরিয়ে যাচ্ছি কিঞ্চিৎ আলোভালোর ডোরাকাটা মুহূর্তদের। জেব্রা ক্রসিং এর উত্তর আধুনিক ন্যারেটিভ গোছের অনুভব।
অবিমিশ্র ন্যাকামি। প্রতিনিয়তই।

রাত বাড়লে কেবল মাথার মধ্যে রোজনামচার পাতাগুলো কিছুটা অস্থির এপাশ ওপাশ ফেরে। কাটাকুটি বন্দিশের বোল ফোটে।
এই আর কী।

বাঁও মেলে না

(আমার ভাইপো পটলের তার বাবাদাদান, মৃত্যু এবং শ্রাদ্ধানুষ্ঠান সংক্রান্ত রাশি রাশি প্রশ্নের উত্তর দিতে অপারগ হচ্ছি প্রতিদিন। মিথ বা মিথ্যে, মিঠে হলেও, তা দিতে বাধছে। বড্ড অসহায় আজ আমি।)

দুটি নির্ঘুম চোখ পেতে রাখি।
প্রাক্‌ কোজাগরী পরী ওড়া রাত দেখি।
রাতচরা পাখিদল সেরে নিচ্ছে যে প্রতি প্রাহরিক আলোজলে স্নান,
আলোর সে বানে ফলা ডোবাচ্ছে নিরন্তর এক মাথা কুটে চলা আকুতির বাণ।
কিন্তু সমস্যা কী জানলে বাবা, বাণ বিঁধোতে লক্ষ্যবস্তু হাতড়ে চলেছি সেই কোন কালাচবেলা থেকে।
স্বয়ং ঈশ্বর বা ঈশ্বরপ্রতিভের তালাশ।

এক বাঁও মেলে না। দুই বাঁও মেলে না। বাঁও বাড়ে কেবল, মেলে আর না।
আমার মুশকিল আসান বাপ, তাঁরও নতুন সাকিন মেলে না।

একই সঙ্গে আশ্চর্য স্বভাববিরুদ্ধভাবে এবং অত্যন্ত স্বাভাবিকতমভাবেই আজ নিরুত্তর তুমি বাবা।
বস্তুত বাজারকাটতি প্রত্যুত্তর দেওয়ার মত গোছানো সুন্দর শান্তিকল্যাণী সদুত্তর চিরকালের মতনই নেই খুবসম্ভব আজও তোমার কাছে।
মিথ্যে উচ্চারণে আজীবন বড় চোখে লাগা অক্ষমতা তোমার।
মরেও কিস্যু হল না তোমার দ্বারা।
বেঁচেও কিস্যু হল না আমার দ্বারা।

বেশ কথা। আমাকে না হয় থামালে কোনও গতিকে।
আঁখিজলে তর্পণে কেটে যাবে কর গোণা বাকিটুকু বাঁচা।
কিন্তু খুব টের পাচ্ছি,
প্রবলতর উত্তরপুরুষ উত্তরাধিকার চাইবেই উত্তরের আকৃতিতে।
উত্তরোত্তর তীক্ষ্ণ শ্লোগান উঠবে
উত্তর চাই। উত্তর দাও।
আকুতি বাণের দস্তুরমত লক্ষ্যবস্তু জোগাও।

আমরা কী উত্তর রেখে যাব বাবা?
লক্ষ্যবস্তু আসলে কোথায়?
আদৌ আছে কি?

শুভেচ্ছা!

এই যে প্রত্যহ একাধিক আত্মীয় নক্ষত্রমণ্ডল মুছে ফেলে রাত ফ্যাকাসে হয়ে আসে, কতগুলো এলোমেলো বেডসোর ড্রেসিং এর কটন মাথার ওপরে ভাসিয়ে ভোর হয়, হতেই থাকে, অনন্যোপায় হয়েই হতে থাকে, কী ভীষণ একঘেয়ে বোধ হয়।

এই যে প্রত্যেকটি কমলা বোঁটায় অ্যানিমিক পাঁচটা কচি ছানার ন্যাতানো ঠোঁট ঝুলতে থাকে, লাস্ট স্টেজ সিওপিডি রোগীর মত মাস্ক আঁকড়ে অরাজী, দারুণ অরাজী তবু ঝরে যায়, গত্যন্তরহীনভাবে নিমরাজী ঝরতেই হয়, কী ভীষণ একঘেয়ে বোধ হয়।

শরৎ দেখিনা। শরতের সকালও।
দেখতে পাই না বলাই বিধেয়।
অবশ্য একেবারেই যে কিছু দেখতে পাই না তাও নয়।

কেবল নড়বড়ে খাটিয়ায় টানটান খুব চেনা একটা মৃত শরীর দেখতে পাই।
স্রেফ, ওটুকুই।
...
প্রার্থনা করি আপনাদের চোখ জুড়ে থাকুক "অমল ধবল পালে লেগেছে..." ইত্যাদি ইত্যাদি।
বুক জুড়ে আসুক পারিবারিক আনন্দের অমূল্য মুহূর্তেরা।

আসন্ন শারদীয়ার শুভেচ্ছা রইল।